সময়– মে ২০১৮ যাত্রীগণ – দেবাশিস দাশগুপ্ত ও মনিদীপা দাশগুপ্ত
লেখা ও ফটো – দেবাশিস দাশগুপ্ত
স্থান – কিন্তামনি, উবুদ, কুটা, উলুওয়াতু, দেনপাসার, তানা লট
This is a travelogue in Bengali about Bali, Indonesia. Bali is unique, Bali is unmatched, a magical blend of culture, nature, activities, weather, culinary delights and above all the beautiful people of this island. Bali is rated as one of the best travel destinations in the world by countless websites, review portals, and travel magazines – for very good reasons. Whatever is your age, background, budget or interest, there is something great for everyone to explore and discover in Bali
গরুড় এয়ারলাইন্সের ছোট ফ্লাইটে যোগজাকার্তা থেকে বালির ডেনপাসারে এসে পৌঁছলাম।আকাশ পথে বালির প্রবেশদ্বার নগুরাহ রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মালপত্র নিয়ে বহির্দ্বার দিয়ে বেরোতেই দেখলাম আমাদের গাইড ফ্রেডি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তার মন্তব্য – ইন্ডিয়া থেকে সবাই বালিতে এসে আবার ইন্ডিয়াতে ফিরে যায়। তোমাদেরই দেখলাম যোগজাকার্তা থেকে বালিতে আসতে । প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যাম পেরিয়ে হোটেলে পৌঁছলাম। পরের দিন থেকে আমাদের নির্ধারিত ট্যুর শুরু হবে। এখানকার দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই । তবে আমাদের এই চার দিনের ট্রিপে বিশেষ কয়েকটি জায়গা দেখার পরিকল্পনা আছে।
বালির দর্শনীয় স্থানের বিবরণ দেবার আগে বালির কিছু পরিচিতি দেবার প্রয়োজন । অবশ্য অনেকেরই হয়ত এই জায়গা সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান আছে , তবুও অধিকন্তু ন দোষায়ঃ। দেবতাদের ভূমি হিসাবে পরিচিত বালি তার সুন্দর এবং ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি, দিগন্ত জোড়া সমুদ্র সৈকত, ধাপে ধাপে নেমে আসা ধানের ক্ষেতগুলি, সবুজ বনাঞ্চল এসবের সম্মিলিত অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের স্বর্গ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে – এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই। এখানকার বিখ্যাত রিসর্ট গুলি, সার্ফিং, গল্ফ এবং বিশ্বমানের ডাইভিং সাইট হয়তো অনেকের কাছে এখানকার বিরাট আকর্ষণ, কিন্তু বালিকে সম্যক ভাবে উপলব্ধি করতে হলে জানতে হবে তার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং তার আচার, আচরণবিধি । তার ঐতিহ্য না বুঝলে, নাটকীয় নৃত্য এবং বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানগুলি না দেখলে , তার শিল্পকলা এবং কারুশিল্প দ্বারা মোহিত নাহলে, নিবিড়ভাবে খোদাই করা মন্দিরগুলির সাথে পরিচিত নাহলে বালি অধরাই থেকে যাবে।
