Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller https://exoticbongfamilytraveller.com/ This is a Bengali travel blog website for travel stories in Bengali. Blogs are written for family travel planning, information and guidance. The blogger has been bengali travel storyteller, who has shared his travel experiencesacross the globe. বাংলায় ভ্রমণ ব্লগ পড়ুন Fri, 06 May 2022 08:18:39 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.7 https://exoticbongfamilytraveller.com/wp-content/uploads/2021/01/cropped-102-Russia-1971-150x150.jpg Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller https://exoticbongfamilytraveller.com/ 32 32 মে ২০২২ সংখ্যার ভূমিকা – https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a8%e0%a7%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a8%e0%a7%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be/#respond Tue, 03 May 2022 17:29:55 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=636 নমস্কার । দীর্ঘ তিনমাসের ব্যবধানে আবার এসেছি আমরা নতুন ভ্রমণকাহিনী নিয়ে । নানা কারণে গত কয়েকমাসেলেখা হয়নি সেভাবে । এমাস থেকে আবার প্রকাশ করব ভ্রমণকাহিনী নিয়মিত ভাবে । এই মাসে থাকবে তিব্বতের লাসার উপরে দেবাশিস দাশগুপ্তের লেখা ভ্রমণ কথা আর কানাডার রকি মাউন্টেন অঞ্চলের উপরে ধারাবাহিক চলতে থাকা ভ্রমণকাহিনীর শেষ পর্ব । লেখাটি পড়ে কেমন […]

The post মে ২০২২ সংখ্যার ভূমিকা – appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
নমস্কার । দীর্ঘ তিনমাসের ব্যবধানে আবার এসেছি আমরা নতুন ভ্রমণকাহিনী নিয়ে । নানা কারণে গত কয়েকমাসেলেখা হয়নি সেভাবে । এমাস থেকে আবার প্রকাশ করব ভ্রমণকাহিনী নিয়মিত ভাবে । এই মাসে থাকবে তিব্বতের লাসার উপরে দেবাশিস দাশগুপ্তের লেখা ভ্রমণ কথা আর কানাডার রকি মাউন্টেন অঞ্চলের উপরে ধারাবাহিক চলতে থাকা ভ্রমণকাহিনীর শেষ পর্ব । লেখাটি পড়ে কেমন লাগল ইমেলে জানাতে ভুলবেন না জানি । ভালো থাকবেন ।
তীর্থ দাশগুপ্ত
travellertirtho@gmail.com

The post মে ২০২২ সংখ্যার ভূমিকা – appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a8%e0%a7%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be/feed/ 0
পৃথিবীর ছাদ থেকে দেখা https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%aa%e0%a7%83%e0%a6%a5%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%9b%e0%a6%be%e0%a6%a6-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%96%e0%a6%be/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%aa%e0%a7%83%e0%a6%a5%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%9b%e0%a6%be%e0%a6%a6-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%96%e0%a6%be/#comments Tue, 03 May 2022 17:21:57 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=634 স্থান – লাসা সময়- মে-জুন , ২০১৫  যাত্রীগণ – ভয়েজার্স  ক্লাবের সহযাত্রীগণ লেখা ও ফটো – দেবাশিস দাশগুপ্ত সাংহাই হচ্ছে সমুদ্র  পৃষ্ঠে আর লাসা  হচ্ছে পৃথিবীর ছাদ –  আমাদের পরিকল্পনা ছিল সাংহাই থেকে লাসা এই দীর্ঘ ৪৩০০ কিলোমিটার যাত্রা পথ আমরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলপথ যা কিনা কিংহাই-তিব্বত রেলপথ  নামে পরিচিত তাতে পাড়ি দেব। এই দীর্ঘ […]

The post পৃথিবীর ছাদ থেকে দেখা appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
স্থান – লাসা

সময়- মে-জুন , ২০১৫  যাত্রীগণ – ভয়েজার্স  ক্লাবের সহযাত্রীগণ

লেখা ও ফটো – দেবাশিস দাশগুপ্ত

সাংহাই হচ্ছে সমুদ্র  পৃষ্ঠে আর লাসা  হচ্ছে পৃথিবীর ছাদ –  আমাদের পরিকল্পনা ছিল সাংহাই থেকে লাসা এই দীর্ঘ ৪৩০০ কিলোমিটার যাত্রা পথ আমরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলপথ যা কিনা কিংহাই-তিব্বত রেলপথ  নামে পরিচিত তাতে পাড়ি দেব। এই দীর্ঘ সময়ে অর্থাৎ প্রায় ৪৮ ঘণ্টায় আমরা ধীরে ধীরে এই অধিক উচ্চতা জনিত সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারব, যার ফলে আমরা লাসা পৌঁছে শারীরিক ভাবে সুস্থই থাকব। আরও একটা ব্যাপার ছিল – যাওয়ার সময় ট্রেনে গেলে কিছু কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য যেমন কুনলুন পর্বত শ্রেণী,  গোবি মরুভুমি এসব দিনের আলোতে দেখতে পারতাম। কিন্তু বিধি বাম- ট্রেনে যাবার টিকিট না পাওয়ায় আমরা প্লেনে গিয়ে ট্রেনে ফিরব ঠিক হলো।

চীনের সবচেয়ে বড় নদী  ইয়াঙ্গৎসে   টাঙ্গুলা পর্বত শ্রেনীর গ্লেসিয়ার থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং দীর্ঘ পথ চলা শেষে সাংহাইয়ের কাছে পূর্ব চীন সমুদ্রে মিলেছে। কাকতালীয় ভাবে ফেরার সময় আমরাও এইখান থেকে যাত্রা শুরু করে সাংহাইতে গিয়ে যাত্রা শেষ করব, যদিও মাঝখানের যাত্রা পথটা অনেকটাই আলাদা।

সাংহাই থেকে রওয়ানা হয়ে যথা সময়ে সন্ধ্যা বেলায় আমরা লাসা এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। একেবারে শূন্য মিটার থেকে প্রায় ১২ হাজার মিটার উচ্চতায়। যথাসম্ভব কম পরিশ্রম করতে হবে আগামী ২৪ ঘন্টায়  যাতে শরীর এখানকার কম অক্সিজেনের বায়ুমন্ডলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি যে সমুদ্র পৃষ্ঠের তুলনায় এখানে  অক্সিজেনের মাত্রা  ৪০-৫০ শতাংশ কম। সাথে কিছু ওষুধ ছিল যেটা খেয়ে নিলে এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে। লাসায় আমরা দেখবো  পোতালা প্যালেস, জোখাং টেম্পল, দ্রেপুং মনাস্টেরি, সামার প্যালেস ইত্যাদি। পোতালা প্যালেস তিব্বতের  সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতীক। এটাই ছিল দলাইলামার পূর্বতন বাসস্থান। এর ভেতরে অনেক প্রাচীন পুঁথি ও থাঙ্কা আছে যা তিব্বতিয় বৌদ্ধ ধর্মের মুল্যবান সম্পদ। লাসায়  তিন দিন দ্রষ্টব্য যায়গাগুলি দেখে তারপর আমরা  ফিরবো ট্রেনে।

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩৬৫৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লাসা শহর। ‘লাসা’  কথাটির আক্ষরিক অর্থ তিব্বতি ভাষায় “পবিত্র ভূমি” ।  তিব্বতের আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত এই শহর। গভীর নীল আকাশ, উজ্জ্বল সূর্যালোক, এবং মনোমুগ্ধকর পাহাড়ী দৃশ্যের সৌন্দর্যে সম্পৃক্ত লাসা প্রচুর দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটক এবং তিব্বতি তীর্থযাত্রীদের আকৃষ্ট করে। সুন্দর লাসা উপত্যকায় অবস্থিত প্রাচীনতম লাসা শহরটি সপ্তম শতাব্দীতে জোখাং মন্দির এবং রামোচে মন্দিরকে ঘিরে থাকা একটি ছোট শহরে সীমাবদ্ধ ছিল। পবিত্র পোতালা প্রাসাদ নির্মাণ হওয়ার পরেই লাসা আক্ষরিক অর্থে তিব্বতের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। অনেক দর্শনার্থীর কাছেই লাসা শহরটি হচ্ছে পোতালা প্রাসাদ, জোখাং মন্দির, সেরা মঠ, ড্রেপুং মঠ এবং লাসা নদী নিয়ে গঠিত – এর সব কটির রস  আস্বাদন না করলে লাসা শহরকে পুরোপুরি বোঝা যাবেনা। কিন্তু তার আগে লাসার ইতিহাসের  কিছু পাতা উল্টে দেখা যাক।

সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সোংটসেন গাম্পো তিব্বত রাজ্যের নেতা হয়ে ওঠেন যেটি তখন ব্রহ্মপুত্র (স্থানীয়ভাবে ইয়ারলুং সাংপো নদী নামে পরিচিত) উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পশ্চিমের রাজ্য জয় করার পর তিনি  রাজধানী স্থানান্তরিত করেন রাসা বা লাসায়। মারপোরি পর্বত অঞ্চলে ৬৩৭ সালে তিনি প্রথম নির্মাণ শুরু করেন যেখানে পরে পোতালা প্রাসাদ গড়ে ওঠে।  ৬৩৯ এবং ৬৪১ সালের মধ্যে তিনি পুরো তিব্বত অঞ্চল জয় করেছিলেন । নবম শতাব্দীতে রাজা লাংদারমার শাসন কালে লাসা ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তখন পবিত্র স্থানগুলি ধ্বংস ও অপবিত্র করা হয় এবং এই সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যায়। নবম শতাব্দীতে রাজতন্ত্রের পতনের পর থেকে পঞ্চম দালাই লামার রাজ্যে যোগদান পর্যন্ত লাসা তিব্বত অঞ্চলের রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল না। যাই হোক শতাব্দীর অগ্রগতির সাথে সাথে ধর্মীয় স্থান হিসাবে লাসার গুরুত্ব ক্রমশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি পুনরায় তিব্বতের মুখ্য কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত হয়ে। সেই সময় সেখানে ধর্মগুরু পদ্মসম্ভব জোখাং মন্দিরের সংস্কার করে নতুন করে তার ভিত্তি স্থাপনা করেন।  

পঞ্চদশ শতকের মধ্যে জে সোংখাপা এবং তার শিষ্যদের দ্বারা তিনটি বৃহৎ গেলুগপা মঠ প্রতিষ্ঠার পর লাসা শহরটি আবার তার বৈশিষ্ট্য ফিরে পায়। এই তিনটি মঠ হল গ্যান্ডেন, সেরা এবং ড্রেপুং যেগুলি তিব্বতে রক্ষণশীল বৌদ্ধ  ধর্মের পুনরুজ্জীবনের অংশ হিসাবে নির্মিত হয়েছিল।

DSC06776

এই গেলুগপা বংশের পণ্ডিতদের সাফল্য এবং রাজনৈতিক জ্ঞান অবশেষে লাসাকে আরও একবার খ্যাতির কেন্দ্রে নিয়ে যায়। পঞ্চম দালাই লামা লোবসাং গিয়াৎসো (১৬১৭-১৬৮২), তিব্বতকে আবার এক সূত্রে আবদ্ধ করেন এবং গুশি খানের সহায়তায় ১৬৪২ সালে তাঁর প্রশাসনের কেন্দ্র লাসাতে স্থানান্তরিত করেন। গুশি খানের শাসক হিসেবে বিশেষ আগ্রহ না থাকায় পঞ্চম দালাই লামা এবং তার ঘনিষ্ঠরা একটি বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যাকে ইতিহাসবিদরা লাসা রাজ্য হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এই সরকারের মূল নেতৃত্বকে গ্যান্ডেন ফোড্রং নামেও উল্লেখ করা হয় এবং তারপরে লাসা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উভয় দিকেই রাজধানী হয়ে ওঠে। ১৬৪৫ সালে, পাহাড়ের উপরে পোতালা প্রাসাদের পুনর্নির্মাণ শুরু হয়। ১৬৪৮ সালে পোতালার সাদা প্রাসাদ নির্মাণ সম্পূর্ণ হয় এবং সেই সময় থেকে দালাই লামা পোতালাকে শীতকালীন প্রাসাদ হিসাবে  বেছে নিয়েছিলেন। পোতালার লাল প্রাসাদ ১৬৯০ এবং ১৬৯৪ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল। পোতালা নামটি পোতালাকা পর্বত থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা দালাই লামার, যিনি বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের ঐশ্বরিক অবতার হিসেবে গন্য হন তাঁর পৌরাণিক বাসস্থান। জোখাং মন্দিরটিও এই সময়ে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছিল।

Outside view from Potala 02

সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে, লাসার বারখোর এলাকায় বিদেশী পণ্যের জন্য একটি জমজমাট বাজার তৈরি হয়েছিল। এই শহরে মঙ্গোল, চীনা, রাশিয়ান, আর্মেনিয়ান, কাশ্মীরি, নেপালি এবং উত্তর ভারতীয় ব্যবসায়ীদের একটি বিশ্বজনীন বাজার ছিল। চিনি, চা, জাফরান, পার্সিয়ান টারকোয়েজ , ইউরোপীয় অ্যাম্বার এবং ভূমধ্যসাগরীয় প্রবালের বিনিময়ে তিব্বত কস্তুরী, সোনা, ঔষধি গাছ, পশম এবং ইয়াকের লেজ দূর-দূরান্তের বাজারে রপ্তানি হত। ১৭২০ সালে কিং রাজবংশের সেনাবাহিনী লাসায় প্রবেশ করে। ১৭৫০ সালে শহরে একটি দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে যার ফলে শতাধিক লোক নিহত হয়। বিদ্রোহীদের দমন করার পর, কিং কিয়ানলং সম্রাট তিব্বত সরকারকে পুনর্গঠন করেন এবং একটি গভর্নিং কাউন্সিল গঠন করেন। ১৯০৪ সালে ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ডের নেতৃত্বে একটি ব্রিটিশ অভিযাত্রী বাহিনী লাসায় প্রবেশ করে এবং নিচুতলার তিব্বতি কর্মকর্তাদের লাসা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। চুক্তিটি পরবর্তীকালে প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং ১৯০৬ সালে একটি অ্যাংলো-চীনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  ১৯১২ সালে সিনহাই লাসা গোলযোগের পর সমস্ত কিং সৈন্য লাসা ত্যাগ করে।

বিংশ শতকের মধ্যে লাসা  তিব্বতি এবং বিদেশী উভয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য একটি সম্ভাবনাময় যুগের সূচনা করে। সেখানে তখন অনেক জাতিগত এবং ধর্মীয়ভাবে স্বতন্ত্র সম্প্রদায় ছিল – তাদের মধ্যে ছিল কাশ্মীরি মুসলমান, লাদাখি বণিক, ইসলাম ধর্মান্তরিত শিখ এবং চীনা ব্যবসায়ী এবং কর্মকর্তারা। বিশ্ব বাজারে উপলব্ধ হেন কোন জিনিস ছিল না যা এখানে কেনা বেচা হত না।  কমিউনিস্ট চীনা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর  পিপলস লিবারেশন আর্মি ১৯৫০ সালে তিব্বত আক্রমণ করে । চীনা সরকারী সৈন্য এবং প্রশাসনিক ক্যাডারদের আগমনের পর এই ধরনের বিশ্বজনীন বাজারের আকস্মিক অবসান ঘটে। সেই স্থান দখল করে রেশন দোকান এবং স্বল্প পণ্য মজুত করা সরকারী দোকানগুলি। ১৯৯০ এর দশকে আবার আন্তর্জাতিক পণ্য-বাণিজ্য লাসাতে ফিরে আসে এবং শপিং মল এবং আর্কেডগুলির  প্রাধান্য চোখে পড়ে।

 ১৯৫৯ সালের মার্চ মাসে  রাজধানী লাসাকে কেন্দ্র করে একটি বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং সেই সময় দালাই লামা (চতুর্দশ), তেনজিন গ্যাৎসো (জন্ম ১৯৩৫) নির্বাসনে  পালিয়ে যান ভারতে । প্রথমে ভারতের মুসৌরি শহর এবং পড়ে ধরমশালা শহরে নির্বাসিত অবস্থায় তিনি স্বাধীন তিব্বতি সরকার গঠন করেন। তিব্বতে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করতে ২০১১ সালে তিনি   রাজনৈতিক প্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহন করেন।  

 লাসা শহরকে ঘিরে থাকা  ২২ টি পার্কের  মধ্যে আজ মাত্র তিনটি টিকে আছে। নরবুলিংকা যা দালাই লামার গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ হিসেবে খ্যাত  (নির্মিত হয়েছিল সপ্তম দালাই লামার সময়),  শুগত্রী লিংকার একটি ছোট অংশ এবং লুখাং। শহরের বাকি অংশে ডরমেটরি ব্লক, অফিস এবং সেনা ব্যারাক তৈরি করা হয়েছে।১৯৮৭-১৯৮৯ সালের মধ্যে লাসায়  চীন সরকারের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসীদের নেতৃত্বে বড় ধরনের বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। ১৯৯২ সালে অর্থনৈতিক উদারীকরণের সঙ্গে সঙ্গে লাসায় অনেক সামাজিক পরিবর্তনও ঘটে । সমস্ত সরকারী কর্মচারী ও তাদের পরিবার এবং ছাত্রদের  ধর্ম পালন করতে নিষেধ করা হয়। সন্ন্যাসীদের সরকারী অফিস এবং তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতির প্রবর্তনের পর, অভিবাসীদের আগমনের ফলে  লাসা শহরের জাতিগত সংমিশ্রণের নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়েছে যা সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬৩ শতাংশ তিব্বতি, ৩৪.৩ হান এবং বাকি ২.৭ হুই । যদিও বিদেশী পর্যবেক্ষকরা সন্দেহ  প্রকাশ করেন যে অ-তিব্বতিরা  জনসংখ্যার   প্রায় ৫০ শতাংশ দখল করেছে। লাসা শহর বহু দিন ধরে ছিল ‘নিষিদ্ধ নগরী’ । এমনকি আজকের দিনে অর্থাৎ ২০১৫ সালেও বিদেশীদের লাসা ভ্রমণের উপরে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। আপাত দৃষ্টিতে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও  কর্তৃপক্ষের শ্যেন দৃষ্টি রয়েছে এখানকার ধর্ম বিশ্বাসী মানুষজনের উপর। দালাই লামার নাম এখানে অনুচ্চারিত কিন্তু তাঁর নাম রয়েছে সবার হৃদয়ে। তাই স্বাভাবিক কারণেই ভারতীয় দের প্রতি তিব্বতি জনগনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা উপলব্ধি করেছি সর্বত্র। আর একটা জিনিস যা লক্ষ্য করেছি তা হল চিনা আর তিব্বতিদের মধ্যে সম্পর্কের  শীতলতা – এটা তাদের আচার আচরণ এবং শরীরী ভাষায় ভীষণ ভাবে প্রকট।

