রাশিয়ার সেকাল ও একাল

প্রথম পর্বঃ

স্থান- মস্কো সময়- জুন-ডিসেম্বর ১৯৭১ যাত্রীগণ- দেবাশিস দাশগুপ্ত ও সহকর্মীরা

দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বঃ

স্থান সেন্ট পিটারসবার্গ, মস্কো সময়- অগাস্ট ২০১৯ যাত্রীগণ- দেবাশিস দাশগুপ্ত ও মণিদীপা দাশগুপ্ত

লেখা ও ফটো – দেবাশিস দাশগুপ্ত

প্রথম পর্ব

যেকোনো দেশে তা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন যদি পঞ্চাশ বছরের আগের আর পরের চিত্রটা তুলনা করি তাহলে একটা বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করবো। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে সেদেশটা যদি পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন হয় তবে এই পরিবর্তন টা স্বাভাবিকের থেকে যে কিঞ্চিৎ বেশীই হবে তাতে সন্দেহ নেই.।১৯৭১ এর সেই প্রথম যাত্রা আর তারপরে ২০১৯ এ আবার এখানে আসা এর মধ্যে ভল্গা নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। আমার চোখে দেখা সেই পরিবর্তন নিয়েই এই প্রতিবেদন।

আমাদের দেশের দিকে পঞ্চাশ বছর আগে ফিরে তাকালে ১৯৭১ এর দিনগুলি মনে পরে। রাজ্য জুড়ে তখন এক ডামাডোল চলছে। এক দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্য দিকে প্রতিবেশী দেশ পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সাধারন লোকেদের উপর অত্যাচারের ফলে তারা দলে দলে এ দেশে চলে আসছে। এই নৈরাজ্যের বাতাবরণে শুনলাম যে আমাদের প্রায় চল্লিশ জনকে রাশিয়ায় যেতে হবে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য ৬-৯ মাসের জন্য। আমরা যেখানে কাজ করতাম সেই প্ল্যান্ট বা কারখানা রাশিয়ান কারিগরি সহায়তায় তৈরি হয়েছিল। সেই কারনে রাশিয়া যাত্রা। রাশিয়া তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে অন্য সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকের মধ্যে অন্যতম । ভারতের সঙ্গে তার খুবই বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক। ওখানে গিয়েও সেই পরিচয় পেলাম।

জুন মাসের এক সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে চেপে আমরা দিল্লি থেকে মস্কোর সিরিমিতিভো বিমান বন্দরে এসে নামলাম।এটাই ছিল আমাদের প্রথম বিদেশ যাত্রা। স্বাভাবিক ভাবে কিছুটা উত্তেজনা তো থাকবেই। সরকারী আনুষ্ঠানিক নিয়ম কানুনের পালা শেষ হলে তিন চারটে দলে ভাগ হয়ে আমরা এই সপ্তাহেই এখান থেকে বিভিন্ন প্ল্যান্টে চলে যাব প্রশিক্ষণের জন্য। এখানে রাত সাতটা আটটার মধ্যে ডিনার শেষ করার নিয়ম। আমরা হোটেলে খাওয়া দাওয়ার পরে এক্টু হাঁটতে বেরোলাম – দেখি সূর্যদেব তখনো আকাশে বিরাজমান। প্রায় রাত দশটায় সূর্যাস্ত হোল। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে চোখ ঢুলে আসছিলো। হোটেলে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙতে দেখি জানলা দিয়ে আলো আসছে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে ব্রাশ মুখে ঘরের বাইরের করিডরে পায়চারী করছি – দেখি রিসেপশনের কর্মচারীরা সবাই ঘুমে অচেতন। কেমন যেন সন্দেহ হলো। ঘরে ঢুকে ঘড়িতে দেখি রাত আড়াইটা – আবার জানলার পর্দা টেনে শুয়ে পড়লাম।

পরের দিন মস্কোর ভারতীয় দুতাবাসে গিয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম শেষ করলাম – আরও প্রায় তিন চারদিন লাগবে এখানে। এইসময়ে আমরা ঠিক করলাম মস্কোর যতটা পারা যায় দেখে নেওয়া। আমাদের গন্তব্যস্থান রেড স্কোয়ার, মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কভা নদী, স্টেডিয়াম, অস্তানকিনো টেলিভিশন টাওয়ার , VDNKh ইত্যাদি।

ক্রেমলিনের দুর্গ প্রাকারের নীচে রেড স্কোয়ারের পাশে সেন্ট বেসিল ক্যাথিড্রাল । সেখানে গিয়ে মনে হোল যেন রূপকথার পাতা থেকে উঠে এসেছে এই সৌধ – যেমন তার গম্বুজ গুলির গঠনশৈলী তেমনি তার রঙের বৈচিত্র্য। মঙ্গোলদের পরাজিত করার পর ষোড়শশতাব্দীতে তৎকালীন সম্রাট ইভান(চতুর্থ) এই জয় কে স্মরণীয় করে রাখতে এই সেন্ট বেসিল ক্যাথিড্রাল নির্মাণের আদেশ দেন। রেড স্কোয়ারের পশ্চিম প্রান্তে ক্রেমলিনের প্রাচীর ক্রেমলিন দুর্গকে শহর ও রেড স্কোয়ার থেকে আলাদা করে রেখেছে। প্রাচীন কালে এই রেড স্কোয়ার ছিল ব্যবসা বাণিজ্য ও দেখা সাক্ষাতের জায়গা। পরবর্তী কালে এই জায়গাতে বিশেষ বিশেষ দিনে যেমন মে দিবস বা অক্টোবর বিপ্লবের অনুষ্ঠানে প্যারেড হয়ে থাকে। ক্রেমলিন জারের আমল থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ক্রেমলিন হচ্ছে সরকারের কার্যনির্বাহী সদর দফতর।

একটি বড় ব্রোঞ্জের ঘন্টা দেখলাম এই চত্বরে সেটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল – প্রায় ২০০ টন ওজনের ২০ ফুট উঁচু এই ঘন্টা । জারের ঘন্টা নামে পরিচিত এটি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘন্টা। তৈরির প্রায় দুবছরের মধ্যে এক অগ্নিকান্ডে এর এক অংশ ভেঙ্গে যায়। এখানে একটা বড় কামানও দেখলাম যার নাম ‘জার কামান’ । তবে এই কামান থেকে কোন গোলা ছোড়া হয়নি কখনো। এই রেড স্কোয়ারের মধ্যেই লেনিনের দেহ সমাহিত আছে। এর ভিতরে ঢোকবার জন্য বিরাট লাইন দেখলাম। আমাদের হাতে সময়ও কম। তাই ঠিক করলাম পরের বার অর্থাৎ ফেরার সময় দেখে নেবো ।

মস্কভা বা মস্কো নদী শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে । নদী বরাবর গেলে সব দ্রষ্টব্য স্থান গুলি যেমন রেড স্কোয়ার , স্টেডিয়াম, মস্কো ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি দেখা যায়। রাতে এই দৃশ্য দেখতে অনুপম। অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মিখাইল লমনোসভ মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা করেন। এটাই রাশিয়ার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় । জ্ঞানের উৎকর্ষতা ও গবেষনার কেন্দ্রবিন্দু এই বিশ্ববিদ্যালয় সমগ্র বিশ্বকে উপহার দিয়েছে অনেক পণ্ডিত, জ্ঞানীগুণী ব্যাক্তি ও নোবেল জয়ীকে । জ্ঞানের এই পীঠস্থান এবং তার প্রধান স্থপতি লমনোসভকে মনে মনে প্রণাম জানালাম।