সম্ভবত জাভা বাদে ইন্দোনেশিয়ার সমস্ত দ্বীপগুলির মধ্যে বালিতেই বহিরাগতদের প্রভাব সর্বাধিক, তবুও বিস্ময়করভাবে এটি দ্বীপপুঞ্জের অন্য জায়গা গুলির তুলনায় তার পুরানো রীতিনীতি ধরে রাখতে অনেকটাই সফল হয়েছে। বালির জনসাধারণ এবং তাদের ধর্মের মধ্যে শক্তিশালী যোগসূত্রটির জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপগুলির মধ্যে বালি তার অনন্য পরিচয় বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। তাই ফিলিপিন্সের বোরাসায় বা থাইল্যান্ডের ফুকেটের মতো দ্বীপগুলিতে যে বাণিজ্যিকীকরণ ও পশ্চিমী প্রভাব আমরা লক্ষ্য করি তা প্রতিরোধ করতে বালি অনেকাংশেই সক্ষম হয়েছে। বালির মন্দির, নৃত্য এবং অনুষ্ঠানগুলি বালির পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে একদিকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে অন্য দিকে সমুদ্র সৈকত, সার্ফিং বা স্নরকেলিং তাদের দিয়েছে বিনোদনের নিত্য নতুন সংজ্ঞা।
পরের দিন সকাল বেলা প্রাতঃরাশের পর আমরা বেড়িয়ে পড়লাম কিন্তামনির উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে কিন্তামনি গাড়ীতে অনেকটা পথ। শহর ছাড়াতেই দেখলাম রাস্তার পাশে অনেক গুলি গ্রাম । প্রত্যেকটিই পরিস্কার পরিছন্ন এবং কয়েকটিকে দেখে মনে হল যেন হস্তশিল্পের প্রদর্শনী । কয়েকটি গ্রামের সামনে দেখলাম মন্দির ও গ্রামের রক্ষাকারী দেবতার মূর্তি। এই গ্রাম গুলিতে অনেক উন্নতমানের শিল্পী ও কারিগরের বাস । বালির বেশীর ভাগ দ্বীপপুঞ্জই হিন্দু প্রধান। হিন্দুধর্ম এখানকার সর্বাধিক প্রভাবশালী ধর্ম যা বালির সংস্কৃতির রূপরেখা নির্ধারণ করেছে। জনসংখ্যার নিরিখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা আশী শতাংশের ওপরে বাকী ইসলাম এবং কিছু খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী । বালিতে প্রায় কুড়ি হাজারেরও বেশি মন্দির আছে , প্রতিটি গ্রামে কমপক্ষে তিনটি মন্দির দেখতে পাওয়া যাবে- একটি গ্রামের প্রতিষ্ঠাতার, একটি গ্রামসুরক্ষার আত্মার জন্য এবং একটি মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে । বালিনিজ ধর্ম তার আচার আচরণের আতিশয্যের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। উৎসবের দিনে মন্দিরগুলিতে বেশ ভিড় জমে ওঠে , কলাপাতায় ভাত এবং বিভিন্ন ফল সামগ্রী নৈবেদ্য দেওয়া হয়। শুভ ও অশুভ শক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে অন্যান্য দিনেও নানা ধরণের নৈবেদ্য দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে দেবতা এবং অশুভ শক্তি উভয়কেই। ধর্মীয় আচরণের যথাযথ নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে ঐশ্বরিক ও পৈশাচিক শক্তি উভয়কেই সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা হয়। দেবতা এবং রাক্ষস উভয়ের উপস্থিতি তাই এদের জীবন যাপনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এই গ্রামগুলি ও প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে কখন যেন কিন্তামনিতে পোঁছে গেলাম।
কিন্তামনি একটি আগ্নেয়গিরি ।বাটুর লেক আগ্নেয় গিরি থেকে উদ্ভুত এক গহ্বর যেটা বর্তমানে এক সুন্দর লেকে পরিনত হয়েছে। অনেকে কিন্তামনি আগ্নেয়গিরিতে ট্রেকিং করতেও যায় এবং সেখান থেকে শান্ত লেক বাটুরের শোভা উপভোগ করে।মাউন্ট বাটুর একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি যার উদ্গীরণ মাঝে মাঝেই ঘটে। সর্বশেষ উদ্গীরণ ঘটেছিল ২০০০ সালে।