লাসা শহরের পরিকাঠামো যথেষ্ট উন্নত – সড়ক, রেল এবং বিমান পরিষেবার মাধ্যমে তা বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যুক্ত। সিচুয়ান এবং কিংহাই প্রদেশের প্রধান শহর এবং জিনজিয়াংয়ের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সাথে লাসা সড়কপথে সংযুক্ত। লাসার আধুনিক বিমানবন্দর বেইজিং ও অন্যান্য প্রধান চীনা শহর এবং নেপালের কাঠমান্ডুর মধ্যে  যাত্রী পরিষেবা প্রদান করে। ২০০৬ সালে লাসা এবং কিংহাই প্রদেশের গোলমুদের মধ্যে সংযোগকারী একটি রেললাইন চালু করা হয়েছিল। পর্যটন স্থানীয় অর্থনীতির একটি ক্রমবর্ধমান এবং গুরুত্বপূর্ণ  দিক যা লাসাকে দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহরগুলির মধ্যে অন্যতম গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। পোতালা প্রাসাদ ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মনোনীত হয়েছিল; জোখাং মন্দির এবং নরবুগলিংকা যথাক্রমে ২০০০ এবং ২০০১  সালে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছিল। শহরের উচ্চ শিক্ষার প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখযোগ্য তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯৮৫ সালে পুনর্গঠিত হয়েছিল।

ইতিহাস আর সমাজবিজ্ঞান থেকে চোখ সরিয়ে  এবারে লাসার  সাংস্কৃতিক আর  ধর্মীয় প্রেক্ষাপট বোঝবার একটু চেষ্টা করা যাক।   পোতালা প্রাসাদ দক্ষিণ তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অন্তর্গত লাসায় একটি বিশাল ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কমপ্লেক্স। এটি লাসা নদী উপত্যকা থেকে ৪২৫ ফুট  উপরে মারপোরি (লাল পর্বত) এর উপরে অবস্থিত এবং এর পাথুরে ভিত্তি থেকে এই প্রাসাদের নির্মাণ কার্য্য ক্রমশঃ উপরের দিকে উঠে এসেছে। পোত্রাং কার্পো  বা হোয়াইট প্যালেস যা এক সময় তিব্বত সরকারের প্রধান অফিস কার্যালয় এবং দালাই লামার প্রধান বাসভবন হিসাবে ব্যবহৃত হত তা  অষ্টদশ  শতকের মাঝামাঝি থেকে  শীতকালীন প্রাসাদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পোত্রাং মার্পো বা রেড প্যালেসে বেশ কয়েকটি চ্যাপেল, পবিত্র মূর্তি এবং আটজন দালাই লামার সমাধি রয়েছে – এটি তিব্বতীয় বৌদ্ধদের জন্য একটি প্রধান তীর্থস্থান হিসাবে গণ্য করা হয়। পোতালার এক হাজারটিরও বেশি কক্ষের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র বলে বিবেচিত হয় চোগিয়াল দ্রুবফুক যা মূল প্রাসাদের অবশিষ্টাংশ এবং ফাকপা লাখাং যেখানে অবলোকিতেশ্বরের মূর্তি রয়েছে। দুই  লক্ষেরও বেশি মূর্তি এবং প্রায় দশ হাজার বেদী পবিত্র কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত। সৌভাগ্য ক্রমে এই প্রাসাদটি চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় রক্ষা পায়।  তিব্বতি জনগণের উপর এই পোতালা প্রাসাদের প্রভাব অপরিসীম।

জোখাং মন্দিরও  তিব্বতের সবচেয়ে পবিত্র মন্দিরের মধ্যে অন্যতম।  সপ্তম শতাব্দীতে যখন সোংটসান গাম্পো তার রাজধানী লাসাতে স্থানান্তরিত করেছিলেন তখন এটি নির্মিত হয়েছিল। এটি বুদ্ধের একটি মূর্তি স্থাপনা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। নেপাল এবং তাং সাম্রাজ্যের সাথে ভাল প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক তৈরি করার জন্য তুবোর রাজা সোংটসান গাম্পো প্রথমে নেপালের ট্রিটসুন রাজকুমারীকে বিয়ে করেন এবং তারপরে দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন তাং রাজবংশের ওয়েনচেং রাজকুমারীকে। দুই রাজকন্যাই যৌতুক হিসাবে তুবোতে বুদ্ধের একটি করে প্রাণবন্ত মূর্তি এনেছিলেন। ৮ বছর বয়সী বুদ্ধের মূর্তিটি যা নেপালের রাজকুমারী এনেছিলেন তা এখন রামোচে মঠে রাখা আছে । জোখাং-এর উত্তরে অবস্থিত রামোচে মন্দিরটিকে জোখাং-এর পরে লাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং প্রায় একই সময়ে এটি সম্পূর্ণ হয়েছিল। ১২ বছর বয়সী বুদ্ধের জোয়া শাক্যমুনির  যে মূর্তিটি তাংয়ের রাজকুমারী তুবোতে নিয়ে এসেছিলেন তা এখন জোখাং মন্দিরে রাখা আছে। কথিত আছে এই মূর্তিটি মূলত ভারতের বোধগয়া মন্দিরে বজ্রাসন হিসাবে স্থাপিত ছিল, যা জোখাংকে আরও বেশি গৌরবান্বিত করেছে। তাই অনুগামীরা জোখাং মন্দিরকে “তিব্বতের বজ্রাসন” বলে উল্লেখ করে।

DSC06688

 পরবর্তীকালের শাসকরা এবং দালাই লামারা জোখাং মন্দিরটিকে আরও প্রসারিত ও বিস্তৃত করেছিলেন। জোখাং মন্দিরটি তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণের কারণে তিব্বতের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় এবং পবিত্র মঠ।    জোখাং মন্দিরটি  প্রায় ১৩০০ বছরেরও বেশি পুরানো যেখানে অন্যান্য বিখ্যাত মঠ গুলি  যেমন ড্রেপুং মঠ, গ্যান্ডেন মঠের বয়স মাত্র ৬০০ বছর। তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসাবে এই মঠ বিখ্যাত এবং  তিব্বতের বিভিন্ন অংশ থেকে তীর্থযাত্রীরা দল বেঁধে এখানে আসেন ভগবান বুদ্ধকে প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানাবার জন্য। একটি প্রবাদ আছে যে “জোখাং মন্দির লাসা তৈরি করেছে”। বর্তমান নাম লাসা জোখাং মন্দিরের আসল নাম রাসা থেকে উদ্ভূত । বলা হয় যে মন্দির নির্মাণের জন্য হাজার হাজার ছাগল (প্রাচীন তিব্বতি ভাষায় ‘রা’) মাটি (প্রাচীন তিব্বতি ভাষায় ‘সা’)বহন করে এনেছিল। এভাবেই প্রথম রাসা নামের উৎপত্তি হয়েছিল। মন্দির নির্মাণের পর থেকে অনেক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী জোখাং মন্দিরে বুদ্ধের উপাসনা করতে আসেন। সেই সময়কালে তিব্বতে স্থানীয় ধর্ম ‘বনের’ আধিপত্য ছিল। কিন্তু তিব্বতিয় বৌদ্ধধর্মের প্রভাব  ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে বিখ্যাত বাঙালী বৌদ্ধধর্ম প্রচারক অতীশ দীপঙ্কর বিরাট অবদান রেখে গেছেন। তিনি ১০৪৯ সালে জোখাং মন্দিরে বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা দেন।  

৬০০ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস এবং বিশেষ মর্যাদার কারণে ড্রেপুং মনাস্ট্রি লাসার তিনটি সেরা মঠের মধ্যে প্রধান হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বেশ কিছু সাদা দালান ধানের বিশাল স্তূপের মতো বিশাল এলাকা দখল করে আছে। এই কারণেই এই মঠটিকে ড্রেপুং বলা হয় যার অর্থ তিব্বতি ভাষায় “চাল সংগ্রহ করা”। ড্রেপুং মনাস্ট্রি তিন দিকে পাহাড় দ্বারা ঘেরা। ২০ বর্গ কিলোমিটার  বিস্তৃত এলাকা জুড়ে অবস্থিত ড্রেপুং মনাস্ট্রি তিব্বতের বৃহত্তম মঠ – এখানে একসময় দশ  হাজার  সন্ন্যাসী থাকতেন। ড্রেপুং মঠে অসংখ্য মূর্তি, ম্যুরাল, বৌদ্ধ ধ্রুপদী  সংগ্রহ  রয়েছে যা দেখে চক্ষু সার্থক হয় ৷ দ্বিতীয় দালাই লামা ড্রেপুং মঠ নির্মাণের পর থেকে পরবর্তী দালাই লামারা এখানে বৌদ্ধধর্ম অধ্যয়ন করেন এবং ধর্মের পাশাপাশি রাজনীতির দায়িত্ব নিতে শুরু করেন। এই কারণে ড্রেপুং মঠ সেই সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং দালাই লামার প্রধান মঠে পরিণত হয়েছিল। বৌদ্ধধর্ম প্রদানের একটি মহান স্থান হিসাবে, ড্রেপুং মঠকে তিব্বতের নালন্দা বলা হত, যেটি ভারতের মহান বৌদ্ধ সন্ন্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উল্লেখযোগ্য নাম।

A devotee with a prayer wheel

পোতালা প্রাসাদের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত নরবুলিংকাকে “বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান” হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সপ্তম দালাই লামা দ্বারা ১৭৪০ সালে প্রথম নির্মিত হয় নরবুলিংকা, যার অর্থ “ধনের উদ্যান” – এটিকে নরবুলিংকা প্রাসাদ, নরবুলিংকা পার্ক এবং মূল্যবান পাথরের বাগানও বলা হয়। নরবুলিংকা “লাসার গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ” হিসাবেও পরিচিত। এটি হিমালয় এবং সারা বিশ্ব থেকে সংগৃহীত ১০০ টিরও বেশি বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের জন্য একটি স্বর্গ রাজ্য। তার চেয়েও বেশি এটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত তিব্বতি বৌদ্ধ ভবনগুলি দেখার জন্য একটি আকর্ষক জায়গা। উপরন্তু  এখানকার যাদুঘরে শত শত বছরেরও বেশি সময় ধরে সংগৃহীত অসংখ্য মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং শৈল্পিক জিনিসের প্রদর্শন দর্শকদের মুগ্ধ করবে।সেই কারণে নরবুলিংকা একাধারে সমৃদ্ধ তিব্বতি সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমাহারে তৈরি বাগান এই দুইয়ের যুগল সম্মেলনে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য স্থান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।  এই প্রাসাদ মধ্যস্থ উদ্যানে মধ্য চীন এবং অন্যান্য দেশ  থেকে প্রাপ্ত বিরল প্রজাতির ফুল গাছ, বৈশিষ্ট্যযুক্ত তিব্বতি গাছপালা এবং হিমালয়ের দক্ষিণ ও উত্তরের পাহাড় থেকে সংগৃহীত বিদেশী ফুল গাছ ও ভেষজ উদ্ভিদ দেখে দর্শকদের চক্ষু সার্থক হবে। বিভিন্ন প্রজাতির সুবিশাল সুউচ্চ পাইন এবং সাইপ্রেসের সাথে, নানা ধরণের বিখ্যাত তিব্বতীয় পিওনি  এবং হাইড্রেনজা ফুলের সমারোহ মনকে মুগ্ধ করবে। উজ্জ্বল রঙ বিশিষ্ট বিভিন্ন ফুল, নীল আকাশ  এবং শান্ত মেঘ লেকের জলে প্রতিবিম্বিত হয়ে নরবুলিংকাকে সত্যিই তিব্বতি শৈলীর এক অপূর্ব স্বর্গীয় বাগানের রূপ প্রদান করেছে।  

Entrance Gate of Summer Palace 01

এই কদিনে লাসার দ্রষ্টব্য স্থান গুলি দেখা শেষ করে আজকে আমাদের ফেরার পালা । সকাল সকাল লাসা স্টেশনে এসে পৌঁছলাম।  ঠিক সময়েই   লাসা থেকে ট্রেন ছাড়ল – পৃথিবীর ছাদ থেকে সমতলে ফেরার যাত্রা শুরু হল। আমরা ছিলাম সফট স্লিপার ক্লাসে – চারটে বার্থের এই কেবিন গুলি বেশ আরামদায়ক, এরোপ্লেনের মত প্রেসারাইজড। এর ভিতর প্রয়োজনে অক্সিজেন নেবারও ব্যাবস্থা আছে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি প্রতিরোধক কাঁচের মধ্য দিয়ে বাইরের অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য চোখে পড়ছে। দেখছি  রুক্ষ পাহাড়ের কোল বেয়ে বয়ে যাচ্ছে লাসা নদী, সবুজ ক্ষেতের জমিতে চাষ হচ্ছে। কোথাও দিগন্ত বিস্তীর্ণ চারণ ভূমিতে চরে বেড়াচ্ছে ইয়াক আর ভেড়ার পাল । মাঝে মাঝে পাহাড়ের  কোলে দেখা যাচ্ছে নীল সরোবর – মনে হচ্ছে যেন কেউ নীল কালি ঢেলে দিয়েছে।

তিব্বতের এই রেলপথের প্রযুক্তি এক ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়। এক সুইশ কন্সাল্টিং সংস্থা এই প্রকল্প থেকে চীনাদের সরে  আসতে বলেছিল- কিন্তু  তাদের  কাছে এটা ছিল এক চ্যালেঞ্জ  এবং শেষ পর্যন্ত  তারা তা পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ করে। শুধু তাই নয়, তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে লাসা থেকে এই রেলপথ ভারত, নেপাল এবং ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। কুনলুন পর্বত শ্রেণী ও তিব্বতীয় মালভূমির উপর দিয়ে প্রায় ৭০০ মাইল দীর্ঘ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু , ঠাণ্ডা এবং প্রতিকুল আবওহাওয়ার এই অংশের নির্মাণ কাণ্ড ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ।এখানকার মাটির স্তরের ঠিক নীচে অনেক জায়গায় পারমাফ্রস্ট আছে যা রাতের ঠাণ্ডায় জমে শক্ত হয়ে যায় – কিন্তু গ্রীষ্ম কালে দিনের বেলায় খানিকটা গলে গিয়ে উপরের স্তরকে নরম করে দেয় যা রেলপথের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। সারা বিশ্ব জুড়ে উষ্ণায়নের প্রভাব এখানেও পড়বে এবং পরিস্থিতি জটিল হবার সম্ভাবনা আছে।এখানকার  উঁচু নিচু পাহাড়ী জমিতে সব  জায়গায় মাটীর উপর দিয়ে রেলপথ টানা সম্ভব নয় ।  অনেক জায়গায় পাহাড়ের মধ্য দিয়ে টানেল গেছে, কোথাও বা এলিভেটেড ট্র্যাক।

এবারে ট্রেন উপরে উঠছে টের পাচ্ছি-প্যাসেজের মাথায় রাখা অল্টিমিটারের রিডিং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কামরার মধ্যে অক্সিজেন সাপ্লাই শুরু হয়ে গেছে। দুএকজন মাথা ধরায় কষ্ট পাচ্ছেন – কেউ কেউ প্যাসেজের দেওয়ালে বসানো অক্সিজেন নজলের সামনে দাড়িয়ে শ্বাস নিচ্ছেন যাতে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। এইপথে সবচেয়ে উঁচু জায়গা হচ্ছে টাঙ্গুলা  পাস – যার উচ্চতা প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার ফুট। এই স্টেশনের উপর দিয়ে যখন ট্রেন যাচ্ছে তখন মনে হল সত্যিই আমরা  on top of the world.  এই অনুভুতি আর একবার হয়েছিল যখন লাদাখের খারদুংলা বা চাংলা পাসের উপর দিয়ে গিয়েছিলাম – তাদের উচ্চতা টাঙ্গুলার থেকে প্রায় হাজার ফুট বেশী। এই ওঠার মধ্যে বস্তুতঃ আমাদের কোন কৃতিত্ব নেই –কারন আমরা তো যাচ্ছি ট্রেনে বা গাড়ীতে। কিন্তু যে অভিযাত্রী বা ধর্ম প্রচারকেরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে এই বিপদ সংকুল পাহাড় পেরিয়ে অন্য দেশ থেকে এই দেশে এসেছিলেন  কৃতিত্ব অবশ্যই তাদের প্রাপ্য।

ট্রলি তে করে খাবার আসছে বিক্রীর জন্য। আমরা লাসা থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম তাই দিয়ে আপাতত চলে যাচ্ছে। কিছু তিব্বতী যাত্রী আমাদের  দিকে সাগ্রহে দেখছে। একটি মেয়ে তার বয়স্ক বাবাকে নিয়ে আমাদের কেবিনে ঢুকল। কিন্তু তারা কেউ এক বর্ণ ইংরেজি জানেনা। হাবে ভাবে এবং হাসি মুখে তারা আমাদের সম্ভাষণ জানালো যা বুঝতে আমাদের কোন অসুবিধা হলনা। এর আগেও আমরা দেখেছি যে ভারতীয়দের  এরা খুব সম্মান করে এবং ভারতীয়দের  সম্পর্কে  তিব্বতিদের বিরাট আগ্রহ । কারণটা সহজেই অনুমেয়।