সেকালের মস্কোর ছবি দেখতে ক্লিক করুন

জাতীয় অর্থনৈতিক উৎকর্ষতা প্রদর্শনী বা VDNKh হচ্ছে একটা স্থায়ী প্রদর্শনী যার আরেক নাম হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের রাজপ্রাসাদ। ১৯৩৯ সালে এটি তৈরি হয়। গেটের মুখেই একটা ওবলিস্ক বা স্মারক দেখতে পাওয়া যায় যা স্পুটনিকের উৎক্ষেপণ এবং মহাকাশ বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৯৬২ সালে তৈরী করা হয়েছিল। প্রত্যেকটি প্যাভেলিয়নে এক একটা সোভিয়েত রিপাবলিকের শিল্পে, কৃষিতে, বিভিন্ন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উন্নতির নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে। এখানে অনেক সুসজ্জিত ফোয়ারা এবং স্ট্যাচু আছে তার মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে এক শ্রমিক পুরুষ ও যৌথখামারের নারীকর্মীর যৌথ মূর্তি এবং সৌহার্দ্য ফোয়ারা – যেখানে ষোলটি রিপাবলিকের নিজস্ব পোষাকে সুসজ্জিত নারীমূর্তি্রা ফোয়ারার চতুর্দিকে ঘিরে আছে। মহাকাশ প্যাভেলিয়ন ও মহাকাশচারীদের মিউজিয়াম দেখে তো আমরা মুগ্ধ। রকেটের ইঞ্জিন, স্পুটনিক, চন্দ্রযান লুনাখোদ, মহাকাশচারীদের পোশাক, চাঁদের মাটি -কি নেই সেখানে! এর থেকে সামান্য দূরে রয়েছে অস্তানকিনো টেলিভিশন টাওয়ার। লিফটে করে এর মাথায় ওঠা যায় – সেখানে একটা ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাঁ আছে।

দেখতে দেখতে আমাদের মস্কোয় থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। এবার আমরা যে যার কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হব। আমরা যাব মস্কো থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণের এক শিল্পনগরীতে- আমাদের দলে আছে ১০-১২ জন। সারা রাত ট্রেনযাত্রা শেষে অবশেষে আমরা গন্তব্য স্থলে পৌঁছলাম। কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম – সকাল ৮ টায় বাসে রওয়ানা দি্তাম আবার বিকেল ৫টায় ফিরে আসতাম। এছাড়া সপ্তাহে দুদিন সন্ধ্যা বেলায় রাশিয়ান ভাষা শিক্ষার ক্লাস হতো। এখানে আসার আগে মনে মনে ভয় ছিল কিরকম পরিস্থিতিতে পড়বো কে জানে। কিন্তু এখানে এসে সবার কাছ থেকে যে সহযোগিতা আমরা পেলাম তাতে মনেই হয়নি যে বিদেশে আছি। আমদের দলের সবাই একটা হোটেলে ছিলাম – অনেকটা কলেজ জীবনের হোস্টেলের মত। হোটেলটা যেখানে ছিল তার পাশেই একটা পার্ক আর একটা কম্যুনিটি সেন্টার ছিল।

মস্কোর অনেকটা দক্ষিণে হওয়ায় এখানকার জলবায়ু অনেকটা সহনশীল। এখানকার গরমকাল অর্থাৎ অগাস্ট মাসে তাপমাত্রা আমাদের দেশের মতোই। ডিসেম্বর- জানুয়ারীতে তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রী থেকে মাইনাস ৮-১০ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। সারাদিনে তাপমাত্রার এত তারতম্য ঘটে যে সকালে বোঝা যায়না যে দিনটা কেমন যাবে। অক্টোবর মাসের এক রবিবার রোদঝলমলে সকালে ওভারকোট ছাড়াই বেরিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে মেঘলা হয়ে গেল – তাপমাত্রা মাইনাস ৪ এ নেমে গেল। রাস্তায় ডিউটিরত পুলিশ বা মিলিশিয়া বলল হোটেলে গিয়ে ওভারকোট পড়ে এস। শুনলে হাসি পেতে পারে কিন্তু এখানে মিলিশিয়ারা ছিল আমাদের অভিভাবকের মতই। এই প্রসঙ্গে বলি যে রাত্রে খাওয়ার পরে অনেক সময় আমরা পাশের পার্কে হাঁটতে যেতাম। কিছু কিছু মাতাল সে সময় অতি উৎসাহে ‘ইন্ডিয়া’ ‘ইন্ডিয়া’ বলতে বলতে আমাদের দিকে আসতো আলাপ জমাবার জন্য। দূর থেকে মিলিশিয়া নজর রাখত এবং কাছে এলে ধমক দিয়ে তাদের সরিয়ে দিত।

আমরা যখন ওখানে ছিলাম তখন সেটা পুরোপুরি কম্যুনিস্ট শাসন। রাস্তা ঘাটে বড় বড় হোরডিং চোখে পড়তো যেখানে তাদের সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। হোটেলের প্রত্যেকটা ঘরে একটা সাউন্ড বক্স লাগানো থাকত যেখানে শুধু সরকারী প্রচার সম্প্রচারিত হত। আইন শৃঙ্খলার দিকে প্রশাসনের খুব কড়া নজর ছিল – লোকেও তা মেনে চলতো। একবার একটা রেস্তরাঁয় পার্টি হচ্ছিলো। সেখানে অসাবধানতা বশতঃ একজনের মানিব্যাগ হারিয়ে যায়। পরের দিন ওখান থেকে ফোন করে জানায় যে সেটা পাওয়া গেছে। সেই মানিব্যাগে সব কিছুই যথা স্থানে ছিল। আমি যেখানে কাজ করতাম সেই অফিসে কার্যোপলক্ষ্যে কিছু বাইরের লোক আসত।একদিন তাদেরই একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে একটা বিশেষ ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কেনার ইচ্ছা, কিন্তু এই শহরে পাচ্ছিনা সেটা কি তাদের শহরে পাওয়া যায়? শুনে সে বলল যে “আমি খোঁজ করে দেখবো, তবে তুমি যদি বিশ্বাস করে আমাকে টাকাটা দাও তবে আমি ক্যামেরা কিনে তোমাকে পাঠাবার ব্যাবস্থা করতে পারি।“ প্রায় মাস দেড়েক বাদে একজন লোক এসে আমাকে একটা প্যাকেট দিয়ে বলে যে “তোমার সাথে যার কথা হয়েছিল সে এটা পাঠিয়েছে।“ আমি তাঁকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর হাতে একটা চিঠি দিয়ে দিলাম। মনে মনে ভাবলাম যে একজন স্বল্প পরিচিত বিদেশীর জন্য কে এতটা করে?

সেই সময়কার সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুনের দুএকটা উদাহরণ এখানে দিলে আশাকরি সেটা অপ্রাসঙ্গিক হবেনা। এখানে স্কুল কলেজে গ্রীষ্মাবকাশ জুন মাস থেকে অগাস্ট পর্যন্ত। সেই সময় ছাত্র ছাত্রীরা গ্রামের যৌথ খামারে যায় চাষবাসের কাজে চাষিদের সাহায্য করবার জন্য। প্রতি শনিবার সবাইকে কম্যুনিটি সার্ভিস বা সমাজসেবার কাজে বাধ্যতামূলক ভাবে শ্রম দান করতে হয়। স্কুলের গণ্ডি পেরোবার পর বাধ্যতামূলক ভাবে সবাইকে মিলিটারি সার্ভিসে যোগদান করতে হয়। সব ছোট বড় দোকান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান,কলকারখানা ইত্যাদি সরকারী মালিকানার অধীনে। ভর্তুকি যুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা আছে সবার জন্য এবং তার পরিসর নির্ভর করে পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপর – তার পদ বা বেতনের উপর নয়। বাৎসরিক ছুটীর সময় থাকার জন্য অবকাশ গৃহের ব্যাবস্থা আছে – এবং সেটা সম্পূর্ণ বিনামূল্য়ে। সবার নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরীর অধিকার আছে। কোন কর্মক্ষম লোক বাড়ীতে বসে থাকতে পারবেনা। এছাড়াও অনেক নিয়ম থাকতে পারে যেগুলো আমার জানা নেই।এগুলির ভালোমন্দ নিয়ে এখানে আলোচনা করবোনা কিন্তু নিঃসন্দেহে তা অনন্য।

এখানে সিনেমা হলে আমরা মাঝে মাঝে সিনেমা দেখতে যেতাম – রাশিয়ান, ইংরেজি এবং অবাক হবার মত হলেও হিন্দিও। এখানে হিন্দি সিনেমা যথেষ্ট জনপ্রিয় – রাশিয়ান ভাষায় ডাব করা, কাজেই জনগণের বুঝতে কোনও অসুবিধা নেই। রাজ কাপুর এখানে ভীষণ জনপ্রিয়। একবার একটা হিন্দি সিনেমা দেখতে গেছিলাম ‘ফুল আউর পথ্থর’ রাশিয়ান ভাষায় ‘স্ভেতক ই কামেন’। নায়ক ছিল ধর্মেন্দ্র আর নায়িকা যত দূর মনে পড়ছে মীনা কুমারী। তাদের মুখে রাশিয়ান বাক্যালাপ শুনতে মন্দ লাগছিল না। হিন্দি সিনেমার দর্শকদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা এবং তাদের মধ্যে অনেকেই খুব আবেগপ্রবণ। তাই বিয়োগান্তক দৃশ্যে হলের মধ্যে মাঝেমাঝেই ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।