বালিনিরা এই বাটুর লেককে এক পবিত্র স্থান বলে বিশ্বাস করে। এটা বালির সবচেয়ে চওড়া লেক। এই স্বচ্ছ লেকের নীল জলকে বেষ্টিত করে আছে মাউন্ট বাটুর এবং আবাং পর্বত শ্রেণী। এই লেক ১৯৭১ সালে মাউন্ট বাটুর আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল – সেই সময় অনেক প্রাণহানি এবং প্রচূর সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল যার মধ্যে বালির সবচেয়ে বড় মন্দিরটিও ছিল। পরে এই মন্দিরটি অন্য স্থানে পুনর্নির্মাণ করা হয়। আমরা একটা রেস্তরাঁয় গেলাম দ্বিপ্রহরিক আহারের জন্য। দোতলার টেবিলে বসে খেতে খেতে আমরা এখানকার অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করলাম। কাঁচের জানলা দিয়ে দেখছি সামনে ধু ধু প্রান্তর – কালো কালো প্রস্তরীভূত লাভা, আর সামনে মাথা উচু করে তার জ্বালা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিরাট আগ্নেয় গিরি, পাশে পাহাড় পরিবেষ্টিত বাটুর লেকের নীল জলরাশি। কোথা দিয়ে যে সময় কেটে গেল বুঝতে পারলাম না। এখান থেকে উবুদ হয়ে আমরা হোটেলে ফিরে যাবো।
উবুদ বালির সাংস্কৃতিক প্রাণস্পন্দন এবং সেই ভাবমূর্তি আজও বিদ্যমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দ্বীপ অনেক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যায় এবং উবুদ উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাপানিরা শহর আক্রমণ করে এবং পরবর্তী কালে স্বাধীনতার জন্য ডাচদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস সংগ্রাম শুরু হয়। ইন্দোনেশিয়া তার স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৫ সালে এবং প্রায় ২০ বছর অনিশ্চিত থাকার পর ১৯৭০-এর দশকে উবুদে পর্যটন পুনরায় শুরু হয় যখন ব্যাকপ্যাকার এবং হিপিরা নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধানে এখানে আসতে শুরু করে। তারপর থেকে দর্শকদের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ শুরু হয়েছে। বালির প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য ও জনগণের আতিথেয়তা দ্বারা তারা আকৃষ্ট হয়েছে ও এখানকার শিল্প, সংস্কৃতি এবং ধর্ম তাদের মুগ্ধ করেছে। উবুদ প্রাসাদটি ছিল রাজপরিবারের সরকারী বাসভবন।উবুদ প্রাসাদটি বর্তমানে ভ্রমনপিপাসু দের মধ্যে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।প্রায় প্রতি রাতে বিখ্যাত বারং নাচটি এখানকার নাট মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রাসাদ তৈরির সময় সমগ্র বালি থেকে শিল্পী এবং কারিগররা এখানে এসেছিল এবং প্রাসাদ তৈরির পর এখানকার সংলগ্ন অঞ্চল সুকাওয়াতিতে তারা বসতি স্থাপন করে। ওখানে গেলে এখনও অনেক কারিগরদের গ্রাম দেখতে পাওয়া যায় যেখানে তারা তাদের হস্তশিল্পের সম্ভার নিয়ে বসেছে বিক্রীর জন্য।ডেনপাসার থেকে উবুদ পর্যন্ত বালিতে হাজার হাজার উপহারের দোকান রয়েছে যেখানে স্থানীয় লোকেদের তৈরি বিভিন্ন রকম বস্ত্র শিল্প, বাটিকের কাজ, সূক্ষ্ম হস্তশিল্পের পণ্য সহজলভ্য।