জানলার বাইরে এখন অসাধারণ সব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে- ধুধু প্রান্তরের মধ্যে অতন্দ্র প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে একটার পর একটা পর্বত শ্রেণী, তাদের বিচিত্র সব রঙ – কোনোটা বাদামি, কোনোটা খয়েরী বা ধুসর আর কতগুলি রজতশুভ্র সাদা বরফে ঢাকা । কোথাও জমে থাকা নদী – কোথাও গ্লেসিয়ার থেকে  সৃষ্ট শীর্ণকায় নদী জমা বরফের মধ্যে তার পথ করে নিয়েছে।

দেখতে দেখতে দিনের আলো কমে আসছে । কালো মেঘের  ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে আকাশ রাঙ্গিয়ে দিয়ে সূর্য অস্তাচলে গেল –সে এক অসাধারণ দৃশ্য। উল্টো দিকের জানলা দিয়ে তখন দেখছি পূব আকাশে লেকের জলের উপরে পূর্ণিমার চাঁদ। বাইরে অন্ধকার হয়ে গেলে ট্রেনের ভিতর কিছুই করার থাকেনা। রাতের খাওয়ার পর কিছু সময় গল্প গুজব করার পর সবাইকে শুভ রাত্রি জানিয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দরজায় কে যেন ধাক্কা মারছে। খুলে দেখলাম পাশের কামরা থেকে এসে আমাদেরই এক সহযাত্রী বলছেন “জানলা দিয়ে একবার বাইরে দেখুন”। বাইরেটা পুরো অন্ধকার – চাঁদের আলোয় একটা মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে -বাইরে দুই একজন লাইন  ম্যান   টর্চের আলোয়  ট্র্যাক  ইন্সপেকশন করছে। এবারে সামনে চোখ পড়তে দেখলাম রেল লাইনের পাশ থেকে সাদা বরফের চাদর কিছুটা সামনে গিয়ে সোজা উঠে গেছে  সামনের উঁচু পাহাড়ের চূড়া  পর্যন্ত- সে এক অসাধারণ দৃশ্য। আমার ক্যামেরা অত শক্তিশালী নয় যে ঐ স্বল্পালোকে সে ছবি লেন্সবন্দী করবে। তবে আমার মনের ক্যামেরায় সেই ছবি চিরকাল ধরা থাকবে।

পরের দিন ঘুম ভাঙল একটু দেরী করে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি দৃশ্যপট অনেকটাই পালটে গেছে। সেই উঁচু উঁচু পাহাড়, চারণ ভূমি , আর পাহাড়ী নদী অপসৃত –  তার জায়গা নিয়েছে অপেক্ষাকৃত নিচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ । জায়গায় জায়গায় পাহাড়ের ঢালে ধাপ চাষ হচ্ছে। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা হোয়াং হো বা পীত নদী। এই নদীর উৎপত্তি কুনলুন পর্বতমালা নির্গত গ্লেসিয়ার থেকে।যত নীচে নামছি চোখে পড়ছে ছোটছোট বাড়ী, কল কারখানা – সেই পুরনো পরিচিত চিত্রটা। বিগত দিনগুলি মনে হচ্ছে যেন বাস্তব নয় – স্বপ্নের জগতে ছিলাম। শহরতলী ছাড়িয়ে ট্রেন এখন ঢুকছে বড় বড় শহরে । অনেক লোক উঠছে ও নামছে- সবার মধ্যে একটা ব্যস্ততা। এবারে বাইরে দেখা যাচ্ছে উঁচু উঁচু আকাশ ছোঁয়া বাড়ী গুলি – তার মানে সাংহাই  আর বেশী দূরে নেই।

The post পৃথিবীর ছাদ থেকে দেখা appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%aa%e0%a7%83%e0%a6%a5%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%9b%e0%a6%be%e0%a6%a6-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%96%e0%a6%be/feed/ 1
A trip to Tajpur https://exoticbongfamilytraveller.com/a-trip-to-tajpur/ https://exoticbongfamilytraveller.com/a-trip-to-tajpur/#respond Sun, 30 Jan 2022 15:38:24 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=627 By Urja Dasgupta Age 8 years On the occasion of the traditional festival of West Bengal, “ Durga Puja “ , we decided to go to Tajpur for a trip… I was eagerly waiting for the day when I will go to Tajpur with my parents, grandparents and my paternal aunt. The day before Puja, […]

The post A trip to Tajpur appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
By Urja Dasgupta

Age 8 years

On the occasion of the traditional festival of West Bengal, “ Durga Puja “ , we decided to go to Tajpur for a trip…

I was eagerly waiting for the day when I will go to Tajpur with my parents, grandparents and my paternal aunt. The day before Puja, we packed all our pretty clothes, our favourite snacks and our other important materials.

The next day my mind was thrilled!! We dressed up and walked to the car. In the middle of our journey, we took a breakfast break and then continued our journey…

Finally, we reached the spot, and it felt like I travelled into a world of nature!! The trees and plants shone as the light from the sun fell on its bright green leaves. The flowers started a fashion show and wore different dresses- pink, red, orange, yellow, blue or even two colours together! The birds sang sweetly and it felt like Krishna was playing the flute. The sea created waves and it glistened in the bright light of the Sun. A light breeze touched my skin and a sweet perfume came to my nose.

We entered the resort cottage and it was nice and clean. We ate at the nearby restaurant and we ate foods like- rice and or luchi, chapatti with dal and or fish curry, chicken, mutton, mixed veg curry , papad , chutney or even crab !

The next morning I woke up early and I was extremely excited! Do you know why? Because, we had a plan to go for swimming in the private beach. The beach did not even have a person except us! We had so much fun in the beach and then returned back to our cottage.

We took a break and then we explored the whole resort. There were many trees and plants like – sapota tree, mango tree, lemon plant , hibiscus plant , rose plant , marigold plant etc. There were also many creatures like – ducks, hens , goats, insects etc. My favourite were the pet dogs who followed me wherever I go. The foods that we ate in the restaurant were actually from these plants and animals like –eggs from ducks and hens, fish from the pond, chutney from the mango tree etc.

In the evening we went to the local beach and it was very beautiful. The little waves of the ocean came near the shore as the light breeze passed over it. The sky became orange and the beach was full of red crabs.

Then we headed to the Durga Puja pandal and it was very very pretty. There were lights all over near the pandal. The next day again we went to the beach side and the pet dogs Lali and Kali followed me all the way to the beach side through the casuarina forest. Kali took a bath with us and he jumped and ran as the huge waves came near him.

Then we returned back to the resort and had a soothing morning under the shed near the Sivsagar pond. Then we packed everything and went back to our accommodation.

I enjoyed the trip to Tajpur and I wish I could go again to a place which is full of the beauty of nature.

Read More Blogs->

The post A trip to Tajpur appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/a-trip-to-tajpur/feed/ 0
ছোটদের পাতার ভূমিকা https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%9b%e0%a7%8b%e0%a6%9f%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%9b%e0%a7%8b%e0%a6%9f%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be/#comments Sun, 30 Jan 2022 15:33:51 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=625 নমস্কার এক্সটিক বং ফ্যামিলি ট্র্যাভেলর সাইটে আপনাদের স্বাগত । নতুন নতুন ভ্রমণ গল্প আশা করি আপনাদের ভালো লাগছে। এই মাস থেকে শুরু করা হল “ছোটদের পাতা “ । ভ্রমণ শুধু বড়দেরই নয় , ছোটদের মনের উপরেও যথেষ্ট ছাপ ফেলে । নতুন নতুন জায়গায় বেড়ানো , নতুন নতুন দেশ, সেখানকার পশুপাখী , মানুষজন ইত্যাদি সম্বন্ধে ছোটদের […]

The post ছোটদের পাতার ভূমিকা appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
নমস্কার

এক্সটিক বং ফ্যামিলি ট্র্যাভেলর সাইটে আপনাদের স্বাগত । নতুন নতুন ভ্রমণ গল্প আশা করি আপনাদের ভালো লাগছে। এই মাস থেকে শুরু করা হল “ছোটদের পাতা “ । ভ্রমণ শুধু বড়দেরই নয় , ছোটদের মনের উপরেও যথেষ্ট ছাপ ফেলে । নতুন নতুন জায়গায় বেড়ানো , নতুন নতুন দেশ, সেখানকার পশুপাখী , মানুষজন ইত্যাদি সম্বন্ধে ছোটদের কৌতূহল বাড়ায় । জানার ইচ্ছা জাগে । ছোটরা তাদের মত করে অভিজ্ঞতা লাভ করে । আমরা চাই ছোটরাও তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লিখে আমাদের পাঠাক । ইতিমধ্যেই exotic bong family traveler নামে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ চালু হয়েছে । অনুরোধ করব আপনারা সেই গ্রুপের সদস্য  হন। ভ্রমণকাহিনী সেখানে পাঠান , সাথে ভালো ছবি।  বিশেষভাবে  মনোজ্ঞ ভ্রমণকাহিনী এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করব । ছোটরাও পাঠাক তাদের লেখা বেড়াবার গল্প । চাইব বাংলায় লিখুক তারা । তবে ইংরেজি তেও কিছু লেখা চলতে পারে। আরো ভালো হয় ছোটরা যদি সাথে নিজের হাতে আঁকা দুই একটি ছবিও পাঠায় বেড়ানো সংক্রান্ত । অভিভাবক দের কাছে অনুরোধ তারা যদি ছোটদের এই বিষয়ে উৎসাহিত করেন তো খুব ভালো হয়। আপনাদের আরো কোন মতামত থাকলে লিখে পাঠান travellertirtho@gmail,com এ ।“ ছোটদের পাতার”  প্রথম সংখ্যায় তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠরত উর্যা দাশগুপ্ত ইংরেজিতে লিখেছে তাজপুরে বেড়ানো নিয়ে । ছোটদের লেখা বেড়াবার গল্প আরো চাই । পাঠান exotic bong family traveler ফেসবুক গ্রুপে । ইমেল ও করতে পারেন ।

ধন্যবাদ

তীর্থ দাশগুপ্ত

travellertirtho@gmail.com

The post ছোটদের পাতার ভূমিকা appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%9b%e0%a7%8b%e0%a6%9f%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be/feed/ 1
রাবণ রাজার দেশে (শ্রীলঙ্কা) https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%a3-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%a3-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/#comments Fri, 14 Jan 2022 16:50:42 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=591 © লেখা ও ছবি – অরূপ দাশগুপ্ত অরিত্ররা তিন ভাই। অরিত্র ছোট। দাদারা দুজনে পড়াশোনায় তুখোড় হলেও অরিত্র বরাবর একটু অমনোযোগী আর ফাঁকিবাজধরনের।স্কুলে কোনোদিনই খুব একটা ভালো রেজাল্ট করতে পারতো না অরিত্র। সব আশা ত্যাগ করে অরিত্রর আর কিছু হবে না ধরে নিয়ে অরিত্রর বাবা ওকে হায়ারসেকেন্ডারীর পর কম্পিউটার নিয়ে পড়তে বললেন। আশা, যদি পাশ […]

The post রাবণ রাজার দেশে (শ্রীলঙ্কা) appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
© লেখা ও ছবি – অরূপ দাশগুপ্ত

অরিত্ররা তিন ভাই। অরিত্র ছোট। দাদারা দুজনে পড়াশোনায় তুখোড় হলেও অরিত্র বরাবর একটু অমনোযোগী আর ফাঁকিবাজধরনের।স্কুলে কোনোদিনই খুব একটা ভালো রেজাল্ট করতে পারতো না অরিত্র। সব আশা ত্যাগ করে অরিত্রর আর কিছু হবে না ধরে নিয়ে অরিত্রর বাবা ওকে হায়ারসেকেন্ডারীর পর কম্পিউটার নিয়ে পড়তে বললেন। আশা, যদি পাশ করে অন্তত কোথাও একটা চাকরী পায়।

অরিত্রর কেরিয়ার কিন্তু মোটেই খারাপ হয়নি। সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় বি এস সির পর এম সি এ করে শেষে এম টেক কমপ্লিট করে অরিত্র। প্রথমে বছরখানেক দুএকটা কলেজে পার্টটাইম পড়াবার পর স্লেট কোয়ালিফাই করে এখন উত্তর কলকাতায় একটা কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। মাস তিনেক হলো অরিত্র বিয়েও করেছে।

অরিত্রর বউটি, টোড়ি, ভারী শান্ত! নিজেও স্লেট কোয়ালিফাই করে একটা কলেজে ইতিহাসের ফুলটাইম টিচার। তাসত্বেও সবসময় কেমন একটা সুগৃহিনী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা টোড়ির।

কলেজে ছুটি না পাওয়ায় এখনও অরিত্ররা কোথাও বেড়াতেও যেতে পারেনি। 

অরিত্রর কলেজের বন্ধু ঋজু, একসঙ্গে এম টেক করেছিলো। এখন ব্যাঙ্গালোরে থাকে। মাঝে একদিন বউ নিয়ে এসেছিল। 

তিস্তা, ঋজুর বউ, ভারী মিষ্টি মেয়েটি। লম্বা ছিপছিপে চেহারা, চোখেমুখে কথা বলে। ঋজুও বেশ সপ্রতিভ আর খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারে। আর ভীষণ আড্ডাবাজ।

অরিত্ররা বসে আড্ডা মারছে অথচ টোড়ি নেই, সে ব্যাস্ত অতিথি আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করতে। 

তিস্তা কিন্তু বেশ মনক্ষুন্ন হলো, অরিত্রকে তো বলেই ফেললো “কি গো অরিত্রদা, নতুন বউটাকে খাটিয়েই মারবে নাকি! তোমাদের রান্নাঘর কোনদিকে! আমি যাচ্ছি হেল্প করতে।” 

বলতে না বলতেই টোড়ি প্লেট সাজিয়ে সব নিয়ে এলো।

ফিস ফ্রাই, লুচি, পাঁঠার মাংস, তিন রকমের মিষ্টি আর চা। তিস্তা টোড়ির হাত ধরে জোর করে বসিয়ে দিলো, “আর এখান থেকে একটুও নড়বেনা।” 

“আচ্ছা খাবার জলটা তো এনে দিই!” টোড়ি হেসে বললো। 

টোড়িরা বিয়ের পর এখনো কোথাও বেড়াতে যাইনি শুনে তিস্তা আরেক চোট বকা দিলো অরিত্রকে।

শেষে ঠিক হলো ওরা চারজনে পুজোর সময় একসাথে বেড়াতে হবে। পুজোর সময়টায় এমন ওয়েদার থাকে যে যেকোনো ধরেনের জায়গাতেই যাওয়া যায়, সে জঙ্গলই হোক, পাহাড়ই হোক কিংবা সমুদ্রের তীরেই হোক। সেক্ষেত্রে পাহাড়ের জঙ্গলে অথবা সমুদ্রের তীরে কোনো জঙ্গলে যাওয়া যেতে পারে। অনেক তর্কাতরকির পর তিস্তা বললো “শ্রীলঙ্কা যাওয়া হবে, আর কোনো আলোচনা হবে না। আমি কালকেই রাতের মধ্যে আইটিনেরারি করে পাঠাচ্ছি, অরিত্রদা তুমি আর ঋজু বাজেট ঠিক করে ফ্যালো।”

তিস্তার আইটিনেরারিটা বেশ ভালই। কলম্বোর থেকে গালে হয়ে ইয়াল  ন্যাশনাল পার্ক। সেখানে দুদিন থেকে ন্যুয়ারা এলিয়াতে দুদিন! ন্যুয়ারা এলিয়া থেকে ট্রেনে কলম্বো। শেষে কলম্বোতে একদিন থেকে বাড়ি ফেরা। মোটামুটি শ্রীলঙ্কার একটা সার্কুলার ট্রিপ। ঋজুর অফিসের একজনের চেনা এক ট্রাভেল এজেন্টের সাথে কথা হলো। সে কলম্বো থেকে ন্যুয়ারা এলিয়া পর্যন্ত ছদিনের জন্যে একটা নাইন সিটার গাড়ী দেবে। অরিত্ররা কলকাতা থেকে  ব্যাঙ্গালোরে যাবে সেখান থেকে চারজনে  একসাথে শ্রীলঙ্কা। 

সবকিছুই প্ল্যান মাফিকই হলো। প্ল্যান অনুযায়ী সঠিক দিনেঅরিত্ররা সবাই ব্যাঙ্গালোর এয়ারপোর্টে মিট করে ইন্ডিগোর ফ্লাইটে কলম্বো পৌঁছালো। 

কলম্বো শহরটা আর পাঁচটা ভারতীয় শহরের মতই। শহরের একধারে ভারত মহাসাগর। স্থানীয় লোকজন একটু শান্ত প্রকৃতির। সেদিন সন্ধ্যায় ওরা একটা অটো নিয়ে সমুদ্রের তীরে কলম্বো প্ল্যান রোডে গেলো। ভারী সুন্দর জায়গাটা। বিচ বলতে সেরকম কিছু নেই, অনেকটা মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভের মতো। সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে ওরা একটা বেশ জমজমাট জায়গায় পৌঁছালো। লাইন দিয়ে শুধুই পাঁচতারা হোটেল আর রেস্টুরেন্ট, ততক্ষণে রাত আটটা বেজে গেছে, ঋজু বললো “এবার ফিরতে হয়।” 

তিস্তা আর টোড়ির আবদারে পথেই শিন ঝু নামে একটা চাইনীজ রেস্টুরেন্টে খেয়ে ওরা হোটেলে ফিরে এলো। পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে, সোজা ইয়ালা।

ইয়ালা যাওয়ার রাস্তাটা দারুন ভালো। ড্রাইভার দুলাঞ্জনা জানালো তামিলদের সাথে যুদ্ধের পরই এইসব রাস্তা আবার নতুন করে হয়েছে। এখন নাকি শ্রীলঙ্কার সরকার ইনফ্রাস্ট্রাকচারের পেছনে প্রচুর খরচ করছে। 

ইয়ালা পৌঁছুতে দুপুর হয়ে গেলো। চেক ইন্ করেই সকলে হোটেলের রেস্টুরেন্টে খেতে দৌড়ালো। তখনও বুফে চালু ছিল। শ্রীলঙ্কানরা খুব মাছ খায়। ভাত, চিংড়ি আর একটা অন্য সিফিশের প্রিপারেশন, এই দিয়ে মোটামুটি ভালোই হল লাঞ্চটা। হোটেলটা বেশ ভালো। ওরা পাশাপাশিই ঘর পেয়েছে। দুটো ঘড়ই সিভিউ। ব্যালকনি দিয়ে দুরে ভারত মহাসাগর দ্যাখ যাচ্ছে। খুব হাওয়া। তবে হোটেল আর সমুদ্রের মধ্যে একটা বেশ বড় খাঁড়ি। খুব বেশি গাছপালা দেখা যাচ্ছে না। ওদের ঘর গুলো পশ্চিমে। তাই বারান্দায় বেশ কড়া রোদ। জার্নির ধকল বেশ ভালই পড়েছে শরীরের ওপর। লাঞ্চ করে এসে কেউ আর আড্ডার কথা উচ্চারণও করলো না।সবাই যে যার ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিলো। 

ঘুম ভাঙলো কলিং বেলের আওয়াজে। টোড়ি দরজা খুলে দ্যাখে তিস্তা আর ঋজু। ঋজু বললো “বারান্দার দরজাটা খোলো, একবার দ্যাখো!”