নভেম্বর মাসের ৭ তারিখ (বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) এখানে অক্টোবর বিপ্লব দিবস পালিত হয়। এটা এখানকার এক বড় উৎসব। তার আগে অক্টোবরের শেষের দিকে দিন কয়েকের জন্য সবাই মিলে বেড়াতে যাবো ঠিক হল। একটা দল যাবে কিয়েভে আর একটা যাবে লেনিনগ্রাদে (বর্তমান সেন্ট পিটারসবার্গে)। আমি ছিলাম প্রথম দলে – ভরোনেঝ, তুলা, ইয়াস্ন্যায়া পলিয়ানা হয়ে কিয়েভ। ভরোনেঝ এবং তুলা দুটিই ঐতিহাসিক শহর এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অনেক বেদনাদায়ক স্মৃতির সাক্ষী। তুলায় রাতে রেস্তোরাঁতে যখন খেতে ঢুকলাম তখন ব্যান্ডে বেজে উঠল ‘আওয়ারা হুঁ’ মিউজিক। রাজ কাপুরের জনপ্রিয়তা এখানে তখন তুঙ্গে। ইয়াস্ন্যায়া পলিয়ানা হচ্ছে লিও টলস্টয়ের জন্মস্থান। ওখানকার বাড়ীটাই এখন মিউজিয়াম। সেখানে ওনার ব্যবহৃত সামগ্রী, আসবাবপত্র, বইয়ের লাইব্রেরী, লেখার টেবিল এবং অনেক দুষ্প্রাপ্য ছবি সংরক্ষিত আছে। এই বাড়ীতে বসেই তিনি তাঁর দুই বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ার এন্ড পীস’ এবং ‘আনা কারেনিনা’ লিখেছিলেন। তাঁর বাড়ির চারদিকে অনেক গাছপালা এবং এক শান্তির পরিবেশ। জায়গাটার সঙ্গে আমাদের শান্তিনিকেতনের অনেক মিল খুঁজে পেলাম। ওনার সমাধিস্থলটি দেখলাম ফুলে ঢাকা একেবারে সাধারণ, আড়ম্বরহীন, ঘাসে ছাওয়া, ওক গাছ পরিবেষ্টিত।এখান থেকে আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল ছিল কিয়েভ। সেখানে আমরা দেখলাম সেন্ট সোফিয়া ক্যাথিড্রাল, বেশ কয়েকটি সুন্দর সুন্দর চার্চ এবং একটি মনাস্টেরি যার নীচে ক্যাটাকোম্ব আছে। সেখানে মৃত মঙ্ক বা সন্ন্যাসীদের দেহ মমী করে রাখা আছে। বেশ কয়েকটি ভাল ভাল মিউজিয়াম আছে এখানে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দ্নিপার নদী – হোভারক্রাফটে চেপে নদী ভ্রমণ হল। সব দেখা সাঙ্গ হলে আবার আমরা ফিরে এলাম আমাদের কর্মস্থলে।

ডিসেম্বর মাসে মাঝে মাঝেই বরফ পড়ে – পার্কের পাশে পাইনের বন বরফে ঢেকে গেছে। আমাদের এক স্থানীয় বন্ধু ছিল –সে একদিন বলল “তোমরা যদি চাও আমি তোমাদের স্কি করা শিখিয়ে দিতে পারি।“ এক রবিবার আমরা কয়েকজন স্কি এর সরঞ্জাম ভাড়া করে চললাম পাইন বনের দিকে। যতটা শিখলাম তার থেকে পড়লাম বেশী। ওই ঠান্ডায় ঘন্টা খানেক প্রাকটিস করে অবশেষে ক্ষান্ত দিলাম। শুকনো পাতায় আগুন জ্বালিয়ে হাত সেঁকা হল, চা তৈরী হল, সঙ্গে কিছু কিনে আনা সসেজ, কেক ইত্যাদি দিয়ে পেটপুজো হল।

এই সময় মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারত-পাকিস্থানের যুদ্ধের খবর আসছিল। পরে সুখবর এলো যে ভারত যুদ্ধে পাকিস্থানকে হারিয়ে দিয়েছে এবং নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলা দেশের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই ঘটনা যেমন আমরা নিজেদের মধ্যে উদযাপন করলাম তেমনি এখানকার লোকেরাও আমাদের অভিনন্দন জানালো।

আমাদের যাদের ট্রেনিং এর মেয়াদ ৬ মাস ছিল তাদের যাবার সময় প্রায় হয়ে এল। জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে এখানকার পাট চুকিয়ে দিয়ে আমরা মস্কোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। মস্কোতে তখন বেশ ঠান্ডা – তাপমাত্রা মাইনাস ১২ ডিগ্রী। রেড স্কোয়ারে লেনিনের মুসোলিয়াম দেখতে গেলাম ঐ ঠান্ডায়। বিদেশীদের জন্য নির্ধারিত লাইনে দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি ঢুকতে পারলাম। ভেতরে দেখলাম কাঁচের কফিনে লেনিনের দেহ শায়িত- যেন স্যুট, টা্ই,‌ জুতো পড়ে শুয়ে আছেন। বাইরে বেরিয়ে ‘চেঞ্জ অফ গার্ড’ দেখলাম- প্রতি ঘন্টায় গার্ডরা তাদের অবস্থান বদল করে এবং সেটা মুহূর্তের মধ্যে চোখের পলক পড়তে না পড়তেই ঘটে যায়।

আর দুটো জিনিস যা এখানে দেখলাম তার জুড়ি পৃথিবীর আর কোথাও মেলা ভার। একটা হচ্ছে মস্কোর মেট্রো আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে রাশিয়ান ব্যালে।মেট্রো স্টেশনের ভিতরে ঢুকলে মনে হয় যেন কোন আর্ট গ্যালারীতে এলাম।প্রত্যেকটা স্টেশন ভিন্ন ভিন্ন থিম নিয়ে তৈরী। আর ‘সোয়ান লেক’ ব্যালের কথা কি বলবো – যেমন ব্যালেরিনাদের নৃত্য শৈলী তেমনি চাইকোভস্কির অসাধারণ সিম্ফনি। আমরা বলশয় থিয়েটারের ব্যালকনিতে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মত তা উপভোগ করলাম। পরের দিন মস্কোকে বিদায় জানিয়ে আমরা দিল্লির বিমান ধরলাম।

দ্বিতীয় পর্ব

প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে পঞ্চাশ বছর আগে আমার দেখা সোভিয়েট ইউনিয়ন তথা রাশিয়ার চিত্রটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবারে আজকের দিনে কতটা পরিবর্তন দেখলাম – সেই রাশিয়ার কথা বলব। আমাদের নিত্য পরিবর্তনশীল জীবনের ওঠা পড়া ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের উপর কি প্রভাব ফেলে তা সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। সে আলোচনায় যাবনা এবং তার পারদর্শিতাও আমার নেই। আমি শুধু একজন দর্শকের চোখ দিয়ে যা দেখেছি তাই বর্ণনা করছি এখানে।

গ্লাসনস্ত বা উন্মুক্ততা এবং পেরেস্ত্রইকা বা পুনর্গঠনের দাবী নিয়ে ক্রমাগত যে ঢেউ উঠেছিল দেশ জুড়ে সেই আন্দোলনের প্রভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অচলায়তন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। সোভিয়েত ইউনিয়নের ছত্রছায়ায় থাকা ছোট ছোট দেশ গুলির মধ্যে অধিকাংশ দেশই চাইল স্বাধীনতা। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের মধ্য দিয়ে যে আলোড়নের সূচনা হয়েছিল ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে তা পরিনতি লাভ করে। পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তির একছত্র সাম্রাজ্য ১৫টা রিপাবলিকে বিভক্ত হয়ে গেল। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী রিপাবলিক হিসেবে আত্ম প্রকাশ করল রাশিয়া বা রাশিয়ান ফেডারেশন।