ঋষি মারকান্য তাঁর একদল শিষ্য সমেত এখানে প্রথমে আসেন এবং এই স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উবুদের ক্যাম্পুহানে দুই নদীর সংযোগস্থলে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এর পর বালিতে তিনি আরও অনেকগুলি মন্দির নির্মাণ করেন। তিনিই প্রথম এখানকার কৃষিজীবী মানুষদের পাহাড়ী অঞ্চলে ধাপচাষের পদ্ধতি শেখান।‘বাঞ্জার’ অর্থাৎ পঞ্চায়েতের মত প্রতিষ্ঠানও তাঁর সময়েই প্রথম শুরু হয়েছিল। জাভার সঙ্গে বালির সুসম্পর্ক বহুদিনের। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দীতে মাজাপাহিত রাজ্যের পতনের পরে দলে দলে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ জন জাভা ছেড়ে বালিতে এসে বসতি স্থাপন করে। বালিনিরা বিশ্বাস করে যে পর্বতমালা হচ্ছে দেবদেবী, পূর্বপুরুষ এবং যে আত্মারা মোক্ষ লাভ করেনি তাদের বাসস্থান।এই দেব-দেবী ও পূর্বপুরুষরা নৈবেদ্য গ্রহণ এবং বিনোদন উপভোগ করার জন্য মন্দিরের অনুষ্ঠানের সময় মাঝে মাঝে পৃথিবীতে নেমে আসেন। যখন মানুষ পৃথিবীতে পুনর্জন্মের জন্য প্রস্তুত হয়, তখন তারা উপরের পর্বতগুলি থেকে সরাসরি পৃথিবীতে নেমে আসে। এই কারণেই পর্বতমালা পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। বালির প্রধান মন্দির হচ্ছে পুরা বেসাকি যা আগ্নেয় গিরি গুনুং আগুং এর পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত । বালিনিদের ধর্ম অনুসারে পবিত্র মন্দিরের চেয়ে উপরে কেউ দাঁড়াতে পারে না, বিশেষত যখন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি পালন করা হয়। তাই ট্রেকার বা পর্বতআরোহীদের এই পাহাড়ে উঠতে গেলে প্রথমে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।
বালিনিরাও তাদের ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মত মতো ব্রহ্মা, উইসনু (বিষ্ণু) এবং সিওয়া (শিব) এই ত্রিমূর্তিতে বিশ্বাসী । মহাভারত এবং রামায়ণ বালিতে সমানভাবে জনপ্রিয় এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত ও তাদের পরিবার ও সমাজ ধর্মের চারপাশে নিয়ত আবর্তিত। আগেই বলেছি যে অনেক গুলি পরিবার মিলে যৌথ ভাবে কাজ করার জন্য সমবায় সমিতি বা পঞ্চায়েতের মত প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলিকে ‘বাঞ্জার’ বলে। এইরকম গ্রামীণ গৃহ বা ‘বালি বাঞ্জারে’ যৌথ রান্নাঘর, উপাসনাস্থল, পারিবারিক মিলন স্থল এবং মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা আছে। গামেলান অর্কেস্ট্রা এবং নৃত্যকলা শেখানোর ব্যবস্থাও এখানে আছে যাতে তরুন সম্প্রদায় স্থানীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।গেমলান অর্কেস্ট্রা বালিনি সংগীতের ভিত্তি এবং বালিনি সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। এই অর্কেস্ট্রা মেটালোফোন, জাইলোফোন, ড্রাম, বাঁশি, কাসর, ঘন্টা সহযোগে এক সম্মিলিত সৃষ্টি এবং তার পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে যতক্ষণ না অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। বালিনিদের যেকোনো সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীতে নৃত্য একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।বিশেষ শুভ অনুষ্ঠান গুলিতে ‘বারং’ নাচ নৃত্যের তালে তালে পরিবেশিত হয় এবং তা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়কে সূচিত করে। শুভ শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে ‘বারং’ এবং মন্দটির পরিচয় বহন করে ‘রংদা’ নামক ডাইনী। প্রায় এক হাজার বছর ধরে, স্থানীয় বালিনিরা হিন্দু ধর্মের এক বিশেষ রূপ অনুসরণ করে চলেছে যা ‘আগামা হিন্দু ধর্ম’ নামে পরিচিত। প্রাচীন কালের হিন্দু গুরুদের সঙ্গে নিয়ে আসা ধর্মের প্রত্যক্ষ অনুসরণকারীদের বংশধরদের মাধ্যমে এই ধর্ম যুগযুগ ধরে বহতমান।