সবাই মিলে হুড়মুড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দ্যাখে সে এক অপরূপ দৃশ্য। যতদূর চোখ যায় শুধুই লাল, হলুদ আর কমলা রঙের মেলা। সূর্য অস্ত গেলেও যাওয়ার আগে চারপাশকে রঙিন করে দিয়ে গেছে। চারদিকে একটা খুশি খুশি ভাব, দলে দলে পাখি নানান রকম প্যাটার্নে নিজেরা দল বেঁধে উড়ে যাচ্ছে, হয়তো নিজেদের বাসায় কিংবা কোনো নতুন দেশে! কি যেন বলতে বলতে উড়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে একটু একটু সন্ধ্যা গাঢ় হতে থাকলো। এরই মাঝে টোড়ি গেয়ে উঠলো “সন্ধ্যা হল গো…. ও মা..” ! সব্বাই চুপ। গান শেষ হলেও কেউ কোনো কথা বললো না! বেশ ভালো গায় টোড়ি।

সেই কবে গান শেখা ছেড়ে দিয়েছে তবুও তিস্তা শ্রী রাগে একটা ঠুমরী ধরলো। দমে একটু কষ্ট হলেও অসাধারন একটা পরিবেশ তৈরি হলো। 

ততক্ষণে চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে, তবুও জলে রিফ্লেক্ট হয়ে একটা হালকা আলোর আভা বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। ধীরে ধীরে আকাশ জুড়ে এক তারার মেলা বসলো। এতো তারা একসাথে ওরা কেউ আগে কখনো দ্যাখেনি। বিশাল একটা ব্যাপ্তি আকাশের। টোড়ি আবার ধরলো –

“বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা ॥

বাজে অসীম নভোমাঝে অনাদি রব,

জাগে অগণ্য রবিচন্দ্রতারা ॥

একক অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ডরাজ্যে

পরম-এক সেই রাজরাজেন্দ্র রাজে।

বিস্মিত নিমেষহত   বিশ্ব চরণে বিনত,

লক্ষশত ভক্তচিত বাক্যহারা ॥”

“সত্যি কি অসাধারণ কথা না! এখানে না এলে বোধহয় এর মানে উপলব্ধিই করতে পারতাম না।” ঋজু ফিসফিস ক’রে বলে উঠলো।

ইতিমধ্যে ইন্টারকমে খবর এলো দুলঞ্জনা কথা বলতে চায়, লবিতে অপেক্ষা ক’রছে। ঋজুর নীচে লবিতে গিয়ে দুলাঞ্জনার সাথে কথা বলে এলো, কাল জঙ্গলের সাফারির জন্যে গাড়ী ঠিক হয়ে গেছে। কোনো বাধা সময় নেই, লেপার্ড দেখতে যতক্ষন লাগে। তবে মিনিমাম পাঁচ ঘণ্টা। আর লেপার্ড না দেখাতে পারলে ৫০% ডিসকাউন্ট। সকাল ছটায় গেট খোলে। তাই সাড়ে পাঁচটার মধ্যে গেটে পৌঁছাতে হবে।

এদিকে ইয়ালার জঙ্গলে চল্লিশটারও বেশি লেপার্ড আছে শুনে তিস্তা তো ভীষণ এক্সসাইটেড! বলে উঠলো “তাহলে তো দ্যাখা যাবেই বলো? আমার তো ভেবেই কেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, আমরা যাচ্ছি আর একটু দূরেই গাছের ডালে উনি বসে আছেন! উরিব্বাস!”

“অত সহজ নয় ম্যাডাম! কষ্ট করতে হবে। ওনারা হলেন উচ্চবর্ণের ভিন্ন জাত। খুব প্রয়োজন ছাড়া জনসমক্ষে আসেন না। তার জন্যে চাই ধৈর্য্য আর প্রার্থনা।” ঋজু বললো। 

“আর তাছাড়া ইয়ালার জঙ্গলের এরিয়া হলো প্রায় ৩৮০ স্কোয়ার মাইল। ফলে এতো বড়ো এরিয়াতে ৪০ টা লেপার্ড! দেখতে পাওয়া কঠিন তার ওপর সব অঞ্চলে সবাইকে যেতেও দেওয়া হয় না। তবে লেপার্ড ছাড়া আরও ৪০ রকমের ম্যামালস আছে। তার মধ্যে হাতি আর কুমীরও প্রচুর। এছাড়া আছে নানান ধরনের পাখি। ” ঋজু বুঝিয়ে বললো। 

সেদিন ডিনারে অন্যান্য পদের সাথে কুকুল মাস কারি মানে মুরগীর ঝোল আর পারিপ্পু অর্থাৎ মুসুর ডাল ফ্রাইও ছিলো।

পরদিন ভোরবেলা পৌনে পাঁচটায় গাইড সমেত সাফারির গাড়ী এসে হাজির। গাইডের নাম বিজয়রত্নে, সে বললো তাকে বিজয় বলে ডাকতে। খাঁড়ির রাস্তা পার হয়ে গাড়ী হাইওয়েতে পড়লো। মিনিট দশেক যাওয়ার পরেই ইয়ালা ন্যাশনাল পার্কের গেট এসে গেলো। এরমধ্যেই সাতটা গাড়ী এসে গেছে, অরিত্ররা আট নম্বর। গেটের ওপরে লেখা কাতাগামুয়া গেট। ঋজু নেমে গিয়ে কফি কিনে আনলো। 

ঠিক ছটার সময় গেট খুললো। প্রত্যেকটা গাড়ির মধ্যে একটু গ্যাপ দিয়ে ভিতরে ঢোকাচ্ছে যাতে গাড়িগুলো একসাথে ভির না করে। এক এক করে ঢোকার পরে ঋজুদের টার্ন এলো। সবাই দারুন এক্সসাইটেড। গেট দিয়ে ঢুকে একটু গেলেই একটা তিন রাস্তার মোড়, বিজয় ওয়াকিটকিতে কার সাথে একটা কথা বলে ড্রাইভার কে বললো বাঁদিকে যেতে। 

জঙ্গলটা একটু অন্যরকম। দুপাশে কাঁটাগাছের ঝোঁপ। একটু ভেতরে ঢুকতেই হঠাৎ ড্রাইভার গাড়িটা থামিয়ে দিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলো। ফিসফিস করে বললো বাঁদিকে দেখতে।বাঁদিকে একটু দুর থেকে একটা হাতি রাস্তার দিকে ছুটে আসছে। ঋজুরা ছবি তুললেও তিস্তাদের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। প্রচণ্ড আওয়াজ করে হাতিটা কুড়ি পঁচিশ ফুট দূরে এসে গাড়ির দিকে মুখ করে থমকে গিয়ে অনেক ধুলো উড়িয়ে দাঁড়ালো। বিজয় বললো হাতিটা কাউকে খুঁজছে, আমাদের কিছু করবে না। কোনো কিছু গ্রাহ্য না করে হাতি যখন ওদের গাড়ির দিকে এগোতে থাকলো তখন ড্রাইভার আর কোনো কথা না শুনে গাড়ী স্টার্ট দিয়ে পিছনের দিকে যেতে আরম্ভ করলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা গেলো হাতিটার টার্গেট ঋজুরা নয় অন্য কিছু। আর একটু গাড়ির দিকে এগিয়ে হঠাৎ কি বুঝে পিছন ফিরে আবার যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকেই সে মিলিয়ে গেলো। ওরা সবাই কেমন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। টোড়ি তখনও চোখ বন্ধ করে দুকান চেপে বসে আছে দেখে তিস্তা বললো “টোড়ি তাকাও! তোমার প্রিন্সিপাল স্যার চলে গেছেন!” সবাই হো হো করে হেসে উঠলে টোড়িও একটু নরম্যাল হলো। 

ভারী সুন্দর জঙ্গলটা। সামনে যতদূর চোখ যায় সোজা মাটির রাস্তা। মাঝে মধ্যে একটু ফাঁকা জমি আর তার ধার দিয়ে বড়ো বড়ো গাছ। আর পাখির তো কোনো শেষ নেই। কতরকম যে পাখির ডাক, বলে শেষ করা যাবে না। অরিত্রদের কথা মতো মাঝে মধ্যেই গাড়ী দাঁড়াচ্ছে ছবি তোলার জন্যে। এইরকমই একটা ফাঁকা জমি, তার পাশে একটা পুকুরের ধারে এসে গাড়িটা দাঁড় করালো বিজয়। পুকুরের ঠিক উল্টোদিকে কাদার মধ্যে অন্তত তিনটে বেশ বড় সাইজের কুমীর শুয়ে আছে। মিনিটখানেক দাঁড়াতে হঠাৎ ঝপাৎ করে আওয়াজ, দ্যাখে, ওরা পুকুরের যেদিকে দাঁড়িয়ে সেদিকেই ওদের থেকে ফুট চল্লিশেক দুরে একটা বিশাল কুমির জল থেকে একটা বড়ো মাছ মুখে ধরে রেখেছে। কুমিরের শরীরটা বাইরে হলেও মুখটা জলে আর মাছটা ছটফট করছে বলেই এইরকম আওয়াজ। অরিত্র বলে উঠলো “উফ্ দারুন!” বিজয় ড্রাইভারকে বলে গাড়িটা আর একটু কাছে নিয়ে গেলো। কুমিরের মাছ খাওয়া দেখে ঋজুরা আবার এগোতে শুরু করলো। গাড়ী যখন এগোচ্ছে তিস্তা শুধুই এপাশ ওপাশে গাছের ওপরে লেপার্ড খুঁজছে। একটু দুরেই একটা জলার সামনে একদল হরিণ। অন্তত কুড়িটা তো হবেই। কেউ জল খাচ্ছে কেউ বা খাচ্ছে ঘাস। টোড়ি খুব চিন্তিত হয়ে বললো “কি বোকা না হরিণগুলো! আচ্ছা যদি এই জলে কুমির থাকে? তাহলে তো এক কামড়ে খেয়ে ফেলবে!” 

“এটাই তো জঙ্গলের মজা। এখানে কেউ এক গ্রামও বাড়তি খাবার খায় না। কুমিরের প্রয়োজন না থাকলে ওর পাশে একটা নাদুস নুদুস হরিণ বসে থাকলেও খাবে না। ওরা আমাদের মতন একদমই লোভী নয়।” ঋজু বোঝালো। “আর তার থেকেও বড় কথা হলো ওদের নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং। বাঘ যখন জঙ্গলের কোনো জায়গা দিয়ে যায়, ওপর থেকে দেখে বাঁদর, পাখি সবাই মিলে চেঁচিয়ে নিচে হরিণদের সাবধান করে দ্যায়। এই মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্যেই অত সাংঘাতিক সুনামিতে একটা মাছ ছাড়া এই পুরো ইয়ালার জঙ্গলে একটা পশু পক্ষীও মরেনি। অথচ আড়াইশো জন টুরিস্ট মারা গেছিল। পাখিরা আর্থের ম্যাগনেটিক ফিল্ডের চেঞ্জ থেকে আগেই বুঝেছিলো, সুনামি শুরু হবার আগে ভূমিকম্পের ট্রেমারে হাতি, কুমীর এরা সবাই আগেই বুঝতে পেরেছিলো কিছু একটা ঘটবে। কেউ চেঁচিয়ে, কেউ পা দাপিয়ে, কেউবা আবার অস্বাভাবিক আচরণ করে বাকিদের অ্যালার্ট করে দিয়েছিলো। একটা হাতির পা দাপানির ট্রেমার অন্য একটা হাতি চল্লিশ কিলোমিটার দুর পর্যন্ত টের পায়। তাই এরাই সামাজিক প্রাণী, আমরা নই। কি সাংঘাতিক কোঅর্ডিনেশন ভাবাই যায় না। আবার প্রয়োজনে এরাই একে অন্যকে শিকার করে। কি অদ্ভুত না!” 

গাইড গাড়িটা থামাতে বললো। সামনে সোজা ডানদিকে একটা পাথরের টিলা দেখিয়ে বললো “হিউম্যান ফেস রক”! সত্যি দেখে মনে হচ্ছে একটা মানুষের মুখ। ওটাই পুরো টিলাটা। টোড়ি দেখে বলে উঠলো “আদিম মানুষের মত।” আর ঠিক হিউম্যান ফেসের মাথায় চার পাঁচটা হনুমান ল্যাজ ঝুলিয়ে বসে পিঠ চুলকাচ্ছে। অরিত্ররা যখন জঙ্গলের এইসব দৃশ্য উপভোগ করছে, বিজয় কিন্তু সমানে ওয়াকিটকিতে অন্য গাইডদের সাথে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছে কোনদিকে গেলে লেপার্ড দেখা যাবে। আরো কিছুক্ষন যাওয়ার পরে একটা গাছের তলায় এসে গাড়িটা থামলো। সামনে ডানদিকে একটু নেমে বিস্তীর্ণ একটা ফাঁকা জমি। দুরে ভারত মহাসাগর দ্যাখ যাচ্ছে। জমির মাঝে একটা অলমোস্ট শুকিয়ে যাওয়া পুকুর। পুকুরের ওপারে একদঙ্গল বাইসন। আর তাদের পাশেই এক গ্যাং হরিণ চড়ে বেড়াচ্ছে নিশ্চিন্তে। অপূর্ব দৃশ্য। ঋজুরা এই জায়গাটাতে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ালো। চারদিক নিস্তব্ধ। শুধুই পাখির ডাক আর তারসাথে দুর থেকে ভেসে আসা হালকা সমুদ্রের ঢেউএর আছড়ে পড়ার আওয়াজ। এই নিস্তব্ধতায় একটা অন্যরকম শান্তি আছে। এবার বিজয় বাঁদিকে ঢুকে অন্য রাস্তা ধরলো। 

এদিকটা একটু অন্যরকম। আগের থেকে অনেক বেশি সবুজ। খুব সুরেলা একটা পাখির ডাক শুনে টোড়ি বিজয়কে জিজ্ঞাসা করলো কি পাখি! “দ্যাট ইজ ডার্ক ক্যাপড বুলবুল ম্যাডাম!” বিজয় জানালো। ভারী সুন্দর ডাকটা। আর একটু এগোতেই তিস্তা প্রায় চেঁচিয়েই গাড়িটা থামানো করালো। সামনের গাছের ডালের দিকে ইঙ্গিত করে দেখতে বললো। সবাই তো ভাবলো লেপার্ড! না দুটো ধনেশ পাখি। টোড়ি তো দেখে মুগ্ধ। কি সুন্দর ঠোঁটের রঙ। বেশ বড় পাখি দুটো। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত দুফুট তো হবেই। 

তখন প্রায় দশটা বাজে। অরিত্র জিজ্ঞাসা করলো কাছে কোথাও চা পাওয়া যাবে কিনা! সাথে যেন টয়লেটও থাকে। বিজয় কাছেই একটা খোলা চত্বরে নিয়ে গেলো। একটা চায়ের দোকান, মোটামুটি বেড়াতে এসে বাঙ্গালীর যা যা প্রয়োজন সবকিছুই আছে। খুব পরিষ্কার না হলেও টয়লেটও পাওয়া গেলো। কফি খাওয়া হলো, কিছু চকোলেট আর চিপস্ কিনে আবার শুরু হলো মামার খোঁজ। বেশ কিছুটা নীচে নেমে গাড়িটা সমুদ্রের তীর ধরে এগোতে থাকলো। ডানহাতে আস্তে আস্তে জঙ্গল উপরের দিকে উঠে গেছে আর বাঁহাতে ভারত মহাসাগর। বিজয় জানালো এই বীচটা নাকি আগে ছিলো না। সুনামিতে তৈরী হয়েছে। একজায়গায় গাড়ী থামিয়ে ফ্রেশ লেপার্ডের পায়ের ছাপ দ্যাখালো বিজয়। ঋজু বললো “সবই তো হলো গুরু! কিন্তু মামা কই!” বিজয় কিছু না বুঝেই একটু হাসলো। গাড়ী আবার সমুদ্রের তীর ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকলো। বিজয় আজ লেপার্ড দেখিয়েই ছাড়বে। টোড়ি বললো “আহারে! ও বেচারা চিন্তায় পড়ে গেছে। যদি লেপার্ড না দ্যাখাতে পারে তাহলে তো ৫০% টাকা কাটা যাবে! ওকে প্লিজ বলো আমরা ওর টাকা কাটবো না। ও যেনো টেনশন বা করে।” অরিত্র বললো “এটা বললে যাও বা লেপার্ড দ্যাখার সম্ভাবনা ছিল তাও থাকবে না।” 

আর কিছুটা এগোতে আবার একটা জলাশয়। একটা হাতির ফ্যামিলি মজাসে স্নান করছে। কি সুন্দর একটা শাসন। পুচকি হাতি দুটো এদিক ওদিক যাওয়ার চেষ্টা করলেই ওদের দাদা দিদিরা অলমোস্ট কান ধরে আবার নিজেদের কাছে নিয়ে আসছে। কিন্তু বড়ো হাতি দুটোই নির্বিকার। তিস্তা বলে উঠলো “কি সুখী পরিবার দেখেছো”!  