এই পরিবর্তনটা প্রাথমিক অবস্থায় রাশিয়ানদের পক্ষে কিন্তু খুব সুখকর হয়নি। এতদিনকার অভ্যস্ত সুরক্ষিত অর্থনীতি থেকে বাজার অর্থনীতিতে পরিবর্তনের ধাক্কা টা সামলাতে অনেক সময় লেগেছে। নব্বইয়ের দশকের প্রায় পুরোটাই তাদের লড়তে হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের সঙ্গে।এই সময় প্রায় সত্তর থেকে আশি শতাংশ প্রতিষ্ঠান ব্যাক্তিগত মালিকানায় চলে আসে।এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রচূর অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, মাফিয়া দের দৌরাত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইতিমধ্যে তেলের দাম পড়ে যাওয়ার ফলে রুবলের অবমূল্যায়ন ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে এক অর্থে এই অবমূল্যায়ন অর্থনীতির পক্ষে আশীর্বাদই হয়েছিল। নতুন শতাব্দী্র প্রথমে দেশের আর্থিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়। এই উন্নয়নের উপর ভর করে অনেক গুলি আর্থিক সংস্কার সম্পন্ন হয় যেগুলো যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছিল। এইসময় আবার তেলের দাম বাড়ার ফলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে তা যথেষ্ট সহায়ক হয়। বেশ কিছু কোম্পানি যেগুলির উপর অর্থনীতির উন্নয়ন বহুলাংশে নির্ভরশীল সেগুলি ২০০৪ থেকে ২০০৬ এর মধ্যে পূনর্জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকার অধিগ্রহণ করে। মাফিয়া চক্র দমনের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটে।

সোভিয়েত জমানার রাশিয়া থেকে বর্তমান রাশিয়ার এই রূপান্তরের সাক্ষী হতে দ্বিতীয়বার রাশিয়া যাবার পরিকল্পনা করলাম। এবারে শুধু আমরা দুজনেই যাব। দলগত ভাবে পরিচালিত ট্যুরে যে বাধ্যবাধকতা থাকে তার মধ্যে না গিয়ে একটু না হয় স্বাধীন ভাবেই বেড়ানো যাবে। আমরা প্রথমে যাব সেন্ট পিটারসবার্গ আর তারপরে মস্কো। এবারের প্রতিবেদনে সেন্ট পিটারসবার্গ কেমন দেখলাম সেটাই বলব।

সেন্ট পিটারসবার্গ আগে যাওয়া হয়নি- এই বারই প্রথম। সেন্ট পিটারসবার্গ হচ্ছে মস্কোর পরেই রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহর হচ্ছে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক পীঠস্থান। উইন্টার প্যালেস, হারমিটেজ মিউজিয়াম, কাজান ক্যাথিড্রাল, পীটারহফ প্যালেস আরো সব দ্রষ্টব্য জায়গা ভালভাবে ঘুরে দেখতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে- কিন্তু আমাদের হাতে সময় মাত্র চার দিন। আমাদের এখানে ট্যুর প্রোগ্রামে শুধু সিটি ট্যুর এবং ক্যানাল ট্যুর ছিল। কিন্তু এখানে এসে হারমিটেজ এবং পীটার হফ না দেখে ফিরে যাওয়াটা বোকামি হবে। সেই ভেবে আমাদের গাইড কে অনুরোধ জানালাম সে যদি কিছু ব্যবস্থা করে দিতে পারে। সেই মহিলা তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমাদের দুদিনেরই টিকিটের ব্যবস্থা করে দিল। তাকে অনেক ধন্যবাদ জানালাম কারণ এগুলো আগেই অন লাইনে বিক্রী হয়ে যায়। আমাদের পক্ষে নিজেরা এই টিকিট কাটা সম্ভব হতনা।

এই শহর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়েছে- যেমন পেত্রোগ্রাদ (১৯১৪-২৪), লেনিনগ্রাদ (১৯২৪-১৯৯১) এবং বর্তমানে সেন্ট পিটারসবার্গ বা রাশিয়ান ভাষায় সাঙ্কট পিতারবুরখ। এই শহরটি রাশিয়ার একেবারে উত্তর পশ্চিম প্রান্তে বাল্টিক সাগরের পাশে যেখানে নেভা নদী গালফ অফ ফিনল্যান্ডে গিয়ে মিশেছে। ১৯১৭ সালে এই শহর থেকেই বলশেভিক বিপ্লবের সূচনা হয়। আবার এই শহরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রায় দু বছরের উপরে জার্মান ফৌজ দ্বারা অবরুদ্ধ থেকেও দুর্জয় প্রতিরোধ ও অসাধারণ মানসিক শক্তির পরিচয় দিয়েছে । ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যে, খাদ্য ছাড়া দিনের পর দিন জনগণ অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের শিকার হয়েছে। রাশিয়ার ইতিহাসের পাতায় পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে আছে এই ঐতিহাসিক শহর সেন্ট পিটারসবার্গের নাম।

রাজধানী হবার প্রতিযোগিতায় মস্কোর সঙ্গে সেন্ট পিটারসবার্গের নাম অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত হয়ে আছে।১৭১২ সালে পিটার দি গ্রেট রাজধানী মস্কো থেকে এই শহরে স্থানান্তরিত করেন। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাব্দী ধরে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল সেন্ট পিটারসবার্গ। অক্টোবর বিপ্লবের পরবর্তী কালে ১৯১৮ সালে লেনিন আবার বহিঃশক্তির আক্রমণের ভয়ে রাজধানী মস্কোতে স্থানান্তরিত করেন। পূর্বতন জার পিটার দি গ্রেট (প্রথম) যুদ্ধে সুইডেনের রাজাকে পরাজিত করার পর এই শহরের পত্তন করেন।বাল্টিক সাগরের উপর অধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্য সেন্ট পিটারের নামানুসারে এই শহরের স্থাপনা করা হয়। নাম রাখা হয় সেন্ট পিটারসবার্গ। এই শহরের প্রথম নির্মাণ নেভা নদীর পাড়ে পিটার ও পল দুর্গ। এই সময়কার প্রায় সব বিল্ডিংই পাথরের তৈরি – দেশ বিদেশ থেকে শ্রমিকরা এসেছিল এই কাজের জন্য। পিটার দি গ্রেট ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, বিজ্ঞানী, জাহাজ নির্মাতা ও ব্যবসায়ীদের এখানে ডেকে আনেন। এইসব অভিবাসী শিক্ষিত ও পেশাদারীদের উপস্থিতিতে এই শহর একটা কসমোপলিটান বা বিশ্বজনীন চেহারা নেয় যেটা মস্কো বা রাশিয়ার অন্য কোন শহরে দেখা যায়নি।

এখানকার ইটালিয়ান, ফ্রেঞ্চ এবং ডাচ স্থাপত্য শৈলীর মধ্যে নিও ক্লাসিকাল, বারোক ও শহুরে স্থাপত্যের সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়।পিটার দি গ্রেট সমসাময়িক পুরনোপন্থী রক্ষনশীল নোবলম্যানদের তুলনায় এতখানি দূরদৃষ্ট সম্পন্ন ছিলেন যে তাঁর চিন্তা এবং ভাবধারা অন্যরা সম্যক ভাবে উপলব্ধিই করতে পারেননি।সেই কারনে তিনি অন্যদের বিরাগভাজন হন এবং মস্কো ও রাশিয়ার অন্যান্য শহরের আধুনিকীকরণের জন্য তাঁর যে পরিকল্পনা ছিল তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। ‘ইয়োরোপের জানালা’ হিসেবে খ্যাত এই শহর ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর ও পিটারের নৌবাহিনীর সদর দফতর। ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে তিনি যখন ভ্রমন করতেন তখন সেখানকার চিত্তাকর্ষক বিষয় গুলি তাঁকে অনুপ্রাণিত করত। তারই ফলশ্রুতি শহর পরিকল্পনায় তার বাস্তবায়ন। যেমন ভেনিস ও আমস্টারডামের নৌকা পরিবহণ তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল শহরের খাল গুলিকে নৌপরিবহনের কাজে লাগাবার জন্য। প্যারিসের উপকন্ঠে অবস্থিত ভার্সাই প্যালেসের অনুকরণে তিনি তাঁর রাজপ্রাসাদ পিটারহফ তৈরী করেন শহর থেকে কিছু দূরে নেভা নদীসংলগ্ন বাগানের মধ্যে।

