লেখা – তীর্থ দাশগুপ্ত , ছবি – ঋতু দাশগুপ্ত
After a long one and half years break due to lockdown we are ready to indulge in a brief outing. We decided we will visit a weekend spot in this year’s Puja holiday. We didn’t get booking in some remote exotic spot which we initially thought of . Later we booked a beautiful resort in Tajpur . It’s a popular weekend seaside getaway near Digha , west bengal. The resort we stayed at Tajpur is magnificient. In this travelogue our experience in Tajpur will be described briefly in Bengali.
বর্ষা শেষে নীলাকাশে পেঁজা তুলোর মতন মেঘ , আর রাস্তার দুধারে কাশবন । এই দৃশ্য চোখে ভাসলেই মন বলে পুজো এসে গেছে । আপামর বাঙালীর বার্ষিক ভ্রমণের সময়ও এটা । দীর্ঘ করোনা জনিত লোকডাউনের ক্লান্তি কাটাতে বাড়ীর সকলেরই ইচ্ছা কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসি । আর কলকাতার কাছাকাছি আজকাল অসংখ্য সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাবার জায়গা আছে । অনেক চেষ্টা করেও একটু স্বল্পপরিচিত উইকেন্ড স্পটে কোনো বুকিং পেলাম না । দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গেছে । করোনার গ্রাফ ও নিম্নমুখী । এই অবস্থায় বোধকরি জনগণ আর ঘরের চার দেওয়ালে বন্দী থাকতে চাইছে না ।
শেষ মেশ দীঘার কাছে তাজপুরে একটা ভারী সুন্দর রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা করলাম ।
দেখতে দেখতে যাবার দিন চলে এলো আর মহা সপ্তমীর দিন সকালে আমরা সবাই মিলে হৈ হৈ করে গাড়ী নিয়ে চললাম তাজপুরে । আমাৰ আট বছরের কন্যা তো ভারী উৎসাহিত । ” বাবা আর কত ঘন্টা , আর কত কিলোমিটার বাকি ? ” বাড়ে বাড়ে জানতে চায় সে । এদিকে রাস্তায় যে প্রচুর গাড়ীর ভীড় । টোল বুথে লম্বা লাইন ।
প্রায় সকাল দশটা নাগাদ আমরা এসে পৌঁছলাম কোলাঘাটে । পথের পাশের একটি ছিমছাম রেস্তোঁরায়ে লুচি , তরকারি ও চা সহযোগে প্রাতরাশ সারা হল । তারপর আবার জাতীয় সড়ক 116 ধরে যাত্রা । একটানা চলার পথে মাঝে মাঝেই দুদিকের সবুজ ধানক্ষেত আর ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কাশবন চোখ কে আরাম দেয় । প্রায় দুপুর দেড় টা নাগাদ এসে পৌঁছোই আমাদের রিসোর্টে ।
বড় ভারী গেট খুলে দেয় দারোয়ান , আর ভেতরে ঢুকে আসে আমাদের দুটি গাড়ী । ” বাবা , তুমি যে বললে তাজপুরে সমুদ্র আছে , কিন্তু আমরা তো জঙ্গলে ঢুকছি ” । দেখি সত্যিই লাল মোরামের পথ ধরে দুপাশের ঘন জঙ্গল পেরিয়ে গাড়ী ভিতরে এগিয়ে চলেছে । বুঝলাম রিসোর্ট টি বিশাল , অনেকটা জায়গা নিয়ে । তারপর আরেকটু এগোতেই দেখি ডানদিকে বড় দীঘি । একদিকে বাঁধানো ঘাট আবার ঘাটের পাশে শেড দেওয়া আবার শেডের নীচে বেশ কিছু আরামকেদারা ও চেয়ার রাখা । শুনলাম এই দীঘির নাম শিৱসাগর । চারিদিকে নারকেল , আম ও অন্যান্য বড় গাছ আর প্রচুর ফুলগাছে ঘেরা । গাড়ী এরপর