গাড়ী আবার বিজয়ের ইনস্ট্রাকশন মেনে নানান পথে ঘুরতে লাগলো, বোঝাই যাচ্ছে বিজয়ের এখন একটাই টার্গেট “মিশন লেপার্ড”!

এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে যখন প্রায় সোয়া এগারোটা বাজে বিজয় ঋজুকে বলেই ফেললো যে আজ বুঝি আর মামাকে দেখা যাবে না। যদি ঋজুরা চায় তাহলে আজ বিকেলে বা কাল সকালে ডিসকাউন্টেড রেটে আরেকটা সাফারি নিতে পারে। এরপর রোদের তেজ বাড়লে লেপার্ড দেখার সম্ভাবনা আরও কমে যাবে কারণ তখন নাকি লেপার্ডরা রোদ থেকে বাঁচতে পাথরের আড়ালে বা ছোটখাটো গুহায় ঢুকে পড়ে। এসব শুনে স্বভাবতই সকলে একটু হতাশ হয়ে পড়লো। অরিত্র ঋজুকে জিজ্ঞাসা করলো “কি করবি? কাল সকালে কি আরেকবার আসবি? বুঝতেই পারছি লেপার্ড দেখতে পাওয়া একটা লাকের ব্যাপার। শুনেছি কেউ কেউ একমাসেও দেখতে পায়না আবার কপাল ভালো থাকলে কেউ কেউ জঙ্গলে ঢুকেই ওনার দ্যাখা পেয়ে যান! যাইহোক কি করবি তাড়াতাড়ি ঠিক করা যাক!” এই বলতে বলতেই টোড়ি হঠাৎ তিস্তার বাঁ হাতটা খিমচে ধরলো আর ডান হাত দিয়ে পেছনে ডানদিকে ইশারা করে অস্ফুট গলায় বললো “বা য়া য়া ঘ্”! ঋজু ড্রাইভারের পিঠে হাত রেখে গাড়ী থামাতে বলে পেছন ফিরে দ্যাখে কাছেই একটা বড় পাথরের চাতালের ওপর একটা লেপার্ড মুখে করে একটা হরিণকে টানতে টানতে নিয়ে আসছে। গাড়ীটা একটু ব্যাকে আনতেই দৃশ্যটা স্পষ্ট হয়ে গেলো। ইতিমধ্যে লেপার্ড স্যার শিকার মাটিতে রেখে নিজে তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতেই স্যারের বন্ধু বা বান্ধবী কেউ একজন পাশে এসে দাঁড়ালেন। টোড়ির মুখে কথা নেই, তিস্তার হাতে ব্যথার কোনো অনুভূতি নেই। ঋজুরাও ছবি না তুলে হা করে তাকিয়ে আছে। এসব দেখে বিজয়ের মুখে এক তাচ্ছিল্য ভরা হাসি ফুটে উঠলো, বললো “টেক ফটো স্যার, টেক ফটো! লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স, ভেরি ভেরি রেয়ার সিন।” অরিত্রদের উপস্থিতি লেপার্ড যুগলকে মোটেই বিব্রত করলো না। বরং একে অন্যের সাথে একটু খুনসুটি করতে শুরু করলো। ঋজুরা বেশ কিছুক্ষণ ওই দৃশ্য উপভোগ করে যখন ফেরার জন্যে রওয়ানা দেবে ততক্ষণে বিজয় বাবুর কাছ থেকে খবর পেয়ে অন্তত আরও চারটে সাফারি জিপ এসে হাজির হলো এবং যথারীতি হৈ হল্লা শুরু। যেহেতু মহারাজ বিজয়রত্নে লেপার্ডোসিংহেরা এতো গোলযোগ সইতে পারেন না, তাই মৃত সাড়ঙ্গটিকে মুখে তুলে নিয়ে মহারাজ বিজয়রত্নে লেপার্ডোসিংহে তার সঙ্গীর সাথে চাতালের পিছনে অদৃশ্য হয়ে গেলেন! যতক্ষনে ঋজুদের সম্বিত ফিরে এলো ততক্ষনে গাড়ী হোটেলে পৌঁছে গেছে।

হোটেলে ফিরে বিজয়রত্নে প্রাপ্য পুরো টাকাটাই শুধু পেলেন না তারওপরে টোড়ি মেমসাহেবের কাছ থেকে একটু উপরিও পেলেন। সবাই খুশি কিন্তু হাত খিমচে দেবার জন্যে টোড়ি তিস্তাকে অন্তত পনেরোবার সরি বললো। তিস্তা বললো “কিন্তু তুমি না খিমচালে এই দৃশ্য তো আর দেখতে পেতাম না! তাই তোমার অপরাধ ইজ পারডনড।” 

হোটেলের লবিতেই দুলাঞ্জনা অপেক্ষা করছিলো। ঋজুরা লেপার্ড দেখতে পেয়েছে জেনে খুব খুশি হলো। দুলাঞ্জনা বললো “তোমরা তো ব্রেকফাস্ট করোনি, কিছু একটু খেয়ে নাও তারপর কথা বলবো।” তিস্তা লবিতেই স্যান্ডুইচ আর কফির অর্ডার দিলো, দুলাঞ্জনাকেও জয়েন করতে বললো। খেতে খেতে দুলাঞ্জনা বললো “তোমাদের যেহেতু আর সাফারির দরকার নেই তাহলে তোমরা আজ বিকেলে এল্লা চলো, কাল সকালে ওখান থেকে ট্রেনে ক্যান্ডি যাবে। এই ট্রেন জার্নিটা ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট অফ ইটস কাইন্ড।” “কিন্তু আমরা তো ন্যুয়ারা এলিয়া থেকে কলম্বো যাবো!” অরিত্র বলে উঠলো। দুলাঞ্জনার বক্তব্য সব ক্যানসেল করে দিয়ে এখন থেকে এল্লা, এল্লাতে অভারনাইট তারপরে ভোরে এল্লা থেকে ট্রেনে ক্যান্ডি। ক্যান্ডিতে রাতটা কাটিয়ে বা হাতে সময় থাকলে আর একদিন থেকে সেখান থেকে গাড়িতে কলম্বো। বললে দুলাঞ্জনা সব ব্যবস্থা করে দেবে। ঋজু ঘন্টাখানেক সময় চাইলো, বললো জানাচ্ছে। ঋজু সব হোটেলের সাথে কথা বলে হিসেব করে দেখলো খুব একট লস নেই। বাকিরাও রাজি। দুলাঞ্জনা শুধু জানতে চাইলো, ট্রেনে ফার্স্ট ক্লাস না সেকেন্ড ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাস এ সি কিন্তু সেকেন্ড ক্লাস থেকে খোলা জানালা দিয়ে দৃশ্য বেশি ভালো। ঋজুরা সেকেন্ড ক্লাসেই রাজি হয়ে গেলো। দুলাঞ্জনা বললো ঋজুদের এল্লাতে ট্রেনে তুলে ও ক্যান্ডি চলে যাবে। ঋজুরা ক্যান্ডি স্টেশনে পৌঁছেই দুলাঞ্জনাকে পেয়ে যাবে। 

লাঞ্চ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে সাড়ে চারটে নাগাদ ওরা বেরিয়ে পড়লো এল্লার পথে। পথে এক জায়গায় হঠাৎ গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়লো। দুলাঞ্জনা বললো এটা নাকি জংলী হাতিদের খাওয়ানোর সময়। এইসময় নাকি প্রচুর হাতি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে কলা খাওয়ার জন্যে। যারাই গাড়ী করে যায় ওদের কলা দ্যায়। আর এই সুযোগে লোকাল লোকেরা একটু আগের থেকে কলা বিক্রি করতে শুরু করে। বলতে বলতে দুটো বাচ্চা ছেলে দুকাঁদি কলা নিয়ে এসে হাজির। যদিও টোড়ি বাচ্চা বলে দাম কমাতে দিচ্ছিলো না দুলাঞ্জনা মোটামুটি একটা রফা করে দুকাঁদি কলা কিনলো। সত্যি হাতিগুলো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর সবাই কলা দিয়ে যাচ্ছে। ওরাও তাই করলো। 

দুলাঞ্জনা বললো এরা সব যেহেতু জংলী তাই কেউ এদের রাগাতে চায় না। 

অনেকটা যাওয়ার পর রাবণ ফলস এলো। তার আগে সমুদ্রের তীরে জলের মধ্যে একদল লোক লাইন দিয়ে একটা করে বাঁশের ওপর দাঁড়িয়ে কি একটা করছিলো দেখে তিস্তা দুলাঞ্জনাকে জিজ্ঞেস করলো ওরা কি করছে। “ওরা জেলে, জোয়ারের সময় ওরা এইরকম ভাবে বাঁশের ওপর দাঁড়িয়ে মাছ ধরে। এটা এখানকার খুব প্রাচীন পদ্ধতি।

এল্লা পৌঁছাতে সাড়ে সাতটা বেজে গেলো। অন্ধকারে শহরটা খুব একটা বোঝা যাচ্ছিল না। তবে জায়গাটা যে খুব শান্ত নিরিবিলি পুরনো শহর সেটা বোঝা গেলো। শীত বলা যাবে না, তবে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ওয়েদার। 

সকালবেলা ছটা চল্লিশে ট্রেন। দুলাঞ্জনা ঠিক সাড়ে পাঁচটায় এসে হাজির। অরিত্ররা ঠিক ছটায় স্টেশনে পৌঁছে গেলো। ছোট্ট স্টেশন। প্লাটফর্মটা খুব বেশি হলে শদেড়েক ফুট লম্বা হবে। অল্প কিছু লোক থাকলেও খুব শান্ত পরিবেশ।  প্ল্যাটফর্মের একদিকে সবুজ পর্দা ঝোলানো স্টেশন মাস্টারের ঘর। বোঝাই গেলো উনিই একা স্টাফ। স্টেশনটা দেখে ঋজুর মালগুড়ী ডেজের মালগুড়ী স্টেশনের কথা মনে পড়ছিলো। 

পাঁচ কামরার মিটার গেজ ট্রেন এসে প্লাটফর্মে দাঁড়াতে সবাই কোনো হুটোপুটি না করে ধীরে ধীরে গিয়ে নিজের নিজের জায়গায় বসলো। ঋজুরা ট্রেনে উঠলে দুলাঞ্জনা চলে গেলো, ওকে আবার তো ক্যান্ডি যেতে হবে। 

ট্রেন ছাড়লো, কয়লার ইঞ্জিনের সাইরেন দিয়ে! স্টেশন ছেড়ে একটু যেতেই দুপাশে প্রকৃতির বায়োস্কোপ শুরু হলো। মেঘে ঢাকা পাহাড়ের কোল ধরে ট্রেন চললো কুঁ ঝিক ঝিক করে। দুপাশে গাঢ় সবুজ রঙের চা বাগান। মাঝে মধ্যে দুএকটা বড় গাছ। চা বাগান শেষ হতেই হঠাৎ সামনে এসে হাজির ছোট্ট এক পাহাড়ি গ্রাম। তার পাশ দিয়ে দুটো ঝরনা নেমে নদী হয়ে বয়ে চলেছে। ভারী সুন্দর। আস্তে আস্তে ট্রেন নামলো নীচে, চলতে শুরু করলো এক নাম না জানা পাহাড়ি নদীর গা দিয়ে। দুপাশে উঁচু পাহাড়, তাতে বিবিধ রকমের সবুজের মেলা। মাঝে মাঝেই ছোটো ছোটো ঝরনা। পাহাড়ের গা টা আরো কিরকম মায়াময় হয়ে উঠছে মেঘের ছায়ায়। একটু পরেই একটা স্টেশন এলো। নাম জানা গেল না, কারন স্থানীয় ভাষায় লেখা। তবে সহযাত্রীদের কাছে শুনে বোঝা গেলো নাম বাদুল্লা আম্বালামা। খুব ছোট্ট স্টেশন, এল্লার থেকেও ছোটো। একজন হকার উঠলো কাটা রসালো আনারস নিয়ে। দারুন খেতে। যেমন রস তেমনি স্বাদ। স্বপ্নের ট্রেন পাহাড়ের কোল ধরে উঁচু নিচু পথে ধীর গতিতে এগিয়ে চললো। 

রাবণ রাজার দেশের পাহাড় ডিঙিয়ে, মেঘের রাজা মেঘনাদের দেশ পার হয়ে ট্রেন এসে পৌঁছালো ক্যান্ডিতে। মনে হলো যেন একটা দীর্ঘ স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভাঙলো। দারুন অভিজ্ঞতা। স্টেশন থেকে বেরিয়েই দুলাঞ্জনার সাথে দেখা। তিস্তারা সবাই মিলে দুলাঞ্জনাকে অনেক ধন্যবাদ জানালো এইরকম একটা সুন্দর ট্রেন রাইড সাজেস্ট করার জন্যে। 

স্টেশন থেকে সোজা হোটেল। বেশ ঠাণ্ডা এখানে। একটা পাতলা গরম কিছু হলে বেশ ভালো হয়। ক্যান্ডি শহরটা টিপিক্যাল হিল স্টেশন, ইংরেজ আমলে তৈরী করা। পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ওরা শেষে হোটেলে এসে পৌঁছালো। বেশ উঁচুতে হোটেলটা। লবিটা যে ফ্লোরে ঘর তার নীচের ফ্লোরে। সুন্দর হোটেল। তিনদিকে পাহাড় একদিকে বিশাল একটা ভ্যালি। দুপুরে লাঞ্চ করতে গিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে পুরো ভ্যালিটা দেখতে পেলো ওরা। বিস্তীর্ণ ভ্যালি, তার ঠিক মাঝখানে দিয়ে একটা নদী বয়ে চলেছে, দুপাশে পাহাড়। হোটেলের জানালার হাইটেই মেঘ উড়ে যাচ্ছে। স্বপ্নের মতো জায়গাটা। 

সন্ধ্যেবেলায় সবাই ঋজুদের ঘরে বসে আড্ডা মারছিল। কিরকম একটা মনখারাপের আবহাওয়া। যদিও তিস্তাকে সবাই অনেক ধন্যবাদ জানালো শ্রীলঙ্কা সাজেস্ট করার জন্যে, কিন্তু সবারই মন একটু খারাপ। বেড়ানো তো প্রায় শেষ, এরপরেই বাড়ী ফিরে আবার দিনগত পাপক্ষয়।

তবে ওরা চারজনেই একসাথে প্ৰমিস করলো সামনের বছর আবার একসাথে কোথাও বেড়াতে যাবে।

Read More Blogs ->

The post রাবণ রাজার দেশে (শ্রীলঙ্কা) appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%a3-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/feed/ 1
জানুয়ারী ২০২২ সংখ্যার ভূমিকা https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a8%e0%a7%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a8%e0%a7%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82/#respond Fri, 14 Jan 2022 16:39:13 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=589 দেখতে দেখতে আমাদের ভ্রমণ ব্লগ exoticbongfamilytraveller.com এক বছর পার করে এলো । গতবছর জানুয়ারী মাসে উইকেন্ড স্পট  সিঙ্গিগ্রাম এবং বিদেশ ভ্রমণের গল্প হিসেবে রাশিয়ার উপরে  লেখা নিয়ে আমাদের উদ্বোধন সংখ্যা প্রকাশিত হয় । তারপর থেকে প্রতিমাসেই দুটো তিনটি নতুন নতুন ভ্রমণ গল্প নিয়ে এই ব্লগ এগোতে থাকে । প্রতিটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর আপনাদের সুচিন্তিত […]

The post জানুয়ারী ২০২২ সংখ্যার ভূমিকা appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
দেখতে দেখতে আমাদের ভ্রমণ ব্লগ exoticbongfamilytraveller.com এক বছর পার করে এলো । গতবছর জানুয়ারী মাসে উইকেন্ড স্পট  সিঙ্গিগ্রাম এবং বিদেশ ভ্রমণের গল্প হিসেবে রাশিয়ার উপরে  লেখা নিয়ে আমাদের উদ্বোধন সংখ্যা প্রকাশিত হয় । তারপর থেকে প্রতিমাসেই দুটো তিনটি নতুন নতুন ভ্রমণ গল্প নিয়ে এই ব্লগ এগোতে থাকে । প্রতিটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর আপনাদের সুচিন্তিত মতামত পেয়ে আমরা ধন্য । পাঠকের ভাল লাগাই যেকোনো লেখকের পরম প্রাপ্তি ।খুব আশা করব , যদি এই ভ্রমণকাহিনী গুলি আপনাদের বন্ধু বান্ধব , আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন ।

  এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে গত মাসেই বলেছিলাম আমাদের এই ব্লগে আপনাদের নিজেদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা গল্পের আকারে আমাদের লিখে পাঠান , সাথে ভাল কিছু ছবি । ভালো লেখা ছবি সহ প্রকাশ করতে পারলে আমাদের খুব ভালো লাগবে । খুব ই আনন্দের সাথে জানাই ব্লগের এক বছর পূর্তিতে এই মাসের সংখ্যায়ে আমার জামাইবাবু ( পিসতুতো) শ্রী অরূপ দাশগুপ্তের লেখা ভ্রমণকাহিনী “ রাবন রাজার দেশে” প্রকাশিত হল ।এছাড়া এই মাসেই প্রকাশিত হবে সদ্য সমাপ্ত সিমলিপাল ভ্রমণের উপরে লেখা কাহিনী , যার পূর্বকথা গত মাসেই প্রকাশিত হয়েছে । ইতিমধ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পরেছে সমস্ত দেশে । তাই বাড়ী বসে এই ব্লগ পড়ে মনে মনে দেশ বিদেশ ঘুরে আসুন । আতঙ্কিত হবেন না, সতর্ক থাকুন । করোনা বিধি মেনে চলুন আর নির্দিষ্ট সময়ে টীকা নিন । ও হ্যাঁ অবশ্যই আপনাদের বেড়াবার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না । আমাদের ইমেল আইডি – travellertirtho@gmail.com