হারমিটেজ মিউজিয়াম পূর্বে রাশিয়ান সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞীদের রাজপ্রাসাদ ছিল।১৭৬৪ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাজ্ঞী ক্যাথারিন দি গ্রেট এক বার্লিনের ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বহু শিল্প কলা সামগ্রী অধিগ্রহণ করেন যা তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ হিসেবে সংরক্ষিত ছিল। পরে পরবর্তী সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীদের পৃষ্ঠপোষকতায় তার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। আনুমানিক ৩০ লক্ষ শিল্প কলার নিদর্শন উইন্টার প্যালেস এবং তৎসংলগ্ন প্রাসাদ গুলির ১২০ টা বিভিন্ন ঘরে সংরক্ষিত আছে। প্যারিসের লুভ্যর মিউজিয়ামের পর এটাই হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ মিউজিয়াম। হিসেব করে দেখা গেছে যে প্রতিটি শিল্প নিদর্শনের সামনে এক মিনিট করে দাঁড়ালে প্রতিদিন আট ঘন্টা সময় ব্যয় করেও ১৫ বছরের বেশী সময় লাগবে সব কিছু দেখতে। সেখানে আমরা সময় ব্যয় করছি মাত্র তিন ঘন্টা – এ যেন বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন । লুভ্যরেও আমার এই অবস্থা হয়েছিল। তবে আমরা তো আর শিল্পকলার বিশেষজ্ঞ নই, কাজেই এই স্বল্প পরিসরের মধ্যেই এই বিশাল শিল্প কীর্তির যথাসম্ভব রসাস্বাদন করা ছাড়া আর উপায় কি? এখানকার বিখ্যাত নিদর্শন গুলির মধ্যে আছে রেনেসাঁস যুগের মাইকেল এঞ্জেলোর একটি অসমাপ্ত এক খন্ড মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি হাঁটু গেড়ে বসা বালকের মূর্তি, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির শিশু কোলে ম্যাডোনা, স্প্যানিশ শিল্পী এল গ্রেকোর পিটার অ্যান্ড পল এছাড়া ভিন্সেন্ট ভ্যানগগ, ডাচ শিল্পী রেম্ব্রান্ট, রুবেন,, ইটালীয় শিল্পী আন্তনিও ক্যানোভা, রাফ্যায়েল, কারাভাগিও, গিওরগিওনে এঁদের অনবদ্য সব সৃষ্টি।

একটা ঘরে গিয়ে দেখলাম একটি সোনার যান্ত্রিক ঘড়ি- ময়ূর, প্যাঁচা এবং একটি মোরগকে নিয়ে তৈরি এক অভিনব ঘড়ি। প্রতি ঘন্টায় ময়ূর একবার পেখম মেলে, প্যাঁচা তার বন্ধ চোখ খোলে আর মোরগটা ডেকে ওঠে। সম্রাজ্ঞী ক্যাথারিন দি গ্রেট এই ঘড়িটি এক ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছিলেন। পশ্চিম ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশের পেন্টিং ছাড়াও গ্রীস, পূর্ব ইয়োরোপ, মধ্যুএশিয়া, পূর্ব এশিয়া, মিশর ইত্যাদি দেশের প্রত্নতাত্বিক সংগ্রহ, মুদ্রা, অলঙ্কার ইত্যাদিও এখানে দেখতে পাওয়া যায়।

হারমিটেজ মিউজিয়াম দেখার পরদিন আমরা সেন্টপিটারসবার্গ শহর পরিক্রমা করলাম জলপথে। এই শহর অনেকগুলি নদী ও ক্যানাল দ্বারা যুক্ত এবং তার উপরে আছে প্রায় ৩০০ টা ব্রীজ। এই নদী গুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে নেভা নদী। এই নদীর পাশে অবস্থিত প্রায় প্রতিটি ভবনই অনবদ্য স্থাপত্যের নিদর্শন এবং ইতিহাসের সাক্ষ্য বয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের জলযানে ভ্রমণের সময় রাশিয়ান ভাষায় ধারাবিবরনী দেওয়া হচ্ছিল। এই জলযাত্রার পথে পড়ল পিটার এন্ড পল দুর্গ, সেন্ট আইজাক্স ক্যাথিড্রাল, এডমির‍্যাল্টি, অরোরা জাহাজ, সামার প্যালেস, প্যালেস ব্রীজ ইত্যাদি। ১৭০৩ সালে পিটার দি গ্রেট পিটার – পল দুর্গ নগরী স্থাপনা করেন। ১৯২০ সাল পর্যন্ত এখানে রাজনৈতিক বন্দীদের রাখা হতো। এই বন্দীদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ব্যক্তিত্ব যেমন দস্তয়েভস্কি, গোর্কি, ট্রটস্কি এরাও ছিলেন। ১৯২৪ সাল থেকে এই দুর্গ মিউজিয়ামে পরিনত হয়েছে। সুইডিশ স্থপতি দোমিনিকো ত্রেজ্জিনিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পিটার এন্ড পল ক্যাথিড্রাল তৈরির জন্য। এর স্থাপত্যে রাশিয়ান অরথোডস্ক চার্চের তুলনায় জার্মান প্রটেস্টান্ট চার্চের প্রভাব বেশী পরিলক্ষিত হয়।

জলযানে ভ্রমণের ভিডিও

বিভিন্ন শহর দেখে অনুপ্রানিত হয়ে পিটার দি গ্রেট তাঁর নিজের শহর ‘উত্তরের ভেনিসের’ জন্য সুদৃশ এক উদ্দ্যান তৈরী করতে মনস্থ করেন। প্রাসাদ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সেই ত্রেজ্জিনিকেই । এই প্রাসাদের নাম রাখা হয় সামার প্যালেস – এখানে ঘর গরম রাখার কোনো ব্যবস্থা ছিলনা – কারণ শীতকালে তিনি উইন্টার প্যালেসেই থাকতেন। পাশ দিয়ে যাবার সময় এই হলুদ রঙের দ্বিতল বিশিষ্ট প্রাসাদটি আমরা দেখতে পেলাম। নেভা নদীর উপর নির্মিত সুদৃশ্য প্যালেস ব্রীজটি হালেই অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীতে তৈরি হয়েছে। নীচ দিয়ে জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য গভীর রাতে যখন গাড়ী চলাচল কম থাকে তখন ব্রীজটি তুলে নেওয়া হয়। গতবারের রাশিয়া ভ্রমনের সময় অরোরা জাহাজের নাম অনেকের কাছে শুনেছি। এই জাহাজ থেকেই উইন্টার প্যালেসের দিকে নিক্ষিপ্ত গোলা বলশেভিক বিপ্লবের সূচনা করেছিল। সেই অর্থে এই জাহাজের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানেও এই জাহাজটি সক্রিয় অবস্থায় নেভা নদীতে নোঙর করা আছে। এর পাশ দিয়ে যাবার সময় কালো রঙের জাহাজটি চোখে পড়ল – এটি এখন মিউজিয়াম হিসেবে রাখা আছে।

পিটার দি গ্রেট ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের উপকন্ঠে ভার্সাই প্যালেস দেখে দেশে ফিরে গিয়ে সেন্ট পিটারসবার্গ শহরে ঐ রকম একটা প্রাসাদ এবং বাগান তৈরি করতে মনস্থ করলেন। সেই অনুযায়ী সেন্টপিটারসবার্গ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গাল্ফ অফ ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ উপকুলে তিনি স্থাপনা করলেন পিটার হফ। ১৭০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি যে জমিদারি পত্তন করেছিলেন সেটির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে তাকে রাজকীয় বাসস্থানের পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। এই প্রাসাদ এবং সংলগ্ন উদ্যানের প্রাথমিক পরিকল্পনা বা ডিজাইন করেছিলেন এক ফ্রেঞ্চ স্থপতি।