এসে থামল অনেকগুলি সুন্দর দেখতে কটেজে । রিসোর্টের কর্মচারীরা অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেল যার যার নির্ধারিত কটেজে । যেকোনো ঘরের বা বাড়ীর একটা নাম থাকলে সেটা বেশ একটা মাধুর্য্য পায় । যেসব কটেজ বা হোটেলের ঘরের নাম্বার থাকে সেইগুলির তুলনায় নানারকম সুন্দর সুন্দর নামে চিহ্নিত ঘর বা কটেজ আমাদের টানে বেশী । জানিনা আপনারাও একমত হবেন কিনা । যাইহোক আমাদের জন্যে নির্ধারিত হল তিনটি পাশাপাশি কটেজ , ভবঘুরে , সর্বহারা এবং লক্ষীছাড়া । বিচিত্র এই নামকরণের সার্থকতা নিয়ে পরবর্তী কয়েকঘন্টা আড্ডা চলল আমাদের মধ্যে । ইতিমধ্যে ভাত , সবজি দিয়ে ডাল , ঝুড়ি ঝুরি আলুভাজা , কাতলা কালিয়া , পমফ্রেট সর্ষে , চাটনি , পাঁপড় সহযোগে সুস্বাদু দ্বিপ্রাহরিক আহার সারা হল ।
বিকেলে আমরা গেলাম রাস্তার উল্টোদিকেই ঝাউবন ও ম্যানগ্রোভ অরণ্য পেরিয়ে নির্জন সৈকতে । জঙ্গলের পথ দিয়ে বীচে যাওয়াটা একটা অন্যরকম অনুভূতি । রিসোর্টের এই নিজস্ব সৈকত তার সম্পূর্ণ নির্জনতা নিয়ে আমাদের মনের উপর প্রভাব ফেলল । যেদিকে তাকাই ত্রিসীমানায় কোনো মানুষজন নেই । সামনে বিস্তীর্ন বঙ্গোপসাগর । ভারী ভালো লাগলো এই পরিবেশ । বেশ কিছু মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করে আবার ঝাউবন পেরিয়ে চলে এলাম রিসোর্টে । রাতের ডিনার হলো জম্পেশ করে রুটি , তরকাডাল , মিক্স ভেজ আর চিকেন কারী সহযোগে । সাথে গরম রসগোল্লা ।
পরের দিন পাখীর ডাকে ঘুম ভাঙলো । সকাল সকাল সেই নির্জন সৈকতে সমুদ্র স্নানে গেলাম । সপরিবারে সেই জনমানবহীন পরিবেশে সমুদ্রস্নানের অভিজ্ঞতা কোনোদিন ভুলবোনা । সব চেয়ে বেশী উচ্ছসিত হল আমার আট বছরের কন্যা ।
রিসোর্টে ফিরে এসে গরম গরম ফুলকো লুচি , ছোলার ডাল , ডিমসিদ্ধ আর চা । তারপর এই অপূর্ব রিসোর্টটি ঘুরে ঘুরে দেখার পালা । হাঁস , মুরগি , ছাগল ইত্যাদি প্রতিপালনের ব্যবস্থা দেখলাম ভেতরে । পেছনে ছোট্ট একটা পুকুরে আলো ছায়া পরিবেশে একদঙ্গল হাঁসের ঘুরে বেড়ানো , পুকুর কে ঘিরে বড় বড় আম গাছের সারি , পেছনে ফুলের বাগান সব মিলিয়ে এই প্রাকৃতিক দৃশ্যপট মনের উপরে সুন্দর অভিঘাত ফেললো ।
অষ্টমীর দুপুরে লাঞ্চ হল কব্জি ডুবিয়ে । ভাত , শুক্তো , নিরামিষ ডাল , বেগুনি , চারা ভেটকি , কাঁকড়া মশলা , চাটনি , পাঁপড় । এলাহী আয়োজন । বিকেলে নিজস্ব সৈকতে হল একটা সংক্ষিপ্ত সফর । আজ দেখলাম কিছু পর্যটকদের ভীড় । ছেড়াঁ ছেঁড়া মেঘের আড়াল থেকে বিকেলের অস্তগামী সূর্যের আভায় সমুদ্রতটের শোভা বেশ মনোরম লাগছিল । ফটো তোলার পর্ব শেষ করে গেলাম তাজপুরের মূল সৈকতে ।
