লেখা- তীর্থ দাশগুপ্ত

ছেলেবেলা থেকেই জঙ্গল আমাকে খুব টানত যদিও নানারকম গাছ , পাখী আলাদা করে তাদের নাম আমি বলতে পারবনা । আমার কাছে গাছ গাছই , পাখী সে তো পাখী ই , নামে কি আসে যায় । জঙ্গলের প্রকৃতির সামগ্রিক রূপটাই আমাকে আকর্ষণ করে । পাখীর নামের খুঁটিনাটি অথবা গাছেদের নামের বাহার বা বৈজ্ঞানিক নামের জটিলতার মধ্যে সবসময়ে ঢুকতে ইচ্ছা করেনা । নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ও একঘেয়েমির মধ্যে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গল ভ্রমণের ছোঁয়া আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছ , প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত হতে শিখিয়েছে ।

খুব যে একটা দেশ বিদেশের বিভিন্ন জঙ্গল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার আছে তা নয় তবে তারমধ্যে করবেট টাইগার রিজার্ভে ৫ রাত্তির বিভিন্ন বন-বাংলোয়ে থাকার অভিজ্ঞতা কোনোদিন ও ভোলার নয় ।

এই প্রসঙ্গে বলি বিখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ র আমি বড়ই ভক্ত । আমার প্রিয় লেখক । ওঁনার ঋজুদা পড়ে বড় হয়েছি । পরবর্তীকালে “কোয়েলের কাছে” , “জঙ্গলের জার্নাল ” , “লবঙ্গীর জঙ্গলে” , “সম” ইত্যাদি এবং ঋজু দা সিরিজের অসংখ্য লেখা পড়ে খুবই ইচ্ছা হয়েছে এবং এখনো প্রতিনিয়ত হয় ওইসব উপন্যাসে বর্ণিত জঙ্গলে, এবং বাংলো গুলিতে কয়েকদিন কাটিয়ে আসি ।

যদিও তার অনেকগুলিই এখনো আমাদের অদেখা কিন্তু ওনার লেখনীর জাদুস্পর্শে নিজের কল্পনায় ভর দিয়ে নিমেষেই যেন পাখীর মতন উড়ে যাওয়া যায় রূপকথার এক অন্য জগতে । বড় ভালো লাগে সেই মানস বিহার । তাই সরাসরি না গিয়েও আমি যেন উড়িষ্যার লবঙ্গীর বন-বাংলো র বারান্দায় বসে দেখতে পাই জ্যোৎস্না রাতের আলো ছায়ার নকশা কিংবা শুনতে পাই পালামৌ এর মারুমার বাংলোয়ে রাতচড়া পাখীর ডাক । নানা কারণে ওনার বিভিন্ন লেখায় বর্ণিত বন-বাংলোয়ে গিয়ে ওঠা হয়নি ।

তবে ইচ্ছা আছে খুব শিগগিরই যাবো । যাই হোক এবারে করবেট প্রসঙ্গে আসব । এরপর এক এক করে ধারাবাহিক ভাবে অরুণাচল প্রদেশের নামদাফা টাইগার রিজার্ভ , আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন টাইগার প্রজেক্ট , কর্ণাটকের নাগারহোল ন্যাশনাল পার্ক , কেরালার এরাভিকুলাম ন্যাশনাল পার্ক , গুজরাটের বিখ্যাত গির অরণ্য , মায় ডুয়ার্সের মূর্তি বনবাংলো থেকে শুরু করে বিদেশে কানাডার রকি মাউন্টেন অঞ্চলের লেক লুইস ন্যাশনাল পার্ক , জ্যাসপার ন্যাশনাল পার্ক , ব্যান্ফ ন্যাশনাল পার্ক , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ভলক্যানো ন্যাশনাল পার্ক থেকে শুরু করে আফ্রিকার সেশেলস দ্বীপুঞ্জের প্রালে ন্যাশনাল পার্ক কিংবা জায়ান্ট টরটোয়েসের জন্যে বিখ্যাত কিউরিয়াস ন্যাশনাল পার্ক , শ্রীলংকার য়ালা ন্যাশনাল পার্ক কিংবা সুমেরু অঞ্চলে সুইডেনের সামি অধিবাসী অধ্যুষিত সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্যের মাঝে একে ক্যাম্পে থাকার বর্ণনা , আবার নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিনে গিয়ে ওখানকার ওটাগো পেনিনসুলা অঞ্চলে জলভ্রমন করে সী লায়ন কিংবা আলবাট্রস পাখীর সন্ধান করেছিলাম , আবার স্থলভাগে হলুদ চোখের পেঙ্গুইন কেমন করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে তার বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করব ।আবার দক্ষিণ নিউজিল্যান্ডে মিলফোর্ড সাউন্ড ক্রুইসে নানা স্থলজ কিংবা জলজ জীবজন্তুর এবং সেখানকার নানাবিধ গাছপালা ও ভূপ্রকৃতির দর্শণ হয়েছিল সেই বর্ণনাও থাকবে ।

এই লেখায় কতদূর সফল হয়েছি তা আপনারাই , পাঠকরাই বলবেন । তবে এটা উপলদ্ধি করেছি যে উত্তরআমেরিকা কিংবা কানাডা র জঙ্গল গুলি র সাথে আমাদের দেশের বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানগুলির অনেকটাই তফাৎ আছে । পশ্চিমে জঙ্গলগুলির গাছপালা ও জীবজন্তু সব মিলিয়ে আমাদের দেশের অভয়ারণ্যর তুলনায় ভয়াবহতা বা আদিমতা বেশ কম মনে হয় । যে বিরাট গা ছমছমে পরিবেশ এদেশের অভয়ারণ্য গুলিতে পাওয়া যায় যাকে বলে ভয়াল সৌন্দর্য তা যেন ওদেশে বড়ই অমিল । পশ্চিমের অভয়ারণ্যগুলো যেন বড্ডই সাজানো গোছানো । যাইহোক ফিরে আসি করবেটের কথায় ।