পিটারহফ উদ্দ্যানের ভিডিও

পিটারহফ মিউজিয়ামের ভিডিও

এই উদ্যানের দুটি অংশ – উপরিভাগ এবং নিম্নভাগ । এই নিম্নভাগের উদ্যানকে দুভাগে বিভক্ত করেছে একটি চ্যানেল – যেটি প্রাসাদ থেকে সমুদ্রের দিকে সোজা নেমে গিয়েছে। ৬৪ টি ফোয়ারার জল এই চানেল দিয়ে সমুদ্রের দিকে বয়ে যাচ্ছে। ইটালিয়ান স্থপতি কার্লো রাস্ত্রেলি ঈশপের গল্পের অবলম্বনে পিটার হফের ফোয়ারার পরিকল্পনা করেন। এই ফোয়ারার জল কোন পাম্প ছাড়াই শুধুমাত্র মাধ্যাকর্ষণের মাধ্যমে সরবরাহ করাহয়। পাহাড়ের ঝর্ণার জল প্রথমে বাগানের উপরি অংশের রিজার্ভারে সঞ্চিত হয়। সেখান থেকে জল যায় নীচের ফোয়ারা গুলিতে।সব সৃষ্টিরই একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে – সোনার গিল্টি করা প্রাসাদের সিড়িপথ এবং তার সৌন্দর্যায়ন, বাগানের নান্দনিক উপস্থাপনা, ধাপে ধাপে নেমে আসা ফোয়ারার বিন্যাস এবং তার আনুষঙ্গিক সৌন্দর্য দেখে মনে হয়েছে যে পিটার হফ কোনও অংশেই ভার্সাইর থেকে কম নয়। পিটারের মৃত্যুর পর এই উন্নয়নে কিছুটা ভাঁটা পরে। অনেক ব্যবসায়ী এই শহর ছেড়ে মস্কো চলে যায়। পরে আবার সম্রাজ্ঞী আন্নার নির্দেশে পিটারের অসমাপ্ত কাজ গুলি সম্পন্ন করা হয়।অনেক বিদেশী স্থপতি এই শহরকে এতটাই ভাল বেসেছিলেন যে তাঁরা দেশে ফিরে না গিয়ে এখানেই থেকে গেছেন।

আমরা পিটার হফ দেখতে এসেছিলাম গাড়ী চড়ে – ফিরে যাব হাইড্রোফয়েলে চেপে। ফিরতে বড়জোর ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে। পথে দেখলাম একটা সুউচ্চ আধুনিক স্থাপত্যের নির্মাণ – রকেটের মত দেখতে প্রায় ১৫০০ ফুট উঁচু, ৮৭ তলার বিল্ডিং। আমাদের গাইড বললো যে এটা ‘লাখতা সেন্টার’ – গাজপ্রোমের প্রধান কার্য্যালয়- ইয়োরোপের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং। গাজপ্রোম হচ্ছে আমাদের দেশের ওএনজিসির মত এক তৈল উত্তোলনকারী সংস্থা।

দেখতে দেখতে হারমিটেজ মিউজিয়ামের কাছে চলে এলাম। এটা অনেকটা আমাদের ডালহৌসি বা এসপ্ল্যানেডের মত অফিস পাড়া। অফিস ফেরত লোকের ভীড়ে ট্যাক্সি পাওয়া খুবই দুষ্কর। আমাদের গাইড সামনের একটা বাস দেখিয়ে বলে দিলো যে ঐ বাসে চড়ে গুনে গুনে ছয় নম্বর স্টপেজে নেমে গেলে সামনেই হোটেল। বাসে তো উঠলাম – আমি মনে মনে স্টপেজ গুনছি। চার নম্বর স্টপেজ আসতে বাসের কন্ডাক্টর আমাদের নেমে যেতে বলল। কারণ ওটাই নাকি শেষ স্টপেজ। জানিনা তাড়াহুড়োতে ভুল বাসে উঠেছিলাম কিনা। বাস থেকে নেমে রাস্তা দেখলাম অচেনা। আমাদের হোটেলটা যেহেতু খুব নামী নয় অনেকে রাস্তার কোনো হদিশ দিতে পারলোনা। আমার গিন্নীকে দেখে মনে হলো কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছে। আমি বোঝালাম যে নার্ভাস হবার কিছু নেই। প্রথমতঃ এখানে আইন শৃঙ্খলার কোনো সমস্যা নেই, দ্বিতীয়তঃ রাশিয়ান ভাষায় আমার যেটুকু জ্ঞান আছে তাতে লোককে জিজ্ঞেস করে রাস্তা খুঁজে নেওয়া কোন সমস্যা হবেনা।সামনে একটি অল্প বয়সী ছেলে দেখলাম – হোটেলের নাম বলাতে সে গুগল ম্যাপ থেকে দেখে আমাকে যাবার রাস্তা বুঝিয়ে দিলো ভালো করে। আমাদের হোটেলের রাস্তায় একটি ভারতীয় ছেলে রেস্তোরাঁ চালায় , সেখানে নৈশাহার সেরে হোটেলে ঢুকলাম। সেন্টপিটারসবার্গকে বিদায় জানিয়ে কালকে যাব মস্কো ।

পরদিন সকাল সকাল স্টেশনে চলে এলাম। দ্রুতগতির ‘সাপসান’ ট্রেনে সেন্টপিটারসবার্গ থেকে মস্কো যেতে সময় লাগবে আনুমানিক চার ঘণ্টা। জার্মান কোম্পানী সিমেন্সের সহযোগিতায় তৈরি এই ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫০ কিলমিটার। মোটামুটি আরামদায়ক ছিল এই ট্রেন ভ্রমণ। জানলা দিয়ে সবুজ প্রকৃতি দেখতে দেখতে কখন যে মস্কোয় চলে এলাম বুঝতে পারলাম না।

সাপসান ট্রেন ভ্রমনের ভিডিও

তৃতীয় পর্ব

রাশিয়া ভ্রমনের শেষ পর্যায়ে এসে এখন আমরা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এসে পৌঁছেছি । ট্রেন প্লাটফরমে ঢুকতেই দেখি ড্রাইভার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে । আমাদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে দু হাতে দুটো স্যুটকেস নিয়ে চলল। আমরা পেছন পেছন পারকিং লটের দিকে চললাম। অফিস টাইম হওয়ায় এবং হোটেলটা রেড স্কোয়ার অঞ্চলে হবার কারণে খুব ট্রাফিক জ্যাম ছিল। আমি ড্রাইভারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। বললাম প্রায় ৫০ বছর পরে তোমাদের দেশে এলাম – অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। সেই সময়ে যে হোটেলে উঠেছিলাম সেটা এখনও আছে কিনা জিজ্ঞেস করায় সে বলল যে”হ্যাঁ এখনও বহাল তবিয়তে আছে।“ তারপরে বলল যে এত বছর ধরে ট্যাক্সি চালাচ্ছি – এই প্রথম এক জন বিদেশী দেখলাম যে রাশিয়ান ভাষায় এতটা সড়গড়।“ আমি বললাম যে “প্রথমতঃ তোমাদের দেশে আমি ৬ মাস ছিলাম, তারপর দেশে ফিরে গিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি- তারপরেও যদি ভাষাটা শিখতে না পারি তাহলে তো সেটা আমার ব্যর্থতা।“ গল্প করতে করতে হোটেলে পৌঁছে গেলাম। হোটেলটা সাধারণ – তবে লোকেশন টা খুব ভাল। রেড স্কোয়ার, বলশয় থিয়েটার, গুম, ত্সুম সবই হাঁটা দূরত্বে।