এইদিকটায় দেখলাম ব্যাঙের ছাতার মতন গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য হোমস্টে আর রিসোর্ট । আশংকা হয় তাজপুরের নিস্কলুষ সৌন্দর্য্য , তার নির্জনতা কোনদিন না অতি পর্যটনের কারণে বিঘ্নিত হয় । এটা একটা চিরকালীন দ্বন্দ্ব । প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে পর্যটনের প্রসার প্রকৃতই একটা বড় চ্যালেঞ্জ । অনেক বছর আগে একবার মন্দারমণি থেকে কয়েকঘন্টা তাজপুর ঘুরতে এসে এখানকার যে আদিমতা লক্ষ্য করেছিলাম তা এখন পুরোটাই বিলুপ্ত । সমুদ্রতটের পাশেই বাঁধানো চত্বর , সুন্দর বসার জায়গা । যদিও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব খুবই প্রকট । সুন্দর বাঁধানো চত্বরটি গরুর বিষ্ঠায় ভরা । পাশেই মনে হলো আধুনিক নির্মীয়মান রেঁস্তোরা । একপাশে পার্কিং লট । তার পাশে সারিবদ্ধ অস্থায়ী দোকান , যেখানে সবরকম খাদ্যদ্রব্য , চা , কফি , ডাবের জল ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে ।
অনেকটা বালির সৈকত পেরিয়ে আমরা সমুদ্রের ধারে এলাম । তাজপুর বীচ টা আগেও দেখেছি , আবার অনেক বছর পর এবারেও দেখলাম ভারী সুন্দর । শুধু রক্ষণাবেক্ষন আরো ভালো হলে বিশ্বমানের পর্যটক কেন্দ্র হতে পারতো ।
ফেরার পথে স্থানীয় বারোয়ারি পূজার মণ্ডপে দেবী দুর্গার দর্শন হলো ।
রাতের ডিনার হলো রুটি , বাটার দাল ফ্রাই , মাটার পনির , পাঁঠার মাংস আর গরম রসগোল্লা সহযোগে ।
পরের দিন নবমী পূজার দিন , হালকা লাঞ্চ সেরে দুপুর সাড়ে বারোটায় রওয়ানা হয়ে মাঝে একজায়গায় চা পানের বিরতি দিয়ে ঠিক সাড়ে চারটের মধ্যে ফিরে এলাম বাড়ীতে । ফিরে এলাম একরাশ সুখস্মৃতি নিয়ে । তবে এই সংক্ষিপ্ত সফরে এটা বুঝলাম যে পর্যটনের পরিকাঠামো যথেষ্ঠ উন্নত না হলে তাজপুর দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে অক্ষম । দীঘা তার জৌলুস অনেকদিন ই হারিয়েছে , কিন্তু তাজপুর , তার ঝাউবন, মিহি বালির সৈকত , ম্যানগ্রোভ অরণ্য , কিছুটা নিরিবিলি পরিবেশ নিয়ে কৌলিন্য বজায় রাখতে পারবে তখন ই যদি বালিসাই মোর ( যেখান থেকে রাস্তা মূল জাতীয় সড়ক থেকে তাজপুর বীচের দিকে গেছে ) থেকে রাস্তা টা সুন্দর পিচঢালাই হয় , মূল সমুদ্রসৈকত ও তার সংলগ্ন অঞ্চল অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় এবং রিসোর্টগুলি পরিষেবার নূন্যতম মান বজায় রাখে । আমরা যেখানে ছিলাম সেই রিসোর্টটির নাম মল্লিকা রিসোর্ট , ভারী ভালো লেগেছে এখানকার পরিবেশ সে কথা তো আগেই বলেছি । তবে মনে হয়েছে কটেজগুলির রক্ষনাবেক্ষন আরেকটু ভালো হলে আরো ভালো হতো । হেঁশেল নামক রেঁস্তোরায় বসার জায়গা আরো থাকার দরকার ছিল । এতো সুন্দর রিসোর্টে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণহীন ছোট্ট সাধারণ রেঁস্তোরা সত্যিই বেমানান । আশা রাখি কতৃপক্ষ আগামীতে নজর দেবেন । তবে আমরা বলব তাজপুরে এলে এই মল্লিকা রিসোর্টের নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে ।
কেন যাবেন ? কিভাবে যাবেন ? কোথায়ে থাকবেন ? কিভাবে বুক করবেন ?
Eto ekkhuni ure jete ichhe korche nirjon oi resort e. Bhari chamatkar barnona . Khabar’er bishod bibaron rasanalolup bangali ke akristo korbei. Antoto amake to akorshon korchei !
ধন্যবাদ দাদা