বালি যেহেতু নিরক্ষীয় অঞ্চলের 8 ডিগ্রি দক্ষিণে অবস্থিত, জলবায়ুর দুটি প্রধান স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এখানে লক্ষ্য করা যায়- শুকনো মরসুম এবং মৌসুমী বৃষ্টির মরসুম – সাথে সারা বছর ধরে ক্রান্তীয় উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া। বালির আগ্নেয়গিরি গুলির আশেপাশের কয়েকটি অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,০০০ মিটার উপরে বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ রয়েছে। এখানে তুলনা মূলক ভাবে অনেক ঠান্ডা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের তুলনায় বৃষ্টিপাত বেশী হয়।বালিতে রাস্তায় চলার জন্য চালকের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ প্রয়োজন – সেটি হ’ল ধৈর্য। যদিও জনবহুল অঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল। তবুও কোনো কোনো সময়ে ভালো ট্রাফিক জ্যাম হতে পারে। ধর্মীয় শোভাযাত্রাগুলি প্রায়শই পুরো রাস্তাটি ধরে চলে তাই কোনও মিছিলের পিছনে পড়লে সে অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হবেনা। রাস্তার পাশে রামায়ণ, মহাভারত এবং অনেক পৌরাণিক চরিত্র নিয়ে তৈরি মূর্তি লক্ষ করা যায়।
কুটা সর্বাধিক পরিচিত একটি সৈকত। বালির সাদা সৈকত ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় গন্তব্যস্থল। বিভিন্ন ধরণের ওয়াটার স্পোর্ট গুলি যেমন ব্যানানা বোট রাইডিং, প্যারাসেলিং এবং জেট স্কিইং এগুলি খুবই জনপ্রিয় । এছাড়া সাঁতার কাটা বা নির্জন সৈকতে রোদ উপভোগ করা এসব তো আছেই। তানজুং বেনোয়া কুটার দক্ষিণে একটি উপদ্বীপ । এখানকার সুন্দর সমুদ্র সৈকত এবং বিভিন্ন জলক্রীড়ার জন্য ভ্রমন কারীরা আকৃষ্ট হয়ে এখানে আসে ।এখানেও স্কুবা ডাইভিং, প্যারাসেলিং এবং স্নরকেলিং খুব জনপ্রিয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক ক্রূজ টার্মিনাল, যেখানে দেশবিদেশ থেকে ক্রূজের জাহাজ এখানে আসে ট্যুরিস্টদের নিয়ে। এই সুন্দর সৈকত দেখে আমরা চললাম উলুওয়াতুর দিকে।
উলুওয়াতু মন্দির একটা প্রায় ২৫০ ফুট উঁচু ক্লিফ বা পাথরের পাহাড়ের চূড়ার পাশে অবস্থিত। এক জাভানীজ সন্ন্যাসী একাদশ শতাব্দীতে এই মন্দিরটি সংস্কার করে পুনর্নির্মাণ করেন। কথিত আছে পরে আর একজন সন্ন্যাসী তপস্যা করে এখানে মোক্ষ লাভ করেন। সেই কারনে মন্দিরটি ট্যুরিস্ট ছাড়াও স্থানীয় মানুষদের মধ্যেও খুবই জনপ্রিয় – এখানে রোজ অনেক পূন্ন্যার্থীরা আসেন পূজা দিতে। আমরা টিকিট কাউন্টারে টিকিট কাটার পর বলা হল যে মন্দিরে ঢুকতে হলে কোমরে একটা কাপড় জড়িয়ে ঢুকতে হবে – সেই মত আমাদের একটা করে রঙ্গীন সিল্কের কাপড় দেওয়া হল। আর সেই সঙ্গে একটা সাবধানবাণী জানিয়ে দেওয়া হলো যে এখানে খুব বাঁদরের উৎপাত আছে- কাজেই সবাই যেন তাদের জিনিষপত্র সামলে রাখে। সেই সাবধানবাণী যে আমাদের পক্ষে এতটাই প্রাসঙ্গিক হবে তা পরে বুঝেছিলাম। পাথরের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে আমরা ক্লিফের চূড়ায় এসে পৌঁছলাম। এখান থেকে নীচের ঘন নীল সমুদ্র দেখতে খুবই সুন্দর লাগছিল। এখানে মন্দির দেখার পর বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম ওপরে। আমাদের গাইড টিকিট কাউন্টারে গেলো টিকিট কাটতে। সন্ধে বেলায় উলুওয়াতু মন্দির সংলগ্ন একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার বা খোলা স্টেডিয়ামে ‘কেচাক’ নৃত্যটি মঞ্চস্থ হবে।হাতে অনেক সময় আছে ।