হোটেলে ঢুকে একটু ফ্রেশ হয়ে এবং চটপট কিছু খেয়ে নিয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম সিটি ট্যুরের উদ্দেশ্যে। প্রথমে গেলাম রেড স্কোয়ারে। জায়গাটা আগের তুলনায় অনেকটা ঘিঞ্জি মনে হল। ওখানে একটা আন্তর্জাতিক মিলিটারি ব্যান্ডের প্রোগ্রাম চলছিল তাই সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। শুনলাম সকাল বেলায় জনসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। আমাদের গাইড বলল যে আমরা ‘গুমের’ মধ্যে গিয়ে ওখান থেকে রেড স্কোয়ার ভালভাবে দেখতে পাব- কালকে ইচ্ছে করলে আবার আমরা নিজেরাই দেখে নিতে পারি। ‘গুম’ হচ্ছে রাশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ডিপারট্মেন্টাল স্টোর – এর পুরো নাম হচ্ছে প্রধান ডিপারট্মেন্টাল স্টোর। সোভিয়েট জমানায় এর নাম ছিলো রাষ্ট্রীয় ডিপারট্মেন্টাল স্টোর। আমাদের জল এবং কিছু টুকিটাকি জিনিষ কেনার প্রয়োজন ছিল। কাউন্টারে দাম দেবার সময় সেলস গার্ল জিজ্ঞেস করলো “তোমরা ইন্ডিয়া থেকে এসেছ ? অমিতাভ বচ্চন আর মিঠুন চক্রবর্তী আমার খুব প্রিয়।“ বুঝলাম রাজ কাপুর থেকে সরে এখন জনপ্রিয়তা এদের দিকে ঝুঁকেছে – সেটাই স্বাভাবিক। ‘গুম’কে একটা সাধারণ ডিপারট্মেন্টাল স্টোর ভাবলে ভুল হবে এর ভেতরকার মনকাড়া স্থাপত্য যেকোন লোককে মুগ্ধ করবে। আমরা উপর তলায় উঠে সেখান থেকে রেড স্কোয়ারের অনেক ছবি তুললাম। নীচের তলায় একটা সুদৃশ্য ফোয়ারা আছে যেটা এখানকার একটা ল্যান্ডমার্ক – যেমন আমাদের হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়িটা। লোকেদের দেখা করার জায়গা বা মীটিং পয়েন্ট। বছরের বিভিন্ন সময়ে এটা নানা ভাবে সাজানো হয়। যেমন এই সময় তরমুজের ফলন হয় বলে অনেক তরমুজ আর খরমুজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। ফুটবল এর বিশ্বকাপের সময় এটা ফুটবল দিয়ে সাজানো হয়েছিল।

এই চত্বর থেকে বেরিয়ে আমরা গাড়ীতে উঠতে যাব হঠাৎ দেখলাম ‘হোটেল রাশিয়া ‘ বেমালুম উধাও। গাইড কে জিজ্ঞেস করায় সে বলল যে “এই হোটেল গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে ‘জারিয়াদ্যা’ পাবলিক পার্ক বানানো হয়েছে।“ আমরা দেখেছি সোভিয়েত জমানায় এটা একটা মর্যাদাপূর্ণ হোটেল ছিল। দেশ বিদেশের সম্মানিত অতিথিরা এখানে থাকতেন। এর একতলায় একটা ‘বিরোজ্কা’ নামে ডিপারট্মেন্টাল স্টোর ছিল- মনে আছে সেখানে রুবল না দিয়ে ডলার দিয়ে জিনিস কিনলে যেকোন জিনিস অনেক সস্তায় পাওয়া যেত।এখন আমরা যাবো স্প‍্যারো হিল এবং মস্কো ইউনিভার্সিটির দিকে। এই স্প‍্যারো হিলের নাম আগে ছিল লেনিন হিল। এই জায়গাটা আগে অনেক ফাঁকা ফাঁকা ছিল। সামনের স্কাইলাইনটা অনেকটাই পালটে গেছে। পুরনো সোভিয়েত স্টাইলের পাঁচ-ছয় তলার বাড়ীগুলির জায়গা নিয়েছে গগনচুম্বী আধুনিক স্থাপত্যের অট্টালিকাগুলি।

স্প্যারো হিলের ভিডিও

ফেরার পথে ভিক্টরি স্কোয়ারে চোখে পড়ল বিরাট এক বিজয় তোরণ বা ট্রায়াম্ফাল আর্ক যেটা ১৮২৮ খৃস্টাব্দে তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ের পর তৈরি হয়েছিলো। এই অফিস টাইমে হোটেলে ফেরার সময় দেখলাম বেশ ট্রাফিক জ্যাম।

পরের দিন সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। প্রথমে ‘ৎসুমে’ গেলাম।‘ৎসুম’ হচ্ছে রাশিয়ার ফ্যাশন সামগ্রীর সবচেয়ে বড় ডিপারট্মেন্টাল স্টোর। ১৮৫৭ সালে তৈরি এর স্থাপত্যে গথিক রিভাইভাল স্টাইল পরিলক্ষিত হয়। সকাল সাড়ে নটা বেজে গেছে – তখনো দেখলাম প্রধান ফটক বন্ধ। আমরা সামনের পার্কে বসে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। আমাদের আজকে অনেক কিছু দেখার আছে – তাই সময় নষ্ট করা উচিত হবেনা ভেবে উঠে পড়লাম। বলশয় থিয়েটারের পাশ দিয়ে যাব রেড স্কোয়ারে। ডান দিকে বড় বড় থামওয়ালা সেই ঐতিহ্যবাহী সুদৃশ্য বলশয় থিয়েটার।এটিই মস্কোর প্রাচীনতম পাবলিক থিয়েটার এবং রাশিয়ান সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এটি জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের রাজ্যাভিষেকের দিনে ১৮৫৬ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। বলশয় থিয়েটার সর্বকালের জন্য রাশিয়ান পারফর্মিং আর্টসের ইতিহাসে বড় অবদান রেখে গেছে। মনে পড়ল এই থিয়েটারের ব্যালকনিতে বসে ৫০ বছর আগে বিখ্যাত সোয়ান লেক ব্যালে দেখেছিলাম। আজকে রাতেও তা দেখব – তবে এখানে নয় মস্কো কনসার্ট হলে । এখানে মনে হয় কিছু সংস্কার কাজের জন্য এখন শো বন্ধ আছে। সামনের রাস্তা পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম রেড স্কোয়ার চত্বরে। এখানকার দ্রষ্টব্য স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্রেমলিন, রাষ্ট্রীয় ঐতিহাসিক মিউজিয়ম, সেন্ট বেসিল ক্যাথিড্রাল এবং একটু দূরে ক্রাইস্ট দি সেভিয়র ক্যাথিড্রাল। এই জায়গা গুলির ফটো তুললাম। লেনিনের মুসোলেয়াম সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়েই কেবল খোলা থাকে এবং লম্বা লাইন পড়ে। সেজন্য আর ওদিকে গেলাম না। তাছাড়া আমি গতবারেই তা দেখেছি। এখন আর ওখানে চেঞ্জ অফ গার্ড হয় না। আমার প্রথম পর্বের প্রতিবেদনে রেড স্কোয়ার সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করেছি, তাই আর তার পুনরাবৃত্তিতে যাবনা।

রেড স্কোয়ারের ভিডিও

এবারে আমরা যাব মস্কোর গর্ব তার পাতাল পরিবহন বা মেট্রো দেখতে। অনেকে ভাবতে পারে মেট্রোতে আবার দেখার কি আছে? সেটা সম্পূর্ণ ভূল প্রমানিত হবে এখানকার মেট্রো একবার দেখলে। এখানকার মেট্রো স্টেশন গুলি যেকোনো আর্ট গ্যালারীকে হার মানায়। সে তুলনায় নিউইয়র্কের মেট্রো তে কেউ একবার চাপলে আর দ্বিতীয়বার যেতে চাইবেনা। লন্ডনের মেট্রোও তেমন কিছু ভালো লাগেনি। আসলে আমেরিকায় বেশীর ভাগ লোকের মধ্যেই গাড়ীর ব্যাবহার বেশী – তাই মেট্রো অনেকটাই উপেক্ষিত। কিন্তু এখানে বেশীর ভাগ লোকই মেট্রোকে তাদের পরিবহন মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। সোভিয়েত পাতাল রেল নির্মাণের সময় নির্মাণ সংস্থার অন্যতম স্থপতি বলেছিলেন “আগে স্থপতিরা রাজাদের জন্য প্রাসাদ তৈরি করত, এখন আমরা জনগণের জন্য প্রাসাদ তৈরি করতে যাচ্ছি!” স্টালিনের শাসনকালে সমাজতান্ত্রিক ক্লাসিক্যাল স্টাইলে পাতাল রেলের “জনগণের প্রাসাদ” কোমসমলস্কায়া, কিয়েভস্কায়া বা মায়াকভস্কায়া এই স্টেশনগুলি নির্মিত হয়েছিল। ১৯৩৫ এর পরে মেট্রো নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের দ্বিতীয় ধাপে নগর পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ও আনুষঙ্গিক সাজসজ্জার কথা মাথায় রেখে নতুন স্টেশন গুলি তৈরী হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যেকটি রিপাবলিকের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি অনুযায়ী এক একটি স্টেশনের আভ্যন্তরীণ সজ্জার রূপরেখা তৈরি হয়েছে। সেগুলির বেশিরভাগই স্থাপত্যগতভাবে অসাধারন – কিছু কিছু চিত্রকলা, পিলারের কারুকাজ এবং মূর্তির সৌন্দর্য যেকোনও সংগ্রহশালা বা প্রাসাদের সজ্জা কে হার মানাবে। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন মস্কো শহর অবরূদ্ধ অবস্থায় ছিল তখন অনেক স্টেশনই বিমান হানার থেকে বাঁচবার জন্য এয়ার-রেড শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হত।