সুস্থ থাকুন , ভালো থাকুন

ধন্যবাদ

তীর্থ দাশগুপ্ত

travellertirtho@gmail.com

Read More Blogs ->

The post জানুয়ারী ২০২২ সংখ্যার ভূমিকা appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a8%e0%a7%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%82/feed/ 0
বালির বালুকা বেলায় https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a7%9f/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a7%9f/#respond Sat, 25 Dec 2021 06:52:45 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=580 সময়–  মে ২০১৮   যাত্রীগণ – দেবাশিস দাশগুপ্ত ও মনিদীপা দাশগুপ্ত লেখা ও ফটো – দেবাশিস দাশগুপ্ত              স্থান – কিন্তামনি, উবুদ, কুটা,  উলুওয়াতু, দেনপাসার, তানা লট  This is a travelogue in Bengali about Bali, Indonesia. Bali is unique, Bali is unmatched, a magical blend of culture, nature, activities, weather, culinary delights and above all the […]

The post বালির বালুকা বেলায় appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
সময়  মে ২০১৮   যাত্রীগণ – দেবাশিস দাশগুপ্ত ও মনিদীপা দাশগুপ্ত

লেখা ও ফটো – দেবাশিস দাশগুপ্ত    

         স্থান – কিন্তামনি, উবুদ, কুটা,  উলুওয়াতু, দেনপাসার, তানা লট

 This is a travelogue in Bengali about Bali, Indonesia. Bali is unique, Bali is unmatched, a magical blend of culture, nature, activities, weather, culinary delights and above all the beautiful people of this island. Bali is rated as one of the best travel destinations in the world by countless websites, review portals, and travel magazines – for very good reasons. Whatever is your age, background, budget or interest, there is something great for everyone to explore and discover in Bali

ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে বালির মানচিত্র
ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে বালির মানচিত্র

গরুড় এয়ারলাইন্সের  ছোট ফ্লাইটে  যোগজাকার্তা থেকে বালির ডেনপাসারে এসে পৌঁছলাম।আকাশ পথে বালির প্রবেশদ্বার নগুরাহ রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মালপত্র নিয়ে বহির্দ্বার দিয়ে  বেরোতেই দেখলাম আমাদের গাইড ফ্রেডি প্ল্যাকার্ড   নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তার মন্তব্য – ইন্ডিয়া থেকে সবাই বালিতে এসে আবার ইন্ডিয়াতে ফিরে যায়। তোমাদেরই দেখলাম যোগজাকার্তা থেকে বালিতে আসতে । প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যাম পেরিয়ে হোটেলে পৌঁছলাম। পরের দিন থেকে আমাদের নির্ধারিত ট্যুর শুরু হবে। এখানকার দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই । তবে আমাদের এই চার দিনের ট্রিপে বিশেষ কয়েকটি জায়গা দেখার পরিকল্পনা আছে।

বালির   দর্শনীয় স্থানের বিবরণ দেবার আগে বালির কিছু পরিচিতি দেবার প্রয়োজন । অবশ্য অনেকেরই হয়ত  এই জায়গা সম্বন্ধে  প্রাথমিক  জ্ঞান আছে , তবুও অধিকন্তু ন দোষায়ঃ। দেবতাদের ভূমি হিসাবে পরিচিত বালি তার সুন্দর এবং ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি, দিগন্ত জোড়া সমুদ্র সৈকত, ধাপে ধাপে নেমে আসা ধানের ক্ষেতগুলি,  সবুজ বনাঞ্চল এসবের সম্মিলিত অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের স্বর্গ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে – এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই।  এখানকার বিখ্যাত রিসর্ট গুলি, সার্ফিং, গল্ফ এবং বিশ্বমানের ডাইভিং সাইট হয়তো অনেকের কাছে এখানকার বিরাট আকর্ষণ, কিন্তু বালিকে সম্যক ভাবে উপলব্ধি করতে হলে জানতে হবে তার কৃষ্টি,  সংস্কৃতি, ধর্ম এবং তার আচার,  আচরণবিধি । তার ঐতিহ্য না বুঝলে, নাটকীয় নৃত্য এবং বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানগুলি না দেখলে , তার শিল্পকলা এবং কারুশিল্প দ্বারা মোহিত নাহলে, নিবিড়ভাবে খোদাই করা মন্দিরগুলির সাথে পরিচিত নাহলে বালি অধরাই থেকে যাবে।

সম্ভবত জাভা বাদে ইন্দোনেশিয়ার সমস্ত দ্বীপগুলির মধ্যে বালিতেই বহিরাগতদের  প্রভাব সর্বাধিক, তবুও বিস্ময়করভাবে এটি দ্বীপপুঞ্জের অন্য জায়গা গুলির তুলনায় তার পুরানো রীতিনীতি ধরে রাখতে অনেকটাই সফল হয়েছে। বালির জনসাধারণ এবং তাদের ধর্মের মধ্যে শক্তিশালী যোগসূত্রটির জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপগুলির মধ্যে বালি তার  অনন্য পরিচয় বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে।  তাই ফিলিপিন্সের বোরাসায় বা থাইল্যান্ডের ফুকেটের মতো দ্বীপগুলিতে যে বাণিজ্যিকীকরণ ও পশ্চিমী প্রভাব আমরা লক্ষ্য করি  তা প্রতিরোধ করতে বালি অনেকাংশেই সক্ষম হয়েছে। বালির মন্দির, নৃত্য এবং অনুষ্ঠানগুলি বালির পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে একদিকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে  অন্য দিকে সমুদ্র সৈকত, সার্ফিং বা স্নরকেলিং তাদের দিয়েছে বিনোদনের নিত্য নতুন সংজ্ঞা।

পরের দিন সকাল বেলা  প্রাতঃরাশের পর আমরা বেড়িয়ে পড়লাম কিন্তামনির উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে  কিন্তামনি গাড়ীতে অনেকটা পথ। শহর ছাড়াতেই দেখলাম রাস্তার পাশে অনেক গুলি গ্রাম । প্রত্যেকটিই পরিস্কার পরিছন্ন এবং কয়েকটিকে  দেখে মনে হল যেন হস্তশিল্পের প্রদর্শনী । কয়েকটি গ্রামের সামনে দেখলাম মন্দির ও গ্রামের রক্ষাকারী দেবতার মূর্তি। এই গ্রাম গুলিতে অনেক উন্নতমানের শিল্পী ও কারিগরের বাস । বালির  বেশীর ভাগ দ্বীপপুঞ্জই হিন্দু প্রধান। হিন্দুধর্ম এখানকার সর্বাধিক প্রভাবশালী ধর্ম  যা বালির সংস্কৃতির রূপরেখা নির্ধারণ করেছে। জনসংখ্যার নিরিখে হিন্দু  ধর্মাবলম্বীর  সংখ্যা আশী শতাংশের ওপরে   বাকী  ইসলাম এবং কিছু খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ  ধর্মাবলম্বী । বালিতে প্রায় কুড়ি হাজারেরও  বেশি মন্দির আছে , প্রতিটি গ্রামে কমপক্ষে তিনটি মন্দির দেখতে পাওয়া যাবে-  একটি গ্রামের প্রতিষ্ঠাতার, একটি গ্রামসুরক্ষার আত্মার জন্য এবং একটি মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে । বালিনিজ ধর্ম তার আচার আচরণের আতিশয্যের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। উৎসবের দিনে মন্দিরগুলিতে  বেশ ভিড় জমে ওঠে , কলাপাতায় ভাত এবং বিভিন্ন ফল সামগ্রী নৈবেদ্য দেওয়া হয়। শুভ ও অশুভ শক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে অন্যান্য দিনেও নানা ধরণের নৈবেদ্য দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে দেবতা এবং অশুভ শক্তি উভয়কেই। ধর্মীয় আচরণের যথাযথ নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে ঐশ্বরিক ও পৈশাচিক শক্তি উভয়কেই সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা হয়। দেবতা এবং রাক্ষস উভয়ের উপস্থিতি তাই এদের জীবন যাপনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এই গ্রামগুলি ও প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে কখন যেন কিন্তামনিতে পোঁছে গেলাম।

কিন্তামনি একটি  আগ্নেয়গিরি ।বাটুর লেক আগ্নেয় গিরি থেকে উদ্ভুত এক গহ্বর যেটা বর্তমানে এক সুন্দর লেকে পরিনত হয়েছে। অনেকে কিন্তামনি আগ্নেয়গিরিতে ট্রেকিং করতেও  যায়   এবং সেখান থেকে শান্ত লেক বাটুরের শোভা উপভোগ করে।মাউন্ট বাটুর একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি যার উদ্গীরণ মাঝে মাঝেই ঘটে। সর্বশেষ উদ্গীরণ ঘটেছিল ২০০০ সালে।বালিনিরা এই বাটুর লেককে এক পবিত্র স্থান বলে বিশ্বাস করে। এটা বালির সবচেয়ে চওড়া লেক। এই স্বচ্ছ লেকের নীল জলকে বেষ্টিত করে আছে মাউন্ট বাটুর এবং আবাং পর্বত শ্রেণী। এই লেক ১৯৭১ সালে মাউন্ট বাটুর আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল – সেই সময় অনেক প্রাণহানি এবং প্রচূর সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল যার মধ্যে বালির সবচেয়ে বড় মন্দিরটিও ছিল। পরে এই মন্দিরটি অন্য স্থানে পুনর্নির্মাণ করা হয়। আমরা একটা রেস্তরাঁয়  গেলাম দ্বিপ্রহরিক আহারের জন্য। দোতলার টেবিলে বসে খেতে খেতে আমরা  এখানকার অসাধারণ প্রাকৃতিক  দৃশ্য উপভোগ করলাম। কাঁচের জানলা দিয়ে দেখছি  সামনে ধু ধু প্রান্তর – কালো কালো প্রস্তরীভূত লাভা, আর সামনে মাথা উচু করে তার জ্বালা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিরাট আগ্নেয় গিরি, পাশে পাহাড় পরিবেষ্টিত বাটুর লেকের নীল জলরাশি। কোথা দিয়ে যে সময় কেটে গেল বুঝতে পারলাম না। এখান থেকে উবুদ হয়ে আমরা  হোটেলে ফিরে যাবো।

উবুদ বালির সাংস্কৃতিক প্রাণস্পন্দন এবং সেই ভাবমূর্তি আজও বিদ্যমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দ্বীপ অনেক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যায় এবং উবুদ উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাপানিরা শহর আক্রমণ করে এবং পরবর্তী কালে স্বাধীনতার জন্য ডাচদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস সংগ্রাম শুরু হয়। ইন্দোনেশিয়া তার স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৫ সালে এবং প্রায় ২০ বছর অনিশ্চিত থাকার পর ১৯৭০-এর দশকে উবুদে পর্যটন পুনরায় শুরু হয় যখন ব্যাকপ্যাকার এবং হিপিরা নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধানে এখানে আসতে শুরু করে। তারপর থেকে দর্শকদের  নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ শুরু হয়েছে। বালির প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য ও জনগণের আতিথেয়তা দ্বারা তারা আকৃষ্ট হয়েছে ও এখানকার শিল্প, সংস্কৃতি এবং ধর্ম তাদের মুগ্ধ করেছে। উবুদ প্রাসাদটি ছিল রাজপরিবারের সরকারী বাসভবন।উবুদ প্রাসাদটি বর্তমানে ভ্রমনপিপাসু দের মধ্যে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।প্রায় প্রতি রাতে  বিখ্যাত বারং নাচটি এখানকার নাট মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রাসাদ তৈরির সময় সমগ্র বালি থেকে শিল্পী এবং কারিগররা এখানে এসেছিল এবং প্রাসাদ  তৈরির পর এখানকার সংলগ্ন অঞ্চল সুকাওয়াতিতে তারা বসতি স্থাপন করে। ওখানে গেলে এখনও অনেক কারিগরদের গ্রাম দেখতে পাওয়া যায় যেখানে তারা তাদের হস্তশিল্পের সম্ভার নিয়ে বসেছে বিক্রীর জন্য।ডেনপাসার থেকে উবুদ পর্যন্ত বালিতে হাজার হাজার উপহারের দোকান রয়েছে যেখানে স্থানীয় লোকেদের তৈরি বিভিন্ন রকম বস্ত্র শিল্প, বাটিকের কাজ, সূক্ষ্ম হস্তশিল্পের পণ্য সহজলভ্য।

ঋষি  মারকান্য তাঁর একদল শিষ্য সমেত এখানে প্রথমে আসেন এবং এই স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উবুদের ক্যাম্পুহানে  দুই নদীর সংযোগস্থলে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এর পর বালিতে তিনি আরও অনেকগুলি মন্দির নির্মাণ করেন। তিনিই প্রথম এখানকার কৃষিজীবী মানুষদের পাহাড়ী অঞ্চলে ধাপচাষের পদ্ধতি শেখান।‘বাঞ্জার’ অর্থাৎ পঞ্চায়েতের মত প্রতিষ্ঠানও তাঁর সময়েই প্রথম শুরু হয়েছিল। জাভার সঙ্গে বালির সুসম্পর্ক বহুদিনের। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দীতে মাজাপাহিত  রাজ্যের পতনের পরে দলে দলে  সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ জন জাভা ছেড়ে বালিতে এসে বসতি স্থাপন করে। বালিনিরা বিশ্বাস করে যে পর্বতমালা হচ্ছে দেবদেবী, পূর্বপুরুষ এবং যে আত্মারা মোক্ষ লাভ করেনি তাদের বাসস্থান।এই দেব-দেবী ও পূর্বপুরুষরা নৈবেদ্য  গ্রহণ এবং বিনোদন উপভোগ করার জন্য মন্দিরের অনুষ্ঠানের সময় মাঝে মাঝে পৃথিবীতে নেমে আসেন। যখন মানুষ পৃথিবীতে পুনর্জন্মের জন্য প্রস্তুত হয়, তখন তারা উপরের পর্বতগুলি থেকে সরাসরি পৃথিবীতে  নেমে আসে। এই কারণেই পর্বতমালা পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। বালির প্রধান মন্দির হচ্ছে পুরা বেসাকি যা আগ্নেয় গিরি গুনুং আগুং এর পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত ।  বালিনিদের ধর্ম অনুসারে পবিত্র মন্দিরের চেয়ে উপরে কেউ দাঁড়াতে পারে না, বিশেষত যখন ধর্মীয়  অনুষ্ঠানগুলি পালন করা হয়। তাই ট্রেকার বা পর্বতআরোহীদের এই পাহাড়ে উঠতে গেলে প্রথমে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। 

বালিনিরাও তাদের ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মত মতো ব্রহ্মা, উইসনু (বিষ্ণু) এবং সিওয়া (শিব) এই  ত্রিমূর্তিতে বিশ্বাসী । মহাভারত এবং রামায়ণ  বালিতে সমানভাবে জনপ্রিয় এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত ও তাদের পরিবার ও সমাজ ধর্মের চারপাশে নিয়ত আবর্তিত। আগেই বলেছি যে অনেক গুলি পরিবার মিলে যৌথ ভাবে কাজ করার জন্য সমবায় সমিতি বা পঞ্চায়েতের মত প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলিকে ‘বাঞ্জার’ বলে। এইরকম গ্রামীণ গৃহ বা ‘বালি বাঞ্জারে’ যৌথ রান্নাঘর, উপাসনাস্থল, পারিবারিক মিলন স্থল এবং মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা আছে। গামেলান অর্কেস্ট্রা  এবং নৃত্যকলা শেখানোর ব্যবস্থাও এখানে আছে যাতে তরুন সম্প্রদায় স্থানীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি  শ্রদ্ধাশীল থাকে।গেমলান অর্কেস্ট্রা  বালিনি সংগীতের ভিত্তি এবং বালিনি সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। এই অর্কেস্ট্রা মেটালোফোন, জাইলোফোন, ড্রাম, বাঁশি, কাসর, ঘন্টা সহযোগে  এক সম্মিলিত সৃষ্টি এবং তার পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে যতক্ষণ না অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। বালিনিদের যেকোনো সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীতে নৃত্য একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।বিশেষ শুভ অনুষ্ঠান গুলিতে ‘বারং’  নাচ নৃত্যের তালে তালে পরিবেশিত হয় এবং তা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়কে সূচিত করে। শুভ শক্তির  প্রতিনিধিত্ব  করে  ‘বারং’ এবং মন্দটির পরিচয় বহন করে ‘রংদা’ নামক ডাইনী। প্রায় এক হাজার বছর ধরে, স্থানীয় বালিনিরা হিন্দু ধর্মের এক বিশেষ রূপ অনুসরণ করে চলেছে যা ‘আগামা হিন্দু ধর্ম’ নামে পরিচিত। প্রাচীন কালের হিন্দু গুরুদের সঙ্গে  নিয়ে আসা ধর্মের প্রত্যক্ষ অনুসরণকারীদের বংশধরদের মাধ্যমে এই ধর্ম যুগযুগ ধরে বহতমান।

বালি যেহেতু নিরক্ষীয় অঞ্চলের 8 ডিগ্রি দক্ষিণে অবস্থিত,  জলবায়ুর দুটি প্রধান স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এখানে লক্ষ্য করা যায়-  শুকনো মরসুম এবং মৌসুমী বৃষ্টির  মরসুম – সাথে সারা বছর ধরে  ক্রান্তীয় উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া। বালির আগ্নেয়গিরি গুলির আশেপাশের কয়েকটি অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,০০০ মিটার উপরে বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ রয়েছে। এখানে তুলনা মূলক ভাবে অনেক ঠান্ডা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের তুলনায় বৃষ্টিপাত  বেশী হয়।বালিতে রাস্তায় চলার জন্য চালকের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ প্রয়োজন – সেটি হ’ল  ধৈর্য। যদিও জনবহুল অঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল। তবুও কোনো কোনো সময়ে ভালো ট্রাফিক জ্যাম হতে পারে। ধর্মীয় শোভাযাত্রাগুলি প্রায়শই পুরো রাস্তাটি ধরে চলে তাই কোনও মিছিলের পিছনে পড়লে সে অভিজ্ঞতা  খুব একটা সুখকর হবেনা। রাস্তার পাশে রামায়ণ, মহাভারত এবং  অনেক পৌরাণিক চরিত্র নিয়ে তৈরি মূর্তি লক্ষ করা যায়।

কুটা সর্বাধিক পরিচিত একটি সৈকত। বালির সাদা সৈকত  ভ্রমণপিপাসুদের  প্রিয় গন্তব্যস্থল। বিভিন্ন ধরণের ওয়াটার স্পোর্ট গুলি যেমন ব্যানানা বোট রাইডিং, প্যারাসেলিং এবং জেট স্কিইং এগুলি  খুবই জনপ্রিয় । এছাড়া সাঁতার কাটা বা নির্জন সৈকতে রোদ উপভোগ করা এসব তো আছেই। তানজুং বেনোয়া কুটার দক্ষিণে একটি উপদ্বীপ । এখানকার সুন্দর সমুদ্র সৈকত এবং বিভিন্ন জলক্রীড়ার জন্য ভ্রমন কারীরা  আকৃষ্ট হয়ে এখানে আসে ।এখানেও স্কুবা ডাইভিং, প্যারাসেলিং এবং স্নরকেলিং  খুব জনপ্রিয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক  ক্রূজ টার্মিনাল, যেখানে দেশবিদেশ থেকে  ক্রূজের জাহাজ এখানে আসে ট্যুরিস্টদের নিয়ে। এই সুন্দর  সৈকত দেখে আমরা চললাম উলুওয়াতুর দিকে।

উলুওয়াতু মন্দির একটা প্রায় ২৫০ ফুট উঁচু ক্লিফ বা পাথরের পাহাড়ের চূড়ার পাশে অবস্থিত। এক জাভানীজ সন্ন্যাসী একাদশ শতাব্দীতে এই মন্দিরটি সংস্কার করে পুনর্নির্মাণ করেন। কথিত আছে পরে আর একজন সন্ন্যাসী তপস্যা করে এখানে মোক্ষ লাভ করেন। সেই কারনে মন্দিরটি ট্যুরিস্ট ছাড়াও স্থানীয় মানুষদের মধ্যেও খুবই জনপ্রিয় – এখানে রোজ অনেক  পূন্ন্যার্থীরা আসেন পূজা দিতে। আমরা টিকিট কাউন্টারে টিকিট কাটার পর বলা হল যে মন্দিরে ঢুকতে হলে কোমরে একটা  কাপড় জড়িয়ে ঢুকতে হবে – সেই মত আমাদের একটা করে রঙ্গীন সিল্কের কাপড় দেওয়া হল। আর সেই সঙ্গে একটা সাবধানবাণী জানিয়ে দেওয়া হলো যে এখানে খুব বাঁদরের উৎপাত আছে- কাজেই সবাই যেন তাদের জিনিষপত্র সামলে রাখে। সেই সাবধানবাণী যে আমাদের পক্ষে এতটাই প্রাসঙ্গিক হবে তা পরে বুঝেছিলাম। পাথরের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে আমরা ক্লিফের চূড়ায় এসে পৌঁছলাম। এখান থেকে নীচের ঘন নীল সমুদ্র দেখতে খুবই সুন্দর লাগছিল। এখানে মন্দির দেখার পর বেশ কিছুক্ষণ  সময়  কাটালাম ওপরে। আমাদের গাইড টিকিট কাউন্টারে গেলো টিকিট কাটতে।  সন্ধে বেলায় উলুওয়াতু মন্দির সংলগ্ন একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার বা খোলা স্টেডিয়ামে ‘কেচাক’ নৃত্যটি মঞ্চস্থ হবে।হাতে অনেক সময় আছে ।

আমরা নীচের দিকে চারিদিকে গাছে ঘেরা একটা পার্কের মত জায়গা আছে সেখানে বসে সময় কাটাবো মনস্থ করলাম।  আমার স্ত্রী পাথরের  সিঁড়ির দেয়াল ধরে সন্তর্পণে নীচে নামছিল। হঠাৎ কানের কাছে টান লাগলো। মুহূর্তের মধ্যে দেখলো চশমা উধাও – আর পাথরের দেয়ালের উপর বসে একটা বাঁদর নিবিষ্ট মনে চশমার ডাঁটি চিবিয়ে চিবেয়ে খাচ্ছে। তারপর কি মনে করে চশমাটা নীচে খাদের দিকে ছুঁড়ে মারলো। এবারে সাবধানবাণীটি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলাম। তখনো জানিনা  আরও  কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। নীচে নেমে গাছে ঘেরা লনের ওপরে বসলাম। বাঁদররা তাদের  কীর্তিকলাপ দেখিয়ে চলেছে। একজন বিদেশীর সানগ্লাস তুলে নিয়ে গাছের ডালে গিয়ে বসল। সে তার আধ খাওয়া কোকোকোলার বোতলটা ছুঁড়ে মারতে মুহূর্তের মধ্যে বাঁদরটা চশমাটা ছুঁড়ে ফেলে বোতল টা নিয়ে গাছের মগডালে বসে চোঁচোঁ করে খেয়ে ফেললো। বুঝলাম ব্ল্যাক মেল করে খাবার বাগানো এদের ধান্দা। এই ভাবতে ভাবতেই মাথার পিছনে একটা টান অনুভব করলাম – গাছের শাখা থেকে নেমে একটি শাখামৃগ মুহূর্তের মধ্যে আমার চশমাটা নিয়ে হাওয়া। দেখলাম আমার দিকে ভেংচাচ্ছে আর মাঝে মাঝে চশমাটা দেখছে। আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যাগ থেকে কিছু বিস্কুট বার করে ছুঁড়ে দিলাম – চশমাটা লনের উপর ফেলে রেখে বিস্কুটের দিকে দৌড়ে গেলো বাঁদরটা। আমি দৌড়ে গিয়ে চশমাটা হস্তগত করলাম।

শো শুরু হতে আর আধ ঘন্টা মতো বাকী আছে । আমরা চললাম স্টেডিয়ামের দিকে। ‘কেচাক’ নৃত্য ও ‘আগুন-নৃত্য’ বালির সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ও তার স্বকীয় কৃষ্টির পরিচায়ক। ‘কেচাক’ নৃত্য রামায়ণের কাহিনী নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আর সূর্যাস্তের পরে শুরু  হয় আগুন-নৃত্য। একটু বাদে শুরু হল নৃত্য অনুষ্ঠান – একদল নর্তক  ঊর্ধ্ববাহু হয়ে মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে ‘চাক-চাক-চাক’  আওয়াজ করছে যেন কোনও অতিপ্রাকৃত শক্তি ভর করেছে তাদের উপরে। রাম,  লক্ষণ, সীতা ,  রাবণ , হনুমান সব কটি চরিত্রই সুন্দর ভাবে দর্শকদের মন জয় করেছে –বিশেষ করে শেষ চরিত্রটি। এই অবিস্মরণীয় মুহুর্তগুলি যখন উপভোগ করছি তখন বালির এই বিখ্যাত নৃত্যের সাথে  প্রকৃতির মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল আর একটি জাগতিক দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য।  দিগন্তের উপরে সূর্য ধীরে ধীরে ভারত মহাসাগরের ওপর বিলীন হয়ে যাচ্ছিল।  অনুষ্ঠানটির শেষ পর্যায়ে আগুন জ্বালানো হয় এবং তার সঙ্গে নৃত্য অনুষ্ঠান চলে। প্রাম্বানানের রামায়ণ ব্যালের মত এটা অতটা মনগ্রাহী হয়নি, কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী নতুন আঙ্গিকের নৃত্য উপভোগ আমাদের কাছে এক অন্য অভিজ্ঞতা।

পরের দিন সকালে দেনপাসার শহরে সিটি ট্যুর। এখানকার প্রধান  আকর্ষণ হচ্ছে বজ্রসন্ধি স্মৃতি স্তম্ভ ও মূল ভবন উতামা মণ্ডল। বজ্রসন্ধি স্মৃতিস্তম্ভ ইতিহাস জুড়ে বালিনীয় জনগণের সংগ্রামের স্মরণে তৈরি একটি স্মৃতিস্তম্ভ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ঠিক পরে, ১৯৪৫ সালের  ১লা আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সোয়েকার্নো দেশটির স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন ।তবে দেশবাসীদের এই আশা আকাঙ্খার কথা ডাচদের বোঝাতে দীর্ঘ চার বছর সময় লেগেছিল । শেষ পর্যন্ত তাদের প্রত্যয় হয় যে তারা আর বালির উপরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ডাচরা শেষ পর্যন্ত ১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল।স্মৃতিস্তম্ভটি বালি দ্বীপের ডেনপাসারে অবস্থিত বালি গভর্নরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত। স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয়  এবং ২০০৩ সালে রাষ্ট্রপতি মেগাবতী সুকারনোপুত্রি এর উদ্বোধন করেন।মূল ভবন  উতামা মণ্ডল  তিন তলা  বিশিষ্ট। নিচতলায় প্রশাসনিক কক্ষ, একটি গ্রন্থাগার এবং প্রদর্শনী হল রয়েছে। আর রয়েছে একটি সংরক্ষিত জলাশয় ও  ফোয়ারা । দোতলায় ৩৩টি মিনিয়েচার ত্রিমাত্রিক মডেল রয়েছে, যা জাকার্তার জাতীয় মিউজিয়ামের প্রদর্শনের মতই  কিন্তু মুলতঃ বালিনীয় জনগণের সংগ্রামকে প্রতিফলিত করেছে। বালিনীয় রাজ্য, হিন্দুধর্মের প্রবর্তন, মাজাপাহিত যুগ, ডাচ ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামসহ বালিনীয়দের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। তিনতলায় একটি ধ্যান কক্ষ আছে – এখান থেকে ডেনপাসার শহরটির সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।

দেনপাসার থেকে আমরা গেলাম তানা লট। তানা লট বলতেই চোখে ভাসে  খাড়া পাহাড়ের চুড়ায়  একটি মন্দির – সামনে নীল ভারত মহাসাগর  তার শুভ্র সফেন তরঙ্গমালা নিয়ে প্রবালের প্রাচীরে আছড়ে পড়ছে আর নীচে  পাথুরে সৈকতের উপরে সমুদ্র দেবতার উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি মন্দির যার পাহারায় রয়েছে এক সাপ অতন্দ্র প্রহরীর মত । এই মন্দিরটি আনুমানিক ষোড়শ  শতাব্দীতে তৈরী হয়েছিল। প্রতিদিন অনেক পুণ্যার্থীরা এখানে আসে  পূজো দিতে। আমরা যখন মন্দির দর্শনে গেলাম তখন পুরোহিত কপালে চাল আর চন্দন মেশানো টিকা লাগিয়ে দিল আর কানে গুঁজে দিলো একটা চাঁপা ফুল। অনেকগুলো পাথর টপকে মন্দিরের কাছে পোঁছতে হয় – মন্দির সংলগ্ন পাথরের দেওয়ালে সমুদ্রের ঢেউ নিরন্তর আছড়ে পড়ছে। জোয়ারের সময় মন্দিরে যাবার কোনো পথও  খোলা থাকেনা। সমুদ্র সৈকতের পাশে একটি ধাবায় আমরা দ্বিপ্রাহরিক আহার সারলাম। গোল ফুটবলের সাইজের এক ডাব খেলাম – যেমন মিষ্টি তার জল তেমনি পরিমানে অনেক – খেয়ে শেষ করা যায়না।

তানা লট কথাটির বালিনীজ ভাষায় অর্থ হচ্ছে  সমুদ্রের মধ্যের জমি। উপরের মন্দিরটি পাড় সংলগ্ন, সমুদ্রের দিকে এগিয়ে আসা একটি উঁচু পাথরের উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের ক্রমাগত আঘাতে পাথরের নীচের অংশ ক্ষয় হয়ে এই রকম রূপ ধারণ করেছে। সন্ধেবেলায় এই মন্দিরের পিছনে সূর্যাস্তের দৃশ্যটি খুবই সুন্দর শুনেছি – আমরা আর ততক্ষণ অপেক্ষা করলাম না কারণ আমাদের ফিরতে দেরী  হয়ে যাবে। হোটেলে ফেরার পথে দেখলাম আকাশে থালার মত চাঁদ উঠেছে । আগের দিন ছিল বুদ্ধ পূর্ণিমা। জ্যোৎস্না প্লাবিত পথ দিয়ে গাছপালা আর গ্রামের পাশ দিয়ে আমরা ফিরে চললাম শহরের দিকে। ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রমনের সুখ স্মৃতি নিয়ে এবারে দেশে ফেরার পালা। পরের দিন দুপুর বেলায় ফ্লাইট – সিঙ্গাপুর হয়ে কোলকাতায় ফিরবো।

Bali
বালির দ্রষ্টব্য জায়গার ছবিগুলি দেখতে পাশের তীর চিন্হে ক্লিক করুন

কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যঃ

 কেন  যাবেন

          অত্যাশ্চর্য সৈকতের অন্তহীন তালিকা সম্ভবত ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গে যাওয়ার সবচেয়ে সুস্পষ্ট কারণ। এখানকার প্রতিটি  সৈকতেরই নিজস্ব আকর্ষণ রয়েছে ।বালিতে পর্যটকরা  সুন্দর কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন যেমন তেগালালং ধানের ক্ষেত, মাউন্ট বাতুর, লেক বেরাটান, তানা লট এবং উলুওয়াতু মন্দির যা অবশ্যই দেখার মতো। অত্যাশ্চর্য সৈকত এবং চমকপ্রদ মন্দিরের বাইরে, বালিতে কার্যত সব ধরণের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে সবুজের সমারোহ, মনোরম হ্রদ, সুন্দর জলপ্রপাত, ধাপে ধাপে নেমে আসা ধানের ক্ষেত, ফুলের বাগান, প্রবাহিত পবিত্র নদী এবং গোপন গিরিখাত সবই দ্বীপের ল্যান্ডস্কেপকে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়।

 তবে বালির  বৈশিষ্ট্য তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের  চেয়েও  অনেক গভীরে – তার   সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে নিহিত। বালিনীরা সারা বছর ধরে অনেক অনুষ্ঠান  উদযাপন করে, স্থানীয়রা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, ধর্মীয় আচার পালন করে যার অনেকগুলি কৌতূহলী পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন। বালিনীরা আধ্যাত্মিক মনোভাবাপন্ন – প্রধানত হিন্দু, এবং তাদের গ্রামগুলি একটি ছোট মন্দির দিয়ে সজ্জিত, যেখানে তারা প্রতিদিন প্রার্থনা করে। বালির মন্দিরগুলি অবশ্যই দ্রষ্টব্য। এছাড়া দ্বীপটি  তার অনন্য ইন্দোনেশিয়ান খাবারের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় খাবারের স্টল থেকে শুরু করে নতুন এবং আধুনিক পশ্চিমা রেস্তোরাঁ পর্যন্ত সব রকম স্বাদের জন্য উপযুক্ত খাবার নিয়ে পর্যটকদের সামনে হাজির।

কোন সময়ে যাবেন

এপ্রিল থেকে অক্টোবর বালি  ভ্রমনের প্রকৃষ্ট সময়।

কি ভাবে যাবেন

কোলকাতা থেকে  বালি পর্যন্ত  বিমান ভাড়া আনুমানিক ২২০০০/-(এক দিকে)

কোথায় থাকবেন

Risata Bali Resort and Spa. Jalan Kartika Plaza, Kuta, Kabupaten, Badung, Bali -80361, Indonesia. আনুমানিক ভাড়া দিন প্রতি ২৫০০/- ব্রেকফাস্ট  সমেত।

এছাড়া কুটা অঞ্চলে বিভিন্ন বাজেট অনুযায়ী অনেক ভাল হোটেল পাওয়া যাবে।

অন্যান্য খরচ

কেচাক ড্যান্স এন্ট্রি ফি মাথা পিছু   ৬০০/-, উলুওয়াতু মন্দিরের এন্ট্রি ফি মাথা পিছু ১৬০/- ,  তানা লট মন্দিরের এন্ট্রি ফি মাথা পিছু  ৪০০/-

Read More Blogs ->

The post বালির বালুকা বেলায় appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a7%9f/feed/ 0
একুশের শেষ , বাইশের শুরু – নতুন পথে যাত্রা শুরু https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3-exotic-bong-family-traveller/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3-exotic-bong-family-traveller/#respond Fri, 24 Dec 2021 06:41:36 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=578 লেখা- তীর্থ দাশগুপ্ত আসন্ন বড়দিন ও নিউইয়ার উপলক্ষ্যে বর্ষশেষের ছুটি কাটাতে পশ্চিমবাংলার পাহাড় , জঙ্গল , সমূদ্রতটে মানুষের ঢল নামছে । দীর্ঘ লোকডাউন জনিত ক্লান্তি ও অবসাদ কাটাতে মানুষ বেড়িয়ে পরছে । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যেমন পর্যটন , বন , মৎস্য দপ্তর বা পি ডব্লিউ ডিপার্টমেন্ট অধীনস্থ বিভিন্ন বাংলোগুলির বুকিং একদম শেষ । সরকারী […]

The post একুশের শেষ , বাইশের শুরু – নতুন পথে যাত্রা শুরু appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
লেখা- তীর্থ দাশগুপ্ত

আসন্ন বড়দিন ও নিউইয়ার উপলক্ষ্যে বর্ষশেষের ছুটি কাটাতে পশ্চিমবাংলার পাহাড় , জঙ্গল , সমূদ্রতটে মানুষের ঢল নামছে । দীর্ঘ লোকডাউন জনিত ক্লান্তি ও অবসাদ কাটাতে মানুষ বেড়িয়ে পরছে । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যেমন পর্যটন , বন , মৎস্য দপ্তর বা পি ডব্লিউ ডিপার্টমেন্ট অধীনস্থ বিভিন্ন বাংলোগুলির বুকিং একদম শেষ । সরকারী বাংলো গুলি উৎসাহী পর্যটকদের কাছে সবসময়ে আকর্ষণীয় তার মূল কারণ এগুলির অবস্থান । যেকোনো টুরিস্ট স্পটের সবচেয়ে সেরা জায়গা তেই সরকারী বাংলোগুলি অবস্থান করে । বুকিং পদ্ধতিও আজকাল বেশ সোজা । সরাসরি নির্দিষ্ট দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে বুক করা যায়। এছাড়াও এবারে পর্যটকদের সব চেয়ে পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন অল্পচেনা জায়গায় homestay । করোনা পরিস্থিতে বেশী ভীড় জায়গায় না গিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে কম লোকের মধ্যে homestay গুলিতে থাকতে মানুষ বেশী পছন্দ করেছন । বেশ কয়েকবছর আগে আমরাও এরকম শীতে সিঙ্গিগ্রামে এক homestay তে থেকেছিলাম । exotic bong family traveller এর প্রথম সংখ্যায় গতবছর জানুয়ারীতে সেই ভ্রমনকথা প্রকাশ ও করা হয় ।
এ বছরে অবশ্য আমরা যাচ্ছি পাশের রাজ্য উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল অরণ্যে । সেই ভ্রমণের পুর্বকথা আগেই প্রকাশ করেছি । মূল কাহিনী ঘুরে এসেই প্রকাশ করব । আপনারাও নিশ্চয়ই কোথাও যাচ্ছেন ? পাঠান না আমাদের কাছে আপনাদের ভ্রমণ গল্প , সাথে ভালো কিছু ছবি । পাঠান ইমেল করে travellertirtho@gmail. com এ । আপনাদের ভালো লেখা , বেড়ানোর গল্প ছবিসহ প্রকাশ করব । ভ্রমণের আনন্দের মতন ভ্রমণ কথা শোনানো বা সুন্দর করে লিপিবদ্ধ করাতেও ততোধিক আনন্দ । কি বলেন আপনারা ?
সকলে ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন ।
ধন্যবাদ
তীর্থ দাশগুপ্ত
travellertirtho@gmail. com

The post একুশের শেষ , বাইশের শুরু – নতুন পথে যাত্রা শুরু appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3-exotic-bong-family-traveller/feed/ 0
সিমলিপাল ভ্রমণের পূর্ব কথা https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b2-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%82%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%95/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b2-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%82%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%95/#comments Wed, 22 Dec 2021 10:14:57 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=572 লেখা- তীর্থ দাশগুপ্ত জঙ্গল আমার অতি প্রিয় গন্তব্য । অরণ্য প্রকৃতির রূপ রস গন্ধ স্পর্শ আমাকে ছোটবেলা থেকেই টানে । অনেকের ই টানে , আমার মতন যারা জঙ্গলবিলাসী ও জঙ্গলপ্রেমী । সুযোগ পেলেই তাই ইচ্ছা হয় দুদন্ড প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে আসি । নগরজীবনের যাঁতাকলে , নানাবিধ স্ট্রেসের থেকে মুক্তির একটা অন্যতম পথ নিষ্কলুষ প্রকৃতির সাথে […]

The post সিমলিপাল ভ্রমণের পূর্ব কথা appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
লেখা- তীর্থ দাশগুপ্ত

জঙ্গল আমার অতি প্রিয় গন্তব্য । অরণ্য প্রকৃতির রূপ রস গন্ধ স্পর্শ আমাকে ছোটবেলা থেকেই টানে । অনেকের ই টানে , আমার মতন যারা জঙ্গলবিলাসী ও জঙ্গলপ্রেমী । সুযোগ পেলেই তাই ইচ্ছা হয় দুদন্ড প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে আসি । নগরজীবনের যাঁতাকলে , নানাবিধ স্ট্রেসের থেকে মুক্তির একটা অন্যতম পথ নিষ্কলুষ প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া । এই অরণ্য প্রীতি অনেকটাই এসেছে বিখ্যাত সাহিত্যিক শ্রী বুদ্ধদেব গুহর অগণিত লেখা পড়ে । আমি যে ওনার একনিষ্ঠ ভক্ত এবং আমার মতন অগণিত পাঠক পাঠিকা ,তা এর আগে কয়েকটি লেখায় আমি আগেই বলেছি । শেষ জীবনে ওনার সাথে ফোনালাপ হয় । সেই নিয়মিত আলাপচারিতা করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে দ্বিতীয়বার ভর্তির কয়েকদিন আগে পর্যন্ত চলেছিল ।

মনে আছে একদম প্রথম ফোনেই দাদা বলেছিলেন সিমলিপাল যাবার কথা । দেশ বিদেশের সব অরণ্যের মধ্যে সিমলিপালের মোহিনী রূপের আকর্ষণ সব চেয়ে বেশী ছিল ওনার কাছে এটাও বলেছিলেন । ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যাবার সাহস হয়না বলাতে বলেছিলেন ” বেপাড়ার সুন্দরী মেয়ে কে চুমু খেয়ে এলে সেপাড়ার জোয়ানেরা কি ঠ্যাঙাবে নাকি মালা দেবে ? “
সিমলিপাল হল ভয়ঙ্কর সুন্দরী । এর পর ওনার ই লেখা “অন্য চোখে ” বইতে ” ভয়ঙ্কর সুন্দরী “লেখা পড়ে আরো ধারণা হয় । আস্তে আস্তে খোঁজ নিয়ে দেখি যে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ওখানে এখন অনেকটাই কমেছে । তাই সাহসে ভর করে এই বছরের বর্ষশেষে আমার ও আমার বাল্য বন্ধুর পরিবার চারদিনের সিমলিপাল অরণ্য ভ্রমণের পরিকল্পনা করলাম ।

এই লেখাটি সেই ভ্রমণের পূর্ব কথা ।


জঙ্গল ভ্রমণ ঠিক আর পাঁচটা টুরের মতন নয় ।
1) ফরেস্ট বাংলো তে থাকতে হয় যেখানে সবরকম স্বাচ্ছন্দ্য নেই হোটেলের মতন। বিদ্যুৎ নেই । তাই সন্ধ্যের পর অন্ধকারে বিশেষ কিছু করার থাকেনা . তবে ফরেস্ট বাংলোর ব্যালকনি তে বসে রাতের জঙ্গলের শোভা অনুভব করতে বেশ লাগে । চুপ করে বসে থাকলে কতরকম আওয়াজ শোনা যায় । নানান গন্ধ নাকে আসে । সব মিলিয়ে এই আদিম পরিবেশ যাদের ভালো লাগে, অরণ্য ভ্রমণ তাদের টানবেই এটা বলতে পারি ।
2) সাজগোজের বাহুল্য অরণ্য ভ্রমণে চলেনা । লাল বা উত্তেজক কোনো রঙের পোশাক পরা চলেনা । কারণ জীবজন্তুরা উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে ।সবুজ , মেটে রং বা কোনো হালকা রঙের পোশাক চলে যাতে প্রকৃতির সাথে বেশ মানিয়ে যায় ।
3) বেশী উত্তেজক সেন্ট বা পারফিউম মাখা যায়না । এমন ও শুনেছি খুব কড়া পারফিউম গায়ে মাখাতে মৌমাছিরা ঘিরে ধরে এবং তাদের বিষদংশনে আহত হন কেউ কেউ ।
4) সেলফির পেছনে না ছুটে যতটা সম্ভব প্রকৃতির অনবদ্য শোভা ক্যামেরাবন্দি করতে হয় , বেশিটাই মনের ক্যামেরায় ।
5) পঞ্চয়ন্দ্রিয় কে খুব তীক্ষ্ণ করে চোখ , কান , , নাক সবের অনুভূতি নিয়ে সম্পুর্ন ভালো লাগায় কটাদিন কাটিয়ে আসতে হয় ।
6) নিজেদের মধ্যে বেশী কথা বলতে হয়না । তাতে প্রকৃতি র কথা শোনা যায়না । মানুষের কথাতেই সব চাপা পরে যায় । শহর জীবনে তো শুধুই শব্দ , বেশিটাই অনাবশ্যক । অরণ্য ভ্রমণে যাওয়া তো আসলে নিশব্দতার বাঙময়তা অনুভব করতে ।

তা যারা আমার বক্তব্যের সাথে একমত তাঁরাই পারবেন সম্পুর্ন প্রকৃতিকে অনুধাবন করতে ।
আমাদের কর্তব্য পরবর্তী প্রজন্ম কে মাঝে মাঝেই এই প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত হতে শেখানো ।

সিমলিপাল একসময়ে ছিল ময়ূরভঞ্জের রাজার hunting ground । দেশ স্বাধীন হওয়ার জাতীয় উদ্যান হয় । দেখা মেলে প্রচুর হাতি , মাউস ডিয়ার , সম্বর , গাউর, স্পটেড ডিয়ার , সজারু , ময়ূর , নানাবিধ পাখী যেমন রাকেট টেইল্ড drongo ইত্যাদি । নামেই টাইগার রিজার্ভ কিন্তু বাঘ কেউ দেখতে পায়না । বিভিন্ন এক্সটিক প্ল্যান্টের সমাহার শুনেছি এই জঙ্গলে । গাইডের থেকে সব চেনার ইচ্ছা রইলো । রয়েছে শাল , আম , জাম , সাহাজ, শিশু , বেল , বিজা বা পিয়াশাল , তেঁতুল । এছাড়া নানারকম লতা , গিলিরি , পুটুস ঝোপ ইত্যাদি। গাছ শুধুই গাছ নয় । তার ও নাম আছে, সৌন্দর্য আছে । এক এক ঋতুতে তার এক এক রকম শোভা আছে ।


বিভিন্ন রকম প্রজাপতি দেখতে পাওয়া যায় । ইচ্ছা রইল সেইগুলা দেখে মুগ্ধ হওয়ার ।
আর আছে প্রচুর ঝর্ণা ও জলপ্রপাত । নামগুলিও ভারী সুন্দর , যেমন জোরান্ডা , বরেহিপানি, উস্কি ইত্যাদি । এই জলপ্রপাত ও সংলগ্ন জঙ্গলের শোভা কিছুটা পায়ে হেঁটেই ঘুরব আমরা । সিমলিপালে পর্যটকরা পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারেন , যা এর আগে করবেট ফরেস্টে পারিনি আমরা । জোরান্ডা নামের উৎস ও খুব ইন্টারেস্টিং । কথাটা এসেছে জাউ রান্ধা থেকে । জাউ মানে জিউ । অর্থাৎ অনেক আগে জগন্নাথ দেবের ভোগ মানে অন্ন এখানেই কাছে কোনো গ্রামে নাকি রান্না হত । জোরান্ডা ফরেস্ট বাংলোয় রাতে থাকলে জলপ্রপাতের দিকে নাকি বিচিত্র সব আলো দেখা যায় জ্বলতে নিভতে । শহুরে পরিবেশে এসব অতটা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও সভ্যতা থেকে দূরে ওই পরিবেশে এই সব ক্রিয়াকলাপ মনের উপরে যথেষ্ট অভিঘাত ফেলে ।


বরেহিপানি জলপ্রপাতের দৃশ্য নাকি অতুলনীয় । বুড়িবালাম নদী এখন থেকেই নাকি উৎপন্ন হয়েছে ।
আরো সুন্দর সুন্দর জায়গার নাম শুনলাম , যেমন নুয়ানা আর চাহালা । নুয়ানা মানে ন আনা । ময়ূরভঞ্জের রাজা কে ন আনা ট্যাক্স দিতে হত সেই আমলে এখানকার অধিবাসীদের । আবার চাহালা মানে নাকি টলি গেলা । সেই আমলে একবার বিদেশী অতিথি দের নিয়ে রাজা এই চাহালার জঙ্গলে আসেন ও কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনার সাক্ষী হন । অতিথিদের মধ্যে কারুর প্রাণহানিও হয় । চাহালা বাংলোর সামনে একটি বড় পিয়াশাল গাছ আছে । সেটি নাকি কুরুল দিয়ে যেই কাটতে যায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় । এই সমস্ত নানা গল্প এখানে প্রচলিত আছে । লোকালয় থেকে বহু ভিতরে , আদিম বিদ্যুৎ হীন পরিবেশে , রাতের নিঝুম পরিবেশে বাংলোর হাতায় বসে এই সমস্ত গল্প স্থানীয় মানুষজন বা আমাদের গাইডের ( তিনিও স্থানীয় ) মুখে শুনতে বেশ লাগবে আশাকরি ।


স্থানীয় মানুষজন বা আদিবাসীদের বাদ দিয়ে কোনো অরণ্য প্রকৃতিই সম্পূর্ণতা পায়না । ওঁরাও , মুন্ডা ইত্যাদি আদিবাসীদের বাস জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় । এছাড়া আছে বাথুরি সমাজ । এখানকার আদি অধিবাসী । পুজো করে তারা বরামদেও বা জঙ্গলের দেবতার । যেমন সুন্দরবনে দক্ষিণরায় বা বনবিবি । এদের গ্রাম , লোকাচার , গ্জীবনযাত্রা ,ইত্যাদি চাক্ষুষ করার ইচ্ছা রইল । প্রকৃত ভারতবাসী তো এরাই । এতদিন দাদার মানে শ্রী বুদ্ধদেব গুহর লেখা পড়ে মনে মনে এই অপরূপ প্রকৃতির যে ছবি এঁকেছি তা চাক্ষুষ করার সুযোগ হবে এটা ভেবেই আমার উত্তেজনার শেষ নেই । আমার ভ্রমণ সাথীরাও যথেষ্ট excited আশা করি ।


বাকি ভ্রমণ কথা বেড়িয়ে এসেই পরিবেশন করব ।

The post সিমলিপাল ভ্রমণের পূর্ব কথা appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b2-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%82%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%95/feed/ 1
মার্কিন মুলুকের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) উল্লেখযোগ্য পর্যটনস্থল https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%89%e0%a6%b2%e0%a7%8d/ https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%89%e0%a6%b2%e0%a7%8d/#respond Mon, 15 Nov 2021 16:18:40 +0000 https://exoticbongfamilytraveller.com/?p=534 সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যটকদের দের জন্যে খুলে দিয়েছে তাদের দেশ দীর্ঘ কোভিড জনিত বিরতির পর । টুরিস্ট ভিসার আবেদন করা যাচ্ছে স্থানীয় মার্কিন কনস্যুলেট থেকে । ডাবল ভ্যাক্সিনেশান সার্টিফিকেট থাকাটা বাধ্যতামূলক । আগামী ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে মার্কিন দেশ কে বেছে নিতে পারেন । আসুন দেখে নি এতবড় একটা দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বড় শহরের বিভিন্ন […]

The post মার্কিন মুলুকের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) উল্লেখযোগ্য পর্যটনস্থল appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যটকদের দের জন্যে খুলে দিয়েছে তাদের দেশ দীর্ঘ কোভিড জনিত বিরতির পর । টুরিস্ট ভিসার আবেদন করা যাচ্ছে স্থানীয় মার্কিন কনস্যুলেট থেকে । ডাবল ভ্যাক্সিনেশান সার্টিফিকেট থাকাটা বাধ্যতামূলক । আগামী ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে মার্কিন দেশ কে বেছে নিতে পারেন । আসুন দেখে নি এতবড় একটা দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বড় শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ভিত্তিতে কোন কোন যায়গা অবশ্য গন্তব্য । ভ্রমন সংক্রান্ত বিখ্যাত লোনলি প্ল্যানেট ম্যগাজিন নিম্নলিখিত পর্যটনস্থলগুলি  অবশ্য গন্তব্য  তালিকায় রেখেছে ।

১) নিউ ইয়র্ক সিটি –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

২) ইয়েলোস্টোন  ন্যাশানাল পার্ক –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৩) সান ফ্রান্সিস্কো , ক্যালিফোর্নিয়া – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৪) গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন , অ্যারিজোনা –মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৫) ন্যাশানাল মল , ওয়াশিংটন ডি সি –

৬) ইওসেমাইট ন্যাশানাল পার্ক – ক্যালিফোর্নিয়া –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৭) নিউ ইংল্যান্ড –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৮) প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে –

৯) নিউ অরলিন্স , লুইসিয়ানা –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১০) সান্তা ফে , নিউ মেক্সিকো –

১১) ভল্ক্যানো ন্যাশানাল পার্ক – হাওয়াই

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১২) পোর্টল্যান্ড ওরেগণ –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১৩) ওয়াল্ট ডিসনি ওয়ার্ল্ড , ফ্লোরিডা

১৪) রুট ৬৬

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১৫) শিকাগো , ইলিনয়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১৬) রকি মাউন্টেন্স, কলোরাডো

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১৭) আকাডিয়া ন্যাশানাল পার্ক , মাইন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১৮) সান আন্তনিও , টেক্সাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১৯) দ্যা এভারগ্লেডস , ফ্লোরিডা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

২০) লাস ভেগাস , নেভাদা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
A stock photo of the world famous Las Vegas city skyline.

২১) গ্লেসিয়ার ন্যাশানাল পার্ক , মন্টানা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

২২) লস আঞ্জেলিস – ক্যালিফোর্নিয়া

আর ব্লগ…

The post মার্কিন মুলুকের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) উল্লেখযোগ্য পর্যটনস্থল appeared first on Bengali Family Travel Blog | Exotic Bong Family Traveller.

]]>
https://exoticbongfamilytraveller.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%89%e0%a6%b2%e0%a7%8d/feed/ 0