আমরা নীচের দিকে চারিদিকে গাছে ঘেরা একটা পার্কের মত জায়গা আছে সেখানে বসে সময় কাটাবো মনস্থ করলাম। আমার স্ত্রী পাথরের সিঁড়ির দেয়াল ধরে সন্তর্পণে নীচে নামছিল। হঠাৎ কানের কাছে টান লাগলো। মুহূর্তের মধ্যে দেখলো চশমা উধাও – আর পাথরের দেয়ালের উপর বসে একটা বাঁদর নিবিষ্ট মনে চশমার ডাঁটি চিবিয়ে চিবেয়ে খাচ্ছে। তারপর কি মনে করে চশমাটা নীচে খাদের দিকে ছুঁড়ে মারলো। এবারে সাবধানবাণীটি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলাম। তখনো জানিনা আরও কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। নীচে নেমে গাছে ঘেরা লনের ওপরে বসলাম। বাঁদররা তাদের কীর্তিকলাপ দেখিয়ে চলেছে। একজন বিদেশীর সানগ্লাস তুলে নিয়ে গাছের ডালে গিয়ে বসল। সে তার আধ খাওয়া কোকোকোলার বোতলটা ছুঁড়ে মারতে মুহূর্তের মধ্যে বাঁদরটা চশমাটা ছুঁড়ে ফেলে বোতল টা নিয়ে গাছের মগডালে বসে চোঁচোঁ করে খেয়ে ফেললো। বুঝলাম ব্ল্যাক মেল করে খাবার বাগানো এদের ধান্দা। এই ভাবতে ভাবতেই মাথার পিছনে একটা টান অনুভব করলাম – গাছের শাখা থেকে নেমে একটি শাখামৃগ মুহূর্তের মধ্যে আমার চশমাটা নিয়ে হাওয়া। দেখলাম আমার দিকে ভেংচাচ্ছে আর মাঝে মাঝে চশমাটা দেখছে। আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যাগ থেকে কিছু বিস্কুট বার করে ছুঁড়ে দিলাম – চশমাটা লনের উপর ফেলে রেখে বিস্কুটের দিকে দৌড়ে গেলো বাঁদরটা। আমি দৌড়ে গিয়ে চশমাটা হস্তগত করলাম।
শো শুরু হতে আর আধ ঘন্টা মতো বাকী আছে । আমরা চললাম স্টেডিয়ামের দিকে। ‘কেচাক’ নৃত্য ও ‘আগুন-নৃত্য’ বালির সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ও তার স্বকীয় কৃষ্টির পরিচায়ক। ‘কেচাক’ নৃত্য রামায়ণের কাহিনী নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আর সূর্যাস্তের পরে শুরু হয় আগুন-নৃত্য। একটু বাদে শুরু হল নৃত্য অনুষ্ঠান – একদল নর্তক ঊর্ধ্ববাহু হয়ে মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে ‘চাক-চাক-চাক’ আওয়াজ করছে যেন কোনও অতিপ্রাকৃত শক্তি ভর করেছে তাদের উপরে। রাম, লক্ষণ, সীতা , রাবণ , হনুমান সব কটি চরিত্রই সুন্দর ভাবে দর্শকদের মন জয় করেছে –বিশেষ করে শেষ চরিত্রটি। এই অবিস্মরণীয় মুহুর্তগুলি যখন উপভোগ করছি তখন বালির এই বিখ্যাত নৃত্যের সাথে প্রকৃতির মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল আর একটি জাগতিক দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য। দিগন্তের উপরে সূর্য ধীরে ধীরে ভারত মহাসাগরের ওপর বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। অনুষ্ঠানটির শেষ পর্যায়ে আগুন জ্বালানো হয় এবং তার সঙ্গে নৃত্য অনুষ্ঠান চলে। প্রাম্বানানের রামায়ণ ব্যালের মত এটা অতটা মনগ্রাহী হয়নি, কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী নতুন আঙ্গিকের নৃত্য উপভোগ আমাদের কাছে এক অন্য অভিজ্ঞতা।
পরের দিন সকালে দেনপাসার শহরে সিটি ট্যুর। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বজ্রসন্ধি স্মৃতি স্তম্ভ ও মূল ভবন উতামা মণ্ডল। বজ্রসন্ধি স্মৃতিস্তম্ভ ইতিহাস জুড়ে বালিনীয় জনগণের সংগ্রামের স্মরণে তৈরি একটি স্মৃতিস্তম্ভ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ঠিক পরে, ১৯৪৫ সালের ১লা আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সোয়েকার্নো দেশটির স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন ।তবে দেশবাসীদের এই আশা আকাঙ্খার কথা ডাচদের বোঝাতে দীর্ঘ চার বছর সময় লেগেছিল । শেষ পর্যন্ত তাদের প্রত্যয় হয় যে তারা আর বালির উপরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ডাচরা শেষ পর্যন্ত ১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল।স্মৃতিস্তম্ভটি বালি দ্বীপের ডেনপাসারে অবস্থিত বালি গভর্নরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত। স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয় এবং ২০০৩ সালে রাষ্ট্রপতি মেগাবতী সুকারনোপুত্রি এর উদ্বোধন করেন।মূল ভবন উতামা মণ্ডল তিন তলা বিশিষ্ট। নিচতলায় প্রশাসনিক কক্ষ, একটি গ্রন্থাগার এবং প্রদর্শনী হল রয়েছে। আর রয়েছে একটি সংরক্ষিত জলাশয় ও ফোয়ারা । দোতলায় ৩৩টি মিনিয়েচার ত্রিমাত্রিক মডেল রয়েছে, যা জাকার্তার জাতীয় মিউজিয়ামের প্রদর্শনের মতই কিন্তু মুলতঃ বালিনীয় জনগণের সংগ্রামকে প্রতিফলিত করেছে। বালিনীয় রাজ্য, হিন্দুধর্মের প্রবর্তন, মাজাপাহিত যুগ, ডাচ ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামসহ বালিনীয়দের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। তিনতলায় একটি ধ্যান কক্ষ আছে – এখান থেকে ডেনপাসার শহরটির সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।
দেনপাসার থেকে আমরা গেলাম তানা লট। তানা লট বলতেই চোখে ভাসে খাড়া পাহাড়ের চুড়ায় একটি মন্দির – সামনে নীল ভারত মহাসাগর তার শুভ্র সফেন তরঙ্গমালা নিয়ে প্রবালের প্রাচীরে আছড়ে পড়ছে আর নীচে পাথুরে সৈকতের উপরে সমুদ্র দেবতার উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি মন্দির যার পাহারায় রয়েছে এক সাপ অতন্দ্র প্রহরীর মত । এই মন্দিরটি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরী হয়েছিল। প্রতিদিন অনেক পুণ্যার্থীরা এখানে আসে পূজো দিতে। আমরা যখন মন্দির দর্শনে গেলাম তখন পুরোহিত কপালে চাল আর চন্দন মেশানো টিকা লাগিয়ে দিল আর কানে গুঁজে দিলো একটা চাঁপা ফুল। অনেকগুলো পাথর টপকে মন্দিরের কাছে পোঁছতে হয় – মন্দির সংলগ্ন পাথরের দেওয়ালে সমুদ্রের ঢেউ নিরন্তর আছড়ে পড়ছে। জোয়ারের সময় মন্দিরে যাবার কোনো পথও খোলা থাকেনা। সমুদ্র সৈকতের পাশে একটি ধাবায় আমরা দ্বিপ্রাহরিক আহার সারলাম। গোল ফুটবলের সাইজের এক ডাব খেলাম – যেমন মিষ্টি তার জল তেমনি পরিমানে অনেক – খেয়ে শেষ করা যায়না।
তানা লট কথাটির বালিনীজ ভাষায় অর্থ হচ্ছে সমুদ্রের মধ্যের জমি। উপরের মন্দিরটি পাড় সংলগ্ন, সমুদ্রের দিকে এগিয়ে আসা একটি উঁচু পাথরের উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের ক্রমাগত আঘাতে পাথরের নীচের অংশ ক্ষয় হয়ে এই রকম রূপ ধারণ করেছে। সন্ধেবেলায় এই মন্দিরের পিছনে সূর্যাস্তের দৃশ্যটি খুবই সুন্দর শুনেছি – আমরা আর ততক্ষণ অপেক্ষা করলাম না কারণ আমাদের ফিরতে দেরী হয়ে যাবে। হোটেলে ফেরার পথে দেখলাম আকাশে থালার মত চাঁদ উঠেছে । আগের দিন ছিল বুদ্ধ পূর্ণিমা। জ্যোৎস্না প্লাবিত পথ দিয়ে গাছপালা আর গ্রামের পাশ দিয়ে আমরা ফিরে চললাম শহরের দিকে। ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রমনের সুখ স্মৃতি নিয়ে এবারে দেশে ফেরার পালা। পরের দিন দুপুর বেলায় ফ্লাইট – সিঙ্গাপুর হয়ে কোলকাতায় ফিরবো।
কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যঃ
কেন যাবেন
অত্যাশ্চর্য সৈকতের অন্তহীন তালিকা সম্ভবত ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গে যাওয়ার সবচেয়ে সুস্পষ্ট কারণ। এখানকার প্রতিটি সৈকতেরই নিজস্ব আকর্ষণ রয়েছে ।বালিতে পর্যটকরা সুন্দর কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন যেমন তেগালালং ধানের ক্ষেত, মাউন্ট বাতুর, লেক বেরাটান, তানা লট এবং উলুওয়াতু মন্দির যা অবশ্যই দেখার মতো। অত্যাশ্চর্য সৈকত এবং চমকপ্রদ মন্দিরের বাইরে, বালিতে কার্যত সব ধরণের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে সবুজের সমারোহ, মনোরম হ্রদ, সুন্দর জলপ্রপাত, ধাপে ধাপে নেমে আসা ধানের ক্ষেত, ফুলের বাগান, প্রবাহিত পবিত্র নদী এবং গোপন গিরিখাত সবই দ্বীপের ল্যান্ডস্কেপকে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়।
তবে বালির বৈশিষ্ট্য তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চেয়েও অনেক গভীরে – তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে নিহিত। বালিনীরা সারা বছর ধরে অনেক অনুষ্ঠান উদযাপন করে, স্থানীয়রা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, ধর্মীয় আচার পালন করে যার অনেকগুলি কৌতূহলী পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন। বালিনীরা আধ্যাত্মিক মনোভাবাপন্ন – প্রধানত হিন্দু, এবং তাদের গ্রামগুলি একটি ছোট মন্দির দিয়ে সজ্জিত, যেখানে তারা প্রতিদিন প্রার্থনা করে। বালির মন্দিরগুলি অবশ্যই দ্রষ্টব্য। এছাড়া দ্বীপটি তার অনন্য ইন্দোনেশিয়ান খাবারের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় খাবারের স্টল থেকে শুরু করে নতুন এবং আধুনিক পশ্চিমা রেস্তোরাঁ পর্যন্ত সব রকম স্বাদের জন্য উপযুক্ত খাবার নিয়ে পর্যটকদের সামনে হাজির।
কোন সময়ে যাবেন
এপ্রিল থেকে অক্টোবর বালি ভ্রমনের প্রকৃষ্ট সময়।
কি ভাবে যাবেন
কোলকাতা থেকে বালি পর্যন্ত বিমান ভাড়া আনুমানিক ২২০০০/-(এক দিকে)
কোথায় থাকবেন
Risata Bali Resort and Spa. Jalan Kartika Plaza, Kuta, Kabupaten, Badung, Bali -80361, Indonesia. আনুমানিক ভাড়া দিন প্রতি ২৫০০/- ব্রেকফাস্ট সমেত।
এছাড়া কুটা অঞ্চলে বিভিন্ন বাজেট অনুযায়ী অনেক ভাল হোটেল পাওয়া যাবে।
অন্যান্য খরচ
কেচাক ড্যান্স এন্ট্রি ফি মাথা পিছু ৬০০/-, উলুওয়াতু মন্দিরের এন্ট্রি ফি মাথা পিছু ১৬০/- , তানা লট মন্দিরের এন্ট্রি ফি মাথা পিছু ৪০০/-
Leave a Reply