মস্কো মেট্রোর ভিডিও

মস্কোর মেট্রো বিশ্বের সমস্ত ভূগর্ভস্থ পরিবহন সংস্থার মধ্যে এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রী বহন করে । সপ্তাহের কোনো কোনো দিনে এই সংখ্যা প্রায় নব্বই লাখে পোঁছে যায়। মস্কো মেট্রো নেটওয়াওয়ার্কে মোট ১৪ টি লাইন এবং ২১২টি স্টেশন রয়েছে। আমরা ৯টি বিভিন্ন লাইনের ১২টা স্টেশনে নেমে ঘুরে দেখেছি। প্রত্যেকটি ষ্টেশনই তাদের চরিত্রগত বৈশিষ্টে অনন্য। যাত্রী সাচ্ছন্দের কথা বিবেচনা করে তাদের অপেক্ষা স্থল গুলিও সুন্দর ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় অপেক্ষা ও দেখা সাক্ষাতের জন্য স্টেশনের মধ্যে ব্যালকনিও আছে দেখলাম।মস্কো মেট্রো সকাল সাড়ে পাঁচটায় চালু হয় এবং রাত একটায় বন্ধ হয়। অফিস টাইমে দেড় থেকে দুমিনিটের ব্যবধানে ট্রেন চলে। সত্যই এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

এখানে ঘুরতে ঘুরতে কিছু স্থানীয় লোকের সঙ্গেও কথা হোলো । তাদের মধ্যে বয়স্ক আছে, তরুন আছে এমনকি একজন বাঙ্গালীর সঙ্গেও আলাপ হোলো। বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে একান্ত আলাপে মনে হল তিনি হয়তো আগের জীবনেই ফিরে যেতে চান – তখন খাওয়া থাকার সমস্যা ছিলোনা – এখন জিনিসপত্রের যা দাম তাতে পেনশনের টাকায় সংসার চালানো মুস্কিল। এদিকে অল্প বয়সী ছেলেটি বর্তমান অবস্থার সঙ্গে বেশ ভালই মানিয়ে নিয়েছে – তার মত হল “ আমার যদি ক্ষমতা থাকে, উদ্ভাবনী শক্তি থাকে, ব্যবসায়িক দক্ষতা থাকে তাহলে তো আমাকে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়না । আমি নিজস্ব একটা সংস্থা গঠন করতে পারি। আগেতো সেই সুযোগই ছিলনা – কারন সবই ছিল রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা।“ ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার পাশে একটা রেস্তোরাঁর ছাতার তলায় বসলাম। আমরা যখন খাচ্ছি তখন এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন “আপনারা কি ভারতীয়?” ভাবলাম উনি বোধ হয় আমাদের মত কোনো ট্যুরিস্ট হবেন। পরে খাঁটী বাংলায় বললেন “ মনে হচ্ছে আপনারা বাঙ্গালী।“ কথায় কথায় জানতে পারলাম যে রেস্তোরাঁটা ওনারই। উনি বহুদিন আগে এখানে পড়তে এসেছিলেন তারপর এখানেই থেকে গেছেন। জেনে ভাল লাগল যে একজন বাঙ্গালী এখানে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করছেন।

রাতে সোয়ান লেক ব্যালে দেখতে যাব মস্কো চাইকোভস্কি কনসার্ট হলে। এটাই আমাদের রাশিয়া ভ্রমনের অন্তিম ইভেন্ট। রাত ৮টায় শো – ট্রাফিক জ্যামের কথা ভেবে আমরা সময় হাতে নিয়েই বেরোলাম। “সোয়ান লেক” ক্লাসিক হিসাবে এমন একটি ব্যালে যার আবেদন প্রায় সর্বজনীন। গল্পের শুরু এই ভাবে -রাজপুত্র সিগফ্রিড এবং রাজকন্যা ওডিট প্রেমে পড়ে এবং বাকী জীবন একসাথে কাটানোর শপথ নেয়। এদিকে সিগফ্রিড তার নিজস্ব জগতে ব্যস্ত ভূমিকা পালন করে চলেছে। দায়বদ্ধতার সাথে যুক্ত তাঁর রাজকীয় বাধ্যবাধকতা তাকে অন্য ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে চলেছে। কিন্তু তার অনীহা তাকে বিদ্রোহী করে তোলে, অবশেষে সে ভালবাসার টানে তার হৃদয়কেই অনুসরণ করে। গল্পটি উদ্ঘাটিত হয় যখন রাজকুমার শিকারে যায় এবং সরোবরের জলে একটি সুদৃশ্য রাজহাঁস তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রাজকুমার তীর ছোঁড়ার আগেই রাজহাঁসটি ওডিট নামের সেই সুন্দরী রাজকন্যায় পরিণত হয়। সে বলে যে একটি অশুভ অভিশাপের কারণে সে এবং অন্য মেয়েরা দিনের বেলা রাজহাঁস হয়ে যায় এবং এই হ্রদের জলে বিচরণ করে – কিন্তু রাতে তারা আবার তাদের মানবী রূপ ফিরে পায়। রাজকুমারকে সে একথাও জানায় যে যাদুকরের যাদুমন্ত্রের প্রভাব থেকে সে মুক্ত হবে যদি কোন রাজকুমার তাকে উদ্ধার করে এবং চিরকাল তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। সিগফ্রিড সেই রাতে তার দুর্গে একটি উৎসব অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সেখানে যুবরাজ প্রতারিত হয় এবং ওডিট বলে যাকে মনে করে সে আসলে যাদুকরের দুষ্ট মেয়ে। ভুলটি বুঝতে পেরে যুবরাজ গভীর ভাবে অনুতপ্ত হয় এবং ওডিটের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। রাজকন্যা তাকে ক্ষমাও করে দেয় এবং কিন্তু তারা অনন্তকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একত্রে থাকবে বলে নিজেদেরকে সেই হ্রদের জলে বিসর্জন দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।

সোয়ান লেক ব্যালের ভিডিও

প্রধান ব্যালেরিনা যে ওডিটের চরিত্রে অভিনয় করেছে তার গতিশীল নৃত্যের ভঙ্গিমার সঙ্গে সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ সত্যিই সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তার অভিনয় অনুপম ও মার্জিত। রাজহংসীর ভুমিকায় সে সাবলীল কিন্তু মানবী রূপে খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত।হ্রদের জলের ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যালেরিনারা যখন আঙ্গুলের উপর ভর করে নেচে যাচ্ছে তখন মনে হচ্ছিল যেন হ্রদের পাড়ে সত্যি সত্যি রাজহাঁসরা হেঁটে যাচ্ছে। রাজপুত্র, যাদুকর এবং অন্যান্য ভুমিকাতে যে ব্যালে শিল্পীরা অভিনয় করেছে তারাও সবার প্রশংসা অর্জন করেছে। এর সঙ্গে চাইকোভস্কির মনোমুগ্ধ করা সিম্ফনি এই ব্যালে নৃত্যে সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা যোগ করেছে।এক কথায় এ অভিজ্ঞতা অনবদ্য। আমার জীবনে সৌভাগ্য বশতঃ এই অভিজ্ঞতা দ্বিতীয় বার হোল।

সব ভালো যার শেষ ভালো। এই ভাল লাগার স্বাদ নিয়েই আমাদের রাশিয়া ভ্রমনের যবনিকা পতন ।

আমাদের রাশিয়া ভ্রমনের ছবিগুলি দেখুন

সেন্ট পিটারসবারগ

মস্কো

x x x x x x x x x x x

2 Comments

  1. দেবজ্যোতি ব্যানার্জী

    খুব-ই সুন্দর একটি লেখা | বেশ ভালো লাগলো আপনার পোস্ট টি পড